শম্ভুনাথ পণ্ডিত

আবার হাসপাতালে আগুন, এড়ানো গেল বড় দুর্ঘটনা

আবার আগুন। আবারও ঘটনাস্থল একটি হাসপাতাল। গত শনিবারই বহরমপুরের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসি-তে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল চিকিৎসকদের বিশ্রাম নেওয়ার ঘরে। ঘর বন্ধ ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৯
Share:

আগুনের পরে রিডিং রুম। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

আবার আগুন। আবারও ঘটনাস্থল একটি হাসপাতাল।

Advertisement

গত শনিবারই বহরমপুরের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসি-তে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল চিকিৎসকদের বিশ্রাম নেওয়ার ঘরে। ঘর বন্ধ ছিল। সেখান থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে দেখে এবং আগুন অন্যত্র ছড়িয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় সবাই একসঙ্গে পালাতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান হাসপাতালেরই এক আয়া এবং এক রোগীর আত্মীয়া। এমনকী, হাসপাতালে ভর্তি এক শিশুর মৃত্যুর খবরও পাওয়া গিয়েছিল। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, শিশুটি আগেই মারা গিয়েছিল। ওই ঘটনায় আহত হন ১৮ জন।

সোমবার সকালে তাই কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে আগুন লাগার খবর পেয়ে কালবিলম্ব করেনি পুলিশ ও দমকল। হাসপাতালের বহির্বিভাগের দোতলায়, লাইব্রেরি লাগোয়া রিডিং রুমের ফল্‌স সিলিং থেকে ধোঁয়া বেরোনোর খবর পেয়ে মূহূর্তের মধ্যে দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন পৌঁছে যায়। তার আগে অবশ্য হাসপাতালের কর্মীরাই নিজস্ব অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা দিয়ে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনেন। বাকি কাজ নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকলকর্মীদের বিশেষ বেগ পেতে হয়নি।

Advertisement

এর আগে আমরি হাসপাতালে আগুনের ভয়াবহ রূপ দেখেছেন শহরবাসী। ফলে, এখন কোনও হাসপাতালে সামান্য ধোঁয়া দেখতে পেলেই দাবানলের মতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। বহরমপুর হাসপাতালের ঘটনার পরে সরেজমিন দেখা গিয়েছে, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে বড় আগুন লাগলে তা মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামোর অভাব। কোথাও অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র পুরনো। কোথাও রোগীদের বার করে নেওয়ার জন্য র‌্যাম্প নেই। আশঙ্কা, পরিকাঠামো না বদলালে যে কোনও দিন বড় বিপদ হতে পারে।

এ দিন সকাল ১১টা ৪০ নাগাদ যখন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে আগুন লাগে, তখনও বড় বিপদ ঘটতে পারত। কিন্তু, হাসপাতালের অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রগুলি ঠিক অবস্থায় ছিল। তার চেয়েও বড় কথা, ধোঁয়া দেখে তৎপর হয়ে ওঠেন হাসপাতালের কর্মীরাই। বহির্বিভাগে তখন বহু রোগী ভিড় করে ছিলেন। সেই বহির্বিভাগের দোতলার ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে কর্মীরাই রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যান।

দমকল সূত্রে খবর, এই হাসপাতালের দোতলায় লাইব্রেরির পাশে একটি সেমিনার রুম আছে। সেটিকেই লাইব্রেরির রিডিং রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ঘরটিতে ফল্স সিলিং রয়েছে। সেখানেই আগুন লাগে। প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, ওই ঘরের স্‌প্লিট এসি থেকে শর্ট সার্কিট হয়েই বিপত্তি।

বহির্বিভাগের রোগীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধ করে দেন কর্মীরা। এর পরে নিজস্ব অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র দিয়ে তাঁরাই আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। দমকল গিয়ে বাকি কাজটা সেরে ফেলে।

হাসপাতালের সুপার সৌমাভ দত্ত বলেন, ‘‘সময় মতো ব্যবস্থা নেওয়ায় আগুন বেশি ছড়াতে পারেনি। সামান্য কিছু আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে।’’ দক্ষিণ কলকাতার দমকলের আধিকারিক তরুণ সিংহ বলেন, ‘‘দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় কেউ হতাহত হননি।’’

অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে পঞ্চসায়রের শহিদ স্মৃতি কলোনি থেকে হাসপাতালে এসেছিলেন সুমনা বসু। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎই আগুন, আগুন চিৎকার শুনে দেখি সবাই দৌড়োচ্ছে। হাসপাতালের লোকেরাই আমাদের বার করে দেন।’’ সুমনাদেবী জানান, এ ভাবে আচমকা আগুন লাগায় কয়েক জন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা আতঙ্কিত হয়ে প়়ড়েন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশি সময় লাগেনি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের একটি ভবনে আগুন লাগল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ ওই ভবনের এক তলার সিঁড়ির পাশ থেকে ধোঁয়া বেরোতে
দেখেন পড়ুয়ারা। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন গেলেও দমকল পৌঁছনোর আগেই আগুন নিভে যায় বলে দমকল সূত্রে খবর। দমকলের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ওই ভবনের সিঁড়ির নীচে একটি জেরক্সের দোকান রয়েছে। তার পাশেই বেশ কিছু পুরনো
কাগজপত্র জমানো ছিল। সেখান থেকেই আগুন বেরোতে দেখা
যায়। তবে সেখানে কী করে আগুন লাগল, তা জানা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘দমকল আসার আগে আমরাই আগুন নিভিয়ে ফেলতে পেরেছি। তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement