বিমানবন্দরের ভোট, ‘দাপাল’ বহিরাগতেরা!

ওই ক’টা মাত্র ভোটের জন্য মোতায়েন করতে হল বিশাল পুলিশবাহিনী। প্রচুর এমন মুখ দেখা গেল যাঁদের সঙ্গে ‘বহু দূর পর্যন্ত’ বিমানবন্দরের কোনও যোগাযোগই নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৫
Share:

চলছে লাগাতার হুমকি। তাই পুলিশি প্রহরায় ভোট দিতে যাচ্ছেন বিমানবন্দরের কর্মীরা। বুধবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

ভোট তো নয়, যেন যুদ্ধ।

Advertisement

সব মিলিয়ে মেরেকেটে ১১০০ ভোটার। প্রত্যেকেই কলকাতা বিমানবন্দরে কাজ করেন। প্রায় প্রতি দিনই দেখা হয় তাঁদের। যে কোনও সমস্যায় একে অপরের পাশে এসে দাঁড়ান সহকর্মীসুলভ আচরণের মাধ্যমেই। একে অপরের বাড়ির সামাজিক অনুষ্ঠানেও যান। কিন্তু, বুধবার সামান্য এক ইউনিয়ন-নির্বাচন ঘিরে উধাও সেই সৌজন্য।

ওই ক’টা মাত্র ভোটের জন্য মোতায়েন করতে হল বিশাল পুলিশবাহিনী। প্রচুর এমন মুখ দেখা গেল যাঁদের সঙ্গে ‘বহু দূর পর্যন্ত’ বিমানবন্দরের কোনও যোগাযোগই নেই। অভিযোগ, বুধবার ভোর থেকে বিমানবন্দরের দুই ও আড়াই নম্বর গেট পেরিয়ে ভোট দিতে আসা সাধারণ বহু কর্মীকে এই বহিরাগতদের রক্তচক্ষুর সামনে পড়তে হয়েছে। ‘ভাল চান তো বাড়ি ফিরে যান’— আঙুল উঁচিয়ে শোনা গিয়েছে এমন হুমকিও।

Advertisement

এক দিকে এয়ারপোর্ট অথরিটি এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (এএইইউ) এবং উল্টো দিকে ইন্ডিয়ান এয়ারপোর্টস কামগর ইউনিয়ন (আইএকেইউ)। প্রথম সংগঠনটি আদতে সিটু অনুমোদিত, দ্বিতীয় সংগঠনটি আইএনটিইউসি বা কংগ্রেস। কিন্তু এখন এ রাজ্যে দু’দলের অস্তিত্বই যে-হেতু প্রশ্নচিহ্নের সামনে, তাই অভিযোগ, দুই ইউনিয়নই পর্দার আড়াল থেকে পরিচালনা করছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। আরও অভিযোগ, সেখানে যাঁরা এএইইউ-এর পিছনে তাঁদের ক্ষমতা তুলনায় অনেকটাই বেশি।

কলকাতায় বিমান-যাত্রীদের দৃষ্টি থেকে অনেক দূরে এই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে এএইইউ-এর বিশাল প্যান্ডেল করা ক্যাম্প অফিস দেখা গেলেও কামগর ইউনিয়নের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে তাঁরা ক্যাম্প অফিস তৈরি করতে গেলে তাঁদের তা করতে দেওয়া হয়নি। যেখানে ভোট হচ্ছিল, সেই পুরনো টার্মিনালের এক প্রান্ত থেকে প্রায় দেড়শো মিটার দূরে বুধবার দুপুরে কামগরের সমর্থকেরা জড়ো হয়ে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা ভোট দিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। বহিরাগতেরা সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাঁদের মারধর করা হতে পারে, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কামগরের সমর্থকেরা।

এক সময়ে স্থানীয় থানার ওসি সহকর্মীদের নিয়ে এমন প্রায় জনা দশেক কর্মীকে এনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু শঙ্কিত কর্মীদের দাবি ছিল, তাঁদের সবাইকে পুলিশি-নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যা পুলিশ করতে পারেনি। অভিযোগ, এক সময়ে ওই কর্মীদের কাছেই বেশ কিছু বহিরাগত জড়ো হয়েছিলেন। বিমানবন্দরের ভিতরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ জওয়ানদের নিয়ে তাঁদের হটিয়ে দেন কর্তৃপক্ষের এক কর্তা। কিন্তু, তার পরেও সারা দিন ধরে অভিযোগ চলতে থাকে।

এএইইউ-এর সম্পাদক প্রদীপ শিকদার অবশ্য বলেন, ‘‘ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে।’’ যদিও কামগর ইউনিয়নের সম্পাদক শান্তনু বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘আমাদের বহু কর্মী তৃণমূলের সমর্থক। বাইরের লোক এসে তাঁদের হুমকি দিয়ে ভোট দিতে দেয়নি।’’

নির্বাচন শুধু কলকাতায় নয়, সারা ভারতে হয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে সেই ভোটের গণনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন