আতঙ্কিত স্কুলের অন্য পড়ুয়ারাও

শহরের শিক্ষক মহলের একাংশ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের আচরণ নিয়েও। তাঁদের বক্তব্য, যে রকম আক্রমণাত্মক ও মারমুখী ভঙ্গিতে বাবা-মায়েরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাতেও শিশু মনে প্রভাব পড়তে পারে।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১৬
Share:

ক্ষুব্ধ: অভিভাবকদের বিক্ষোভ। শুক্রবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

টেলিভিশনের পর্দায় বারবার ফুটে উঠছে তাদের স্কুলের চেনা ছবি। সকলের মুখ থেকে ভেসে আসছে স্কুলের নাম। ভেসে উঠছে পরিচিত ‘ম্যাডামদের’ মুখ। আর মাঝেমধ্যেই প্রচণ্ড চিৎকার। পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরেছে খুদেরাও। তাই মায়ের কোলই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়ে বারবার আঁকড়ে ধরেছে কলকাতার জি় ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনের খুদে পড়ুয়ারা। শুক্রবার রাতে হঠাৎই সন্তানদের এই বদল দেখে চিন্তিত অভিভাবকদের একাংশ। শনিবার স্কুলের সামনে তাঁরা বলেন, ‘‘শুধু ওই চার বছরের মেয়েটিকে নয়, মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে সমস্ত পড়ুয়াদের। আমরা বিপর্যস্ত।’’

Advertisement

শহরের শিক্ষক মহলের একাংশ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের আচরণ নিয়েও। তাঁদের বক্তব্য, যে রকম আক্রমণাত্মক ও মারমুখী ভঙ্গিতে বাবা-মায়েরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাতেও শিশু মনে প্রভাব পড়তে পারে। তাঁদের মতে, প্রতিবাদে সামিল হওয়াটা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু ভাষায় ও ভঙ্গিতে যেন নিয়ন্ত্রণ থাকে।

ওই স্কুলে চার বছরের একটি মেয়েকে যৌন হেনস্থা করার খবর প্রকাশ্যে আসতেই শুক্রবার থেকে দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। টেলিভিশন থেকে চায়ের দোকান, বাড়ির খাবারের টেবিল থেকে বসার ঘর— সর্বত্রই এই আলোচনা তাড়া করে বেড়িয়েছে। সকলের অজান্তে সেই আতঙ্কের পরিবেশের মধ্যে পড়ে গিয়েছে ওই স্কুলের শিশুরাও। অভিভাবকদের ধারণা, পড়ুয়ারা চোখের সামনে স্কুলকে অনবরত দেখছে, শুনছে হুঙ্কার ও চিৎকার। সব আলোচনাও কানে যাচ্ছে তাদের। আর তাতেই প্রভাব পড়েছে শিশুমনে।

Advertisement

শনিবার বাঁশদ্রোণীর এক বাসিন্দা জানান, তাঁর মেয়ে ওই স্কুলের প্রাক-প্রাথমিক স্তরের ছাত্রী। সারা দিন ধরে ঘটনাটি দেখার পরে সন্ধ্যা থেকেই শিশুটির চরিত্রে কিছু বদল আসতে শুরু করে। ওই মহিলা বলেন, ‘‘সন্ধ্যার পর থেকেই সব সময়ে আমার কোল ঘেঁষে জড়িয়ে ধরে বসে ছিল। বারবার জানতে চাইছিল, টিভিতে স্কুলকে কেন দেখাচ্ছে? কী হয়েছে ওই মেয়েটার? এ সব প্রশ্নের কী উত্তর দেব বুঝতে পারছিলাম না। একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছিল।’’ তার পরে মেয়েকে ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ’ বোঝানোর চেষ্টা করেন বলে জানান তিনি। ওই মহিলার কথায়, ‘‘মেয়েকে বলি কেউ চকলেট দেখিয়ে ডাকলে যাবে না। খারাপ ভাবে গায়ে হাত দেওয়ার বিষয়ে বোঝানো শুরু করতেই ওই মেয়েটিকে কেউ চকলেট দিয়েছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করল।’’ এর পরে ঘুমিয়ে পড়লেও বারবার আঁতকে উঠছিল তাঁর মেয়ে।

অন্য এক অভিভাবক জানান, তাঁর মেয়ে ওই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের এই অবস্থা দেখে তার জিজ্ঞাসা, স্কুলে অত লোকের ভিড় কেন? ওই মহিলা বলেন, ‘‘আমাকে মেয়ে জিজ্ঞাসা করছে বাচ্চাটির রক্ত বেরিয়েছে কেন? পড়ে গিয়েছিল? মেয়ের এই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল।’’ অন্য এক অভিভাবক জানান, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কর্মরত। ফলে স্কুলই তাঁদের সন্তানের জন্য সব থেকে নিরাপদ বলে মনে করেছিলেন। ‘‘যেখানে আমরা আর কোনও ভরসাই করতে পারছি না, সেখানে কী ভাবে মেয়েকে পাঠাব বুঝতে পারছি না’’— বলেন তিনি।

মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জানি না অভিভাবকেরা কতটা জোর গলায় বলতে পারবেন, তবুও সন্তানদের বোঝাতে হবে স্কুলে তারা নিরাপদ।’’ শিশুদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে এই পথই বেছে নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর মত, শিশুদের সামনে কোনও ভাবেই যেন এ ধরনের আলোচনা না করা হয়। স্কুলের এ ধরনের ছবি ও ভিডিও থেকে শিশুদের দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন