এখনও ভাসাচ্ছে ভরা কোটাল

গত দু’দিন ভিলেন ছিল নাছোড় বৃষ্টি। রবিবার বৃষ্টি রেহাই দিলেও বানভাসি শহরের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে গঙ্গার ভরা কোটাল। আদিগঙ্গা সংলগ্ন এলাকাগুলি তাতে এমনিই ভাসে, সঙ্গে বৃষ্টি জুটে এখন থইথই অবস্থা। যার মধ্যে রয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পাড়াও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১২
Share:

কোমর-জল ঠেলে। কালীঘাট এলাকায়। ছবি: সুদীপ আচার্য।

গত দু’দিন ভিলেন ছিল নাছোড় বৃষ্টি। রবিবার বৃষ্টি রেহাই দিলেও বানভাসি শহরের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে গঙ্গার ভরা কোটাল। আদিগঙ্গা সংলগ্ন এলাকাগুলি তাতে এমনিই ভাসে, সঙ্গে বৃষ্টি জুটে এখন থইথই অবস্থা। যার মধ্যে রয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পাড়াও। বৃষ্টির পূর্বাভাস না থাকলেও আজ, সোমবারও ভরা কোটালের সম্ভাবনা রয়েছে গঙ্গায়। রবিবারের রাতটা তাই জেগেই কাটিয়েছেন গঙ্গা ও টালিনালা সংলগ্ন এলাকার মানুষ। একই হাল ছিল দমদম, বাগুইআটি, সল্টলেক এবং হাওড়াতেও। রাজারহাটে এর উপরে ভোগান্তি বাড়িয়েছে বাঁধ ভেঙে ঢোকা জল। সেই সঙ্গে টইটম্বুর খাল উপচানো জলে ভেসে যাওয়া এলাকা আঙুল তুলেছে সংস্কার না হওয়ার দিকেও।

Advertisement

আলিপুর বডিগার্ড লাইন্স

Advertisement

বৃষ্টি এবং ভরা কোটালে চিড়িয়াখানার পিছনে কলকাতা পুলিশের কর্মীদের এই আবাসন এলাকা বরাবরের মতোই ভেনিস-এর চেহারায়। যাতায়াতে ভরসা রবারের নৌকা। শুক্রবার রাত থেকেই বাসিন্দারা অনেকে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা জলবন্দি। ফি বর্ষায় এই ভোগান্তির অবসান ঘটানোর উপায় দেখছেন না খোদ লালবাজারের কর্তারাও।

ভবানীপুর

জলবন্দি অবস্থা নতুন কিছু নয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়া বা কালীঘাট এলাকায়। বৃষ্টি-কোটালের এই যুগলবন্দিতে রবিবার দুপুরে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের একাংশ জলের তলায়। এমনকী, হরিশ মুখার্জি রোড থেকে যে সব রাস্তা ধরে ওই রাস্তায় ঢোকা যায়, সেই টার্ফ রোড, বিজয় বসু রোড, কার্তুজ রোডে থইথই করছে জল। বিজয় বসু রোডে জল ঢুকেছে আবাসনের একতলাতেও। হাজরা রোড পেরিয়ে কালীঘাট গেট দিয়ে মন্দিরের দিকে এগোতেই হাঁটুজল। পশ্চিম দিকের গেটের কাছে দোকানপাট খোলেনি। কলকাতা পুরসভার দাবি, এ বার ভরা কোটালই আসল ভিলেন।

এখনও এ ভাবেই যাতায়াত ভিআইপি রোডে, হলদিরামের সামনে।
ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলি

ঝিল উপচানো জলে দু’দিন ধরে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলির ঝিল ঘেঁষা আবাসনগুলির বাসিন্দারা। এ দিন সূর্যের দেখা মিললেও সামনের রাস্তায় রয়ে গিয়েছে হাঁটুজল। মোটা নাইলনের দড়ি লাগানো পাটুলি কানেক্টর থেকে ওই রাস্তায় ঢোকা আটকাতে। পাম্প চলছে ২৪ ঘণ্টা। ঝিলের জল তুলে ফেলা হচ্ছে বাইপাসে। তবু সমস্যা মিটছে না।

মুকুন্দপুর

খন্দে ভরা রাস্তা দিয়ে হোঁচট খেতে খেতে এগোতেই রাস্তা আটকালেন এক দল যুবক। নয়াবাদের দিকে এতটাই জল যে, গাড়ি আটকে যেতে পারে। প্রশাসনের তরফে কেউ নেই। তাই তাঁরাই চালকদের সতর্ক করছেন। সকালেও মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল চত্বরে জল ছিল। দুপুরের পরে নেমেছে। তবু হাসপাতালের সামনের রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স হেলে পড়ার দশা।

সল্টলেক

জল নেমেছে মূল সল্টলেক ও পাঁচ নম্বর সেক্টরে। কিন্তু দত্তাবাদ ও সংযুক্ত এলাকার কিছু অংশে এখনও জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১ নম্বর ওয়ার্ডে বাঁধ ভেঙে কিছু এলাকা প্লাবিত। সেখানেও সকাল থেকে পাম্প চালিয়ে জল সরানোর কাজ চলছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, খাল, পুকুরগুলি জলে টইটম্বুর। ফলে এখনও কিছু জায়গায় জল নামতে দেরি হচ্ছে।

রাজারহাট

শনিবারের বৃষ্টিতে রাজারহাটের চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিদ্যাধরী নদী ও হাড়োয়া খাল সংলগ্ন বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল মাছিবাঙা, বকডোবা, নাওডোবা ও কানাপুকুর এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং পঞ্চায়েতের তরফে বালির বস্তা দিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা হয়। সেচ দফতর সূত্রে খবর, বাঁধ মেরামতি শুরু হয়েছে। এ দিন এলাকা ঘুরে দেখেন সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার।

ভিআইপি-বাগুইআটি

হলদিরাম-চিনার পার্কে গোড়ালির উপরেই জল। সাহাপাড়া, প্রতিবেশী পাড়া, ধানমাঠ-সহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুজল। বিধাননগর পুর-নিগম জানায়, ৩০টি পাম্প চলছে। তবে ভরা কোটালের জল নামেনি। জগৎপুর, আদর্শপল্লি, গৌরাঙ্গনগর-সহ বহু এলাকা জলমগ্ন। যান বলতে বেশি ভাড়ার রিকশা। অ্যাম্বুল্যান্স-সহ কোনও গাড়িই ঢুকছে না। এ দিন এলাকায় যান বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও লকেট চট্টোপাধ্যায়। শাস্ত্রীবাগান, বাহাদুরবাগান এলাকায় যান ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কংগ্রেসের কাবু বাগুই।

দমদম ও দক্ষিণ দমদম

মধুগড়, মাঠকল, বেদিয়াপাড়া, মতিঝিল-সহ বিভিন্ন এলাকা এ দিনও জলের তলায়। দুই পুরসভারই যুক্তি, এই হাল ভরা কোটাল আর অতিবৃষ্টিতেই। বাসিন্দাদের দাবি, এত দিনেও বাগজোলা খালের নাব্যতা বাড়ানো, সংস্কার হয়নি।

হাওড়া

উত্তর, মধ্য হাওড়া ও সংযুক্ত এলাকায় ১০টি ওয়ার্ডে রবিবারও কোথাও হাঁটুজল, কোথাও কোমরসমান। সেই জল ভেঙেই যাতায়াত। হাওড়া পুর নিগমের মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র (নিকাশি) বলেন, ‘‘কোটাল চলায় পাম্প চালিয়েও লাভ হচ্ছে না। জল সরানোর জায়গা নেই।’’ এ দিন বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন মেয়র রথীন চক্রবর্তী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন