সল্টলেকেও সিন্ডিকেট, তা-ও ১০ লক্ষের কাজে

এত দিন যা নিয়ে অভিযোগ ছিল বাগুইআটি-রাজারহাট-নিউ টাউনে, সেই সিন্ডিকেট বাহিনী এ বার থাবা বসাল সল্টলেকেও। একেবারে সল্টলেকের কেন্দ্রস্থল, করুণাময়ীতে একটি অফিস-বাড়ির সংস্কারের সময়ে টাকা চেয়ে, হুমকি দিয়ে সেই কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০০:১৫
Share:

নির্মীয়মাণ সেই অফিস। —নিজস্ব চিত্র।

এত দিন যা নিয়ে অভিযোগ ছিল বাগুইআটি-রাজারহাট-নিউ টাউনে, সেই সিন্ডিকেট বাহিনী এ বার থাবা বসাল সল্টলেকেও।

Advertisement

একেবারে সল্টলেকের কেন্দ্রস্থল, করুণাময়ীতে একটি অফিস-বাড়ির সংস্কারের সময়ে টাকা চেয়ে, হুমকি দিয়ে সেই কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গত কয়েক দশক ধরে মধ্যবিত্তেরা একটু একটু করে আবাস বানিয়েছেন এখানে। জোর করে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ করা, জোর করে টাকা তোলার অভিযোগ কখনওই ওঠেনি। এ বার সেই অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রোমোটার দেবলীন ধর। অফিসপাড়াতেই যদি এমন হয়, তবে আবাসিক এলাকায় কী হবে, ভেবে আতঙ্কিত আবাসিকেরা।

Advertisement

আতঙ্কের আরও বড় কারণ, দেবলীনবাবু আদতে একটি অফিস-বাড়ি সংস্কারের কাজে নেমেছিলেন। সেখানে বড়জোর ১০-১২ লক্ষ টাকার কাজ। এত দিন শোনা গিয়েছে, ৫০ লক্ষ-১ কোটি টাকার নির্মাণের ক্ষেত্রেই থাবা বসায় সিন্ডিকেট বাহিনী। এ বার দেখা গেল মাত্র ১০-১২ লক্ষ টাকার ক্ষেত্রেও সিন্ডিকেট হাত বাড়াচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি এ বার সংস্কারের সময়ে সল্টলেকের আবাসিকের দরজাতেও এসে কড়া নাড়বে সিন্ডিকেট বাহিনী?

সিন্ডিকেট বাহিনীর এই সীমাহীন সাহসের পিছনে রাজনৈতিক নেতাদের মদতের কথা বারবার উঠে এসেছে। অভিযোগ, পরিবর্তনের জমানায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ডিকেট-রাজ খতম করার কথা বললেও তাঁরই দলের একাংশের মদতে উত্তরোত্তর তা বেড়েই চলেছে। অভিযোগ উঠেছে, সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। সেই খাতে টাকার খুবই প্রয়োজন। তাই, এখন আর ‘বাছ-বিচারের’ সময় নেই। মাত্র ১০-১২ লক্ষ টাকার সংস্কারের কাজ থেকেও ‘যতটা আদায় করা যায়, ততটাই লাভ’ গোছের প্রবণতাও দেখা দিচ্ছে বলে মত বাসিন্দাদের। আর এতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে আবাসিকদের মধ্যে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘‘আমার বাড়ি সারাই বা সংস্কার করলেও কি এ বার থেকে তোলা দিতে হবে?’’

মঙ্গলবার করুণাময়ী মোড়ের কাছে একটি অফিস-বাড়ি সংস্কারের বরাত পেয়েছিলেন দেবলীনবাবু। অভিযোগ, একদল যুবক ওই নির্মাণস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। যুবকদের দাবি, তাঁদের কাছ থেকেই বালি-পাথর কিনতে হবে ঠিকাদারকে। বলাই বাহুল্য, সেই বালি-পাথরের দাম বাজারের দামের চেয়ে অনেকটাই বেশি। এখানেই থেমে থাকেননি তাঁরা। দাবি করেছেন, ইতিমধ্যে যেটুকু বালি-পাথর সেই সংস্কারের কাজে লাগানো হয়েছে, সে বাবদ ৩০ হাজার টাকা ‘তোলা’-ও দিতে হবে তাঁদের। প্রোমোটার দেবলীন ধর বিধাননগর পূর্ব থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কাউকে তো মুখ খুলতে হবে। বিপদ জেনেও অভিযোগ জানিয়েছি।’’

পুলিশ তদন্তে নেমে কয়েক জনকে আটক করলেও এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অধরা। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর নাম সিন্ধু কুণ্ডু। তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই যুবকের বাড়ি দত্তাবাদে। বাম জমানাতেই তিনি ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের ব্যবসায় নেমেছিলেন। রাজনৈতিক পালা বদলের পরে শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক সুজিত বসুর অনুগামী বলেই পরিচিত। সুজিতবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘এমন ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। আইন আইনের পথে চলবে।’’

এর আগেও সল্টলেকের বিভিন্ন থানা এলাকায় সিন্ধুর নামে একাধিক অভিযোগ ছিল। পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু ছাড়া পেতে বেশি সময় লাগেনি। অভিযোগ, মাথায় নেতার হাত থাকায় ক্রমশই বেড়ে চলেছেন তিনি। সম্পত্তি বেড়েছে লাফিয়ে। এত দিন রাজারহাট-নিউ টাউনে তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। এ বার ‘দাদা’-র প্রশ্রয়ে ঢুকে পড়েছেন সল্টলেকে।

সল্টলেকে বাসিন্দাদের সংগঠনের নেতা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘যদি এই ঘটনা সত্য হয়, তবে আতঙ্কের বাস্তবিক কারণ রয়েছে।’’ সল্টলেকের সিপিএম নেতা নন্দগোপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। এক জন বাসিন্দা হিসেবে স্বভাবতই আতঙ্কিত।’’ বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা আমাদের দলের কেউ নন। নিজেদের পাপ মুছতে দলের মোড়ক ব্যবহার করছেন।’’

মঙ্গলবার সিন্ধু অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, হুমকি বা ভয় দেখানো হয়নি। কাজের জন্যই সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। বুধবার অবশ্য দিনভর তাঁর মোবাইলগুলি বেজে যায়, এক বারও উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন