রাজন্য সরকার
স্কুলে একটি শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তিন বছর পরে ফের সেই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিল আলিপুর আদালত। শিশুটির মায়ের অভিযোগ ছিল, পুলিশ কোনও তদন্ত না করেই রিপোর্ট দিয়েছিল। মৃত্যুর কারণ নিয়েও স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। এ দিন আদালতের নির্দেশ শুনে শিশুটির মা বলেন, ‘‘আমার ছেলে ফিরবে না জানি। কিন্তু তদন্তে সত্যিটা যেন সামনে আসুক সেটাই চাই।’’
২০১৪ সালের মে মাসে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ভিতরে অচৈতন্য হয়ে প়়ড়েছিল রাজন্য সরকার।
পরে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশি তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজন্যের পরিবার। বুধবার সেই মামলার শুনানিতে আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সৌগত রায়চৌধুরী নির্দেশ দেন, গ়ড়িয়াহাট থানাকে ফের এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে।
রাজন্যের মা রুচিরা সরকার বলেন, গড়িয়াহাট থানা তাঁর ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কোনও তদন্ত না করেই রিপোর্ট দিয়েছিল। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ জানিয়ে এর আগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রুচিরাদেবী। তদন্তে অসম্পূর্ণতার কথাও আদালতের সামনে তুলে ধরেছিলেন রুচিরাদেবীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা। তাঁর যুক্তি ছিল, রাজন্যের মৃত্যু নিয়ে পুলিশ যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছে তা অসম্পূর্ণ। স্কুলের সিসিটিভির ফুটেজের কথা বলা হলেও তা দেওয়া হয়নি। রাজন্যকে অচেতন অবস্থায় খুঁজে পাওয়া এবং নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে এক ঘণ্টার ফারাক রয়েছে। সেই সময়ের বিশদ বিবরণও নেই। এ দিন অনির্বাণবাবু বলেন, ‘‘আমাদের যুক্তি বিচারককে সন্তুষ্ট করেছে। আদালতও মনে করেছে, এই ঘটনার ফের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত রাজন্য। ২০১৪ সালের ৮ মে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ স্কুলের তিন তলায় কম্পিউটার ক্লাসের সামনে রাজন্যকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন দুই শিক্ষিকা। তাঁরাই রাজন্যকে স্কুলের ‘সিক রুমে’ নিয়ে যান। সিক রুমে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানে থাকা নার্সিং কর্মী রাজন্যকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। স্কুলের বাসে চাপিয়েই ওই পড়ুয়াকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পুলিশের দাবি, গোটা ঘটনাটি ১২ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘটে। তদন্তে স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা স্কুলের কর্মীদের কারও গাফিলতি ছিল না। সেটাই আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে দাবি করেছিলেন তদন্তকারী অফিসার। পুলিশ সূত্রে আরও দাবি করা হয়েছিল, রাজন্যের মৃত্যুর কারণ জানতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল।তার ভিসেরাও পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানেও এমন কিছু মেলেনি যা বলা যায়, খুন বা গাফিলতির জেরে রাজন্যের মৃত্যু হয়েছিল।