অন্যের জমি বেচতে দরপত্র! কাঠগড়ায় এয়ার ইন্ডিয়া

অভিযোগ, এয়ার ইন্ডিয়া কলকাতায় এমন একটি সম্পত্তি বিক্রির জন্য দরপত্র চেয়েছে, যা মোটেই তাদের নয়! এই নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। 

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৩৮
Share:

মুলেন স্ট্রিটে এয়ার ইন্ডিয়ার কলোনি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

৫৫ হাজার কোটি টাকা দেনার একাংশ মেটাতে মরিয়া এয়ার ইন্ডিয়া নিজেদের হাতে থাকা সম্পত্তি বেচতে শুরু করেছে। সেই তাগিদ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অন্যের জমি বিক্রি করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এয়ার ইন্ডিয়া কলকাতায় এমন একটি সম্পত্তি বিক্রির জন্য দরপত্র চেয়েছে, যা মোটেই তাদের নয়! এই নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

Advertisement

কলকাতার যে-জমি নিয়ে অভিযোগ, সেটি বালিগঞ্জ থানা এলাকার ১৩ নম্বর মুলেন স্ট্রিটে। সেখানে পাঁচিল ঘেরা ১৭৫৮ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে পাঁচতলা বাড়িতে ১১টি ফ্ল্যাট আছে। এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট-ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ সেই সব ফ্ল্যাটে থাকেন। শানবাঁধানো বড় জমিতে একসঙ্গে বেশ কিছু গাড়ি রাখার জায়গাও আছে সেখানে। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড সংলগ্ন অভিজাত এলাকায় প্রায় ১৯ হাজার বর্গ ফুট এলাকার বাজারদর এখন কয়েক কোটি টাকা। অক্টোবরের গোড়ায় সব ফ্ল্যাট খালি করার নির্দেশ দেয় এয়ার ইন্ডিয়া। সেই নির্দেশ পেয়ে অনেকে ফ্ল্যাট খালি করে চলেও যান।

কলকাতায় গল্ফগ্রিন ও মিডলটন রোডেও এয়ার ইন্ডিয়ার নিজস্ব ফ্ল্যাট রয়েছে। সেই সব ফ্ল্যাটের সঙ্গেই মুলেন স্ট্রিটের ওই সম্পত্তি বিক্রির জন্য তারা ১ অক্টোবর খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে দরপত্র চেয়েছে। তার প্রতিলিপি টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে মুলেন স্ট্রিটেও।

Advertisement

সেই নোটিস টাঙানোর পরে অক্টোবরেই আবেদা খাতুন নামে ১৮ নম্বর মুলেন স্ট্রিটের এক বাসিন্দা বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ জানান, মুলেন স্ট্রিটের যে-সম্পত্তি নিজেদের বলে দাবি করে এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির নোটিস দিয়েছে, সেটি আদতে ওয়াকফ সম্পত্তি। তিনি পুরুষানুক্রমে ওই সম্পত্তির রক্ষক। এয়ার ইন্ডিয়া ওই সম্পত্তি বেআইনি ভাবে দখল করে রেখেছে। সম্পত্তি বিক্রির নোটিস প্রত্যাহার না-করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই অভিযোগ করা হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার সিএমডি এবং পূর্বাঞ্চলের ডিরেক্টরের কাছেও।

আবেদার স্বামী মহম্মদ রফিক হালদার জানান, ১৯০৪ সালের দলিল অনুযায়ী আব্দুল লতিফ ৭০ বিঘা জমির মালিকানা পান। লতিফ আবেদার ঠাকুরদার ঠাকুরদা। আবেদা সেখান থেকে দু’বিঘা জমি পেয়েছেন। সেই জমি এখন ওয়াকফ সম্পত্তি। ১৯৯৫ সালের নতুন নিয়ম অনুযায়ী সেই সম্পত্তি কোনও ভাবেই লিজ দেওয়া বা বিক্রি করা যাবে না।

তা হলে ওই সম্পত্তিতে এয়ার ইন্ডিয়া জড়িয়ে পড়ল কী ভাবে?

রফিকের দাবি, প্রায় ৩০ বছর আগে (আবেদা তখন ছোট) তৃতীয় কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে ওই সম্পত্তি নেয় এয়ার ইন্ডিয়া। তার পর থেকে পুরসভায় সম্পত্তি কর-ও দিতে শুরু করে। রফিক বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে নেওয়া জমিতে কয়েক জন পরিবার নিয়ে থাকতেন। তাঁদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা নেই। তাই তাঁদের উৎখাত করতে চাইনি। কিন্তু এ বার তাঁদেরই হটিয়ে জমি বিক্রি করতে চাইছে এয়ার ইন্ডিয়া। এটা হতে দেব না।’’ ১৮ নভেম্বর বালিগঞ্জ থানায় জানিয়ে ওই সম্পত্তি থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার রক্ষীদের হটিয়ে নিজের নিরাপত্তারক্ষী বসিয়েছেন রফিক।

এয়ার ইন্ডিয়ার বক্তব্য, মুলেন স্ট্রিটের ওই সম্পত্তির মালিক যে তারাই, তার যাবতীয় আইনি নথিপত্র রয়েছে তাদের কাছে। তারই ভিত্তিতে বিক্রির জন্য দরপত্র চাওয়া হয়েছে। ১৯৬১ সালে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ওই সম্পত্তি কেনেন তৎকালীন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ঘুরে দাঁড়াতে দেশে তাদের ৭০টি সম্পত্তি বিক্রি করে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সংস্থার ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নষ্ট করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই কিছু লোক মুলেন স্ট্রিটের জমি নিয়ে অযথা বিতর্কের সৃষ্টি করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন