অভিযুক্তদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে।—নিজস্ব চিত্র।
চলন্ত মেট্রোয় মঙ্গলবার বিকেলে কোন্নগরের যুবতীকে নিগ্রহের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল ১০ জন যুবককে। সকলেরই বয়স ১৮ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। নিগৃহীতার অভিযোগ অনুযায়ী ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪, ৩৫৪(এ), ৩৫৪(ডি), ৫০৯ এবং ৩৪ ধারায় তাদের অভিযুক্ত করা হয়। সোজা কথায়, শ্লীলতাহানি এবং ভয় দেখানোর অভিযোগ। এর মধ্যে জামিন অযোগ্য ধারাও রয়েছে।
বুধবার ওই দশ যুবককেই আলিপুর আদালতে হাজির করা হয়। মামলার শুনানি শুরু হয় বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ, অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিৎ ঘোষের এজলাসে।
মামলার ডাক পড়তেই অভিযুক্তদের কৌঁসুলি হিসাবে উঠে দাঁড়ান আলিপুর পুলিশ কোর্টের পরিচিত আইনজীবী শঙ্কর মুখোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন তাপস দে চৌধুরি বা প্রিয়াঙ্কা দাসের মতো অন্তত দশ জন আইনজীবী।
আরও পড়ুন: ‘বললাম, সুস্থ ভাবে দাঁড়াতে পারছ না? ওরা বলল, এটা মেট্রো, হতেই পারে...’
আরও পড়ুন: প্ল্যাটফর্মে শিক্ষিকাকে মার, বাঁচাল চার ছাত্রী
মক্কেলদের হয়ে সওয়াল করতে নেমে প্রথমেই তাঁদের বক্তব্য, ‘সাহেব, আসামিদের এক জন আমাদের এই আলিপুর আদালতেরই এক আইনজীবীর ভাইপো।” একই কথা সমস্বরে বলে ওঠেন তাঁর সঙ্গে থাকা বাকি আইনজীবীরাও। তার পর শঙ্করবাবু বলেন, “আদতে সে রকম কিছুই হয় নি। ওরা সকলেই পুজোর কেনাকাটা করে মেট্রোতে উঠেছিল। ট্রেনে ভিড় ছিল। তাতে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়ে থাকতে পারে। তার জেরেই ওই মহিলার সঙ্গে বচসা।” তাঁর সঙ্গী আইনজীবীরাও বলেন, “বচসার জেরে ওই মহিলা এক জনকে চড় মারেন। তাই ওরা টালিগঞ্জ মেট্রোতে সবাই মিলে নেমেছিল মহিলার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাতে।” তাঁরা সব অভিযুক্তেরই জামিনের আর্জি জানান।
যদিও হিন্দিতে লেখা ওই নিগৃহীতার অভিযোগে পরিষ্কার লেখা ছিল, টালিগঞ্জে নামার সময় তাঁর ব্যাগ টেনে ধরেন অভিযুক্তদের এক জন। তিনি নামার পরেই তাঁকে সবাই ঘিরে ধরে শাসাতে থাকে, কেন তিনি ওদের এক জনকে চড় মেরেছেন।
বিচারক অভিযুক্তদের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পর সরকারি আইনজীবী রাধানাথ রণকে জামিনের বিরোধিতা করে কোনও সওয়াল করতে দেখা যায়নি। বড় জোর মিনিট পাঁচেকের সওয়ালের পরই ম্যাজিস্ট্রেট দশ জনকেই ১০০০ টাকা বন্ডে জামিনের নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে উল্লেখ করেন, জামিনের পর অভিযুক্তরা যেন তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন।
ধৃত যুবকদের সকলেরই বাড়ি বারুইপুরের ভট্টাচার্যপাড়া এবং নন্দীপাড়াতে। এদেরই এক জন অপূর্ব চক্রবর্তী। বছর চব্বিশের ওই যুবক ভূগোলে স্নাতোকত্তোর পাঠ শেষ করেছেন। তাঁরই কাকা স্বপন চক্রবর্তী আলিপুর আদালতের পরিচিত আইনজীবী। তিনি নিজেও এ দিন ছিলেন। স্বপনবাবু বলেন, “এরা সকলেই ভাল ছেলে। ভিড় মেট্রোতে একটা বচসা হয়ে গিয়েছিল।” যদিও, জামিনের খবর পেয়ে নিগৃহিতা বলেন, “জামিন পেয়ে গেল! হতাশ লাগছে। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। এমন কাজ করেও যদি এক দিনে জামিন পেয়ে যায়, তা হলে ওরা তো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। আমি কাল ফের রিজেন্ট পার্ক থানায় যাব।”