পরপর নির্মাণে বাড়ছে বায়ুদূষণ, ভাবনা বৈঠকে

শহরের বিভিন্ন নির্মাণস্থল থেকে বায়ুদূষণ বাড়ছে, তা বহু দিন ধরেই বলে আসছিলেন পরিবেশকর্মীরা। এ বার একই কথা শোনা গেল রাজ্যের নগরোন্নয়ন সচিব দেবাশিস সেনের মুখেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৫
Share:

শহরের বিভিন্ন নির্মাণস্থল থেকে বায়ুদূষণ বাড়ছে, তা বহু দিন ধরেই বলে আসছিলেন পরিবেশকর্মীরা। এ বার একই কথা শোনা গেল রাজ্যের নগরোন্নয়ন সচিব দেবাশিস সেনের মুখেও। শনিবার মার্কিন কনস্যুলেট আয়োজিত কলকাতায় বায়ুদূষণ সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে দেবাশিসবাবু বলেন, কলকাতা, বিশেষত রাজারহাট-নিউ টাউনে নির্মাণস্থল থেকে বাতাসে ধূলিকণা মিশে দূষণ বাড়াচ্ছে। এটি বিপজ্জনক। কী ভাবে এই দূষণ ঠেকানো যায়, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শও চেয়েছেন তিনি।

Advertisement

নগরোন্নয়ন সচিবের মন্তব্য নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীদের অনেকেই। তাঁরা বলছেন, নির্মাণস্থল বা কংক্রিট থেকে দূষণ ঠেকানোর উপায় রয়েছে। রয়েছে নির্দিষ্ট নীতিও। কিন্তু মহানগরের নির্মাণস্থলের বেশির ভাগই সেই সব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না বলে অভিযোগ। এ দিন অনুষ্ঠানে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত নগরোন্নয়ন সচিবকে বলেন, ‘‘আপনি এ সব বললেও এখানে নগরায়ণ অপরিকল্পিত ভাবে হচ্ছে। তাতেই দূষণ বাড়ছে।’’ দেবাশিসবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, নিউ টাউনকে স্মার্ট সিটি ঘোষণা করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। রাজারহাটে দূষণমাপার কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। সে ব্যাপারে জমিও চিহ্নিত করা হয়েছে।

বায়ুদূষণ কমাতে বাম জমানা কিংবা বর্তমান সরকারের তরফে বারবার নানা প্রকল্পের কথা বলা হলেও বাস্তবে কলকাতার দূষণ চিত্রটা বদলায় না। বছর কয়েক আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় দেশের মহানগরীগুলির মধ্যে দূষণে দ্বিতীয় হয়েছিল এই শহর। তার ফলে এ শহরের নাগরিকদের শ্বাসনালি ও ফুসফুসের নানা দুরারোগ্য ব্যাধি বাড়বে বলেও সতর্ক করেছিলেন চিকিৎসকেরা। এ দিনের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক স্বাতী প্রামাণিক বলেন, দূষণ বাড়তে থাকায় শ্বাসনালি, হাঁপানির প্রকোপ বাড়ছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে কলকাতার বায়ুদূষণ কতটা এবং তা কী ভাবে কমানো যেতে পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে মার্কিন কনস্যুলেট। এ দিন কনসাল জেনারেল ক্রেগ সি হল বলেন, ‘‘দূষণ কমানো এবং জলবায়ু বদল ঠেকাতে ভারত এবং আমেরিকা যৌথ ভাবে কাজ করবে বলে ঠিক হয়েছে। তারই অঙ্গ হিসেবে কলকাতার দূষণ কমানোর কাজ বেছে নিয়েছি আমরা।’’ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মধ্যে পরিবেশবান্ধব শক্তির প্রসার নিয়েও যে আলোচনা হয়েছে, তার উল্লেখ করে কনসাল জেনারেল জানান, ২০২২ সালের মধ্যে এ দেশে ১৭৫ গিগাওয়াট পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদন করবেন তাঁরা।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতার দূষণ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে দ্রুত রাশ টানা যাবে কী ভাবে? সম্প্রতি দূষণ ঠেকাতে গাড়ির পরিবেশ ছাড়পত্র বা পিইউসি শংসাপত্রের উপরে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পিইউসি না থাকলে গাড়ির জ্বালানি দেওয়া হবে না, এই নীতি চালু করার দাবিও উঠেছে। যদিও অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্য পরিবেশ দফতরের বিজ্ঞানী দীপাঞ্জনা মৌলিকের প্রশ্ন, এখানে পিইউসি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত কেন্দ্র রয়েছে কি? দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের অবশ্য খবর, সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালতেও এই বিষয়টি উঠেছিল। পিইউসি কেন্দ্র বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন