সাধারণ মানুষ হোক বা পুলিশ, সিটবেল্ট বাঁধার অভ্যাসই নেই শহরে
গত রবিবার ভোরে বাইপাসে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল সায়ন্তন বিশ্বাস নামে এক ছাত্রের। অনেকের মতে, পিছনে বসা সায়ন্তনের বেল্ট বাঁধা থাকলে মাথায় এমন মারণ আঘাত পেতেন না তিনি। সায়ন্তনকে হাসপাতালে দেখতে আসা তাঁর শিক্ষক ও বন্ধুদের কথাতেও ঘুরেফিরে এসেছিল সেই প্রসঙ্গ। এর পরেই পিছনের আসনে বেল্ট বাঁধার বিষয়টি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অথচ গাড়ির পিছনের আসন তো কোন ছাড়, নতুন অ্যাপ ক্যাবের চালকেরাও বেল্ট বাঁধেন না বলে অভিযোগ ওঠে। এক যাত্রী বলছেন, বহু ক্ষেত্রেই চালক বেল্ট আলগা করে ওড়নার মতো গায়ে ফেলে রাখেন। দূর থেকে দেখে পুলিশ মনে করে, বেল্ট বাঁধা। হলুদ ট্যাক্সি বা পুরনো গাড়ির পিছনের আসনে তো কোনও বেল্টই থাকে না। নতুন গাড়িতে সেই ব্যবস্থা থাকলেও অনেকেই তা জানেন না। এক যাত্রীর দাবি, ওলা ও উব্রে পিছনের আসনের ঢাকা বেল্টটা টেনে বার করা যায় না। এ প্রসঙ্গে দুই সংস্থার চালকদের দাবি, পিছনে বসে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেন, বেল্টের বাক্ল পিঠে লাগছে। তাই ওটা ঢাকা রাখা হয়।
সদ্য মুম্বই ঘুরে আসা এক বাঙালি তরুণীর দাবি, ওই শহরের ক্যাবের পিছনে তাঁরা দুই বন্ধু বসতেই চালক বলেছিলেন, সিটবেল্ট বাঁধতে। বিদেশেও গাড়ির পিছনের আসনে বসা যাত্রীকে বেল্ট বাঁধতে বাধ্য করেন চালকই। কারণ তা নয়ত তাঁকে মোটা টাকা মাসুল গুণতে হবে।
এমন নিয়ম কি এ শহরে কার্যকর করা সম্ভব? পুলিশের একাংশের মতে, বিদেশের উন্নত শহরে অসংখ্য উড়ালপুল রয়েছে। গাড়ির গতিও বেশি। তাই পিছনের আসনে বেল্ট লাগানো জরুরি। ইদানীং কলকাতাতেও উড়ালপুল বাড়ছে। গাড়ির গতিও বেড়েছে। ফলে সিটবেল্ট বাঁধাও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্যামেরা দেখেই তড়িঘড়ি সিটবেল্ট বাঁধার চেষ্টা। মঙ্গলবার, ধর্মতলায়।
এ প্রসঙ্গে উঠে আসে ষাটের দশকের এক দুর্ঘটনার কথা। ছোট জাগুলিয়ার বাগান বাড়ি থেকে শহরে ফিরছিলেন এক বৃদ্ধ। তিনিই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। যশোর রোডে সেই গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লেও গাড়ি বা আরোহীর কোনও ক্ষতি হয়নি। কিন্তু চালকের আসনে থাকা বৃদ্ধের বুকে স্টিয়ারিংয়ের ধাক্কা লাগে। মারা যান তিনি। সেই বৃদ্ধের নাম, অভিনেতা ছবি বিশ্বাস। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, প্রায় পঞ্চান্ন বছর পরেও এমন ছবি দেখা যায় অহরহ। পুলিশের একাংশের মতে, এখন কড়াকড়িতে বেল্ট বাঁধা চালকের সংখ্যা বেড়েছে। যদিও এক ট্র্যাফিক সার্জেন্টের দাবি, ‘‘সামনে বসেও অনেক যাত্রীই বেল্ট বাঁধেন না এখনও। সেই তালিকায় ভিআইপি-রাও থাকেন। বেল্ট না বাঁধার জন্য আমজনতাকে জরিমানা করলে নেমে চিৎকার করেন অনেকেই।’’ নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে যাত্রীরা কত সচেতন সে ক্ষেত্রে এই প্রশ্নও উঠছে।
পিছনের আসনে বেল্ট বাঁধা বাধ্যতামূলক করা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়, বলছেন এক পুলিশ কর্তা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ক্যাবের পিছনে তিন জন বসেন। নিজের গাড়ি বা রাতের শাট্লে পিছনে চার জনও বসেন। তা হলে বেল্ট বাঁধবেন কী করে? পুলিশ আধিকারিকদের মতে, অ্যাপ নির্ভর ক্যাব সংস্থা এবং পরিবহণ দফতরের ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে উব্র কোনও বক্তব্য জানায়নি। ওলা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাঁরা সামনের আসনে বেল্ট বাঁধার কড়া নির্দেশ দেন।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই যাত্রী এবং পথচারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছে। এক পরিবহণ কর্তা বলেন, ‘‘পিছনের আসনে বেল্ট বাঁধা নিয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন মহল থেকে প্রস্তাব এলে ভাবা হবে। তবে পিছনের যাত্রীসংখ্যা দুইয়ে না বাধলে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা অসম্ভব। তা ছাড়া সব গাড়িতে সেই ব্যবস্থাও নেই। সে জন্য গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলির সঙ্গেও আলোচনা জরুরি। এটি কার্যকর করা সময় সাপেক্ষ।”
ছবি: সুদীপ ঘোষ ও স্বাতী চক্রবর্তী