নির্মল মাজি।
নেতানেত্রীদের অনেকেই রাজনৈতিক প্রভাবে বিভিন্ন দফতরে কর্মীদের নিয়োগ ও বদলি নিয়ন্ত্রণ করেন—এমন অভিযোগ প্রথম থেকেই রয়েছে। কিন্তু কোনও নেতা প্রকাশ্যে কোনও দফতরের কর্তাকে কর্মীদের বদলি নিয়ে হম্বিতম্বি করছেন এবং কেন তাঁর কথামতো বদলি হয়নি সেই কৈফিয়ত চাইছেন, এমন নজির নেই বললেই চলে। সেই নজির তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের চিকিৎসক-বিধায়ক নির্মল মাজি-র বিরুদ্ধে।
ঘটনার কথা নির্মলবাবু অনেকাংশে মেনেও নিয়েছেন। তবে দাবি করেছেন, ঠিক কৈফিয়ত তলব বা তিরস্কার তিনি করেননি, ‘গল্পচ্ছলে’ এবং ‘ভালভাবে’ মানবিকতার খাতিরে বদলির বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন! কিন্তু প্রকাশ্যে কোনও অডিটোরিয়ামে কয়েকশো লোকের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ ‘গল্পচ্ছলে’ও এমন কথা উত্থাপন পারেন কিনা সে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্যভবনের অনেকেই। স্বাস্থ্যদফতর সূত্রের খবর, ঘটনার পরে দফতরের অনেক কর্তাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং নির্মলবাবু যে অনুষ্ঠানে থাকবেন সেই অনুষ্ঠান ভবিষ্যতে এড়িয়ে যাবেন বলে জানান।
অতীতে একাধিক ‘বিতর্কিত’ বিষয়ে নির্মলবাবুর নাম জড়িয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসক ও চিকিৎসক-কর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও একাধিকবার উঠেছে। আর সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেই, গত ১১ জানুয়ারি। সে দিন কলেজের অডিটোরিয়ামে বিএসসি নার্সিংএর নতুন ছাত্রীদের ‘ল্যাম্প লাইটিং সেরিমনি’ ছিল। এই অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে নার্সিং-এর ছাত্রীরা শপথ গ্রহণ করেন। সেখানে জয়েন্ট ডিরেক্টর (নার্সিং) মাধবী দাস, জয়েন্ট সেক্রেটারি (নার্সিং) মিউটিনি বন্দ্যোপাধ্যায়, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তপন লাহিড়ির পাশাপাশি কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মলবাবুও আমন্ত্রিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য দফতর ও মেডিক্যাল কলেজের একাধিক সূত্রের খবর, অনুষ্ঠান সাড়ে দশটায় শুরুর কথা ছিল। নির্মলবাবুর পৌঁছতে দেরি হচ্ছে দেখে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অভিযোগ, এরপর নির্মলবাবু অডিটোরিয়ামে ঢুকে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন এবং কেন তাঁকে ছাড়াই আনুষ্ঠান চালু হয়েছে সেই প্রশ্ন করতে থাকেন। অভিযোগ, মাঝপথে অন্য বক্তার কথা থামিয়ে নির্মলবাবুকে মাইক্রোফোন দেওয়া হলে তিনি সেটি হাতে নিয়ে প্রকাশ্যেই মাধবীদেবীর উদ্দেশ্যে জানান— তিনি বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির প্রধান। তবু তাঁর কথামতো কেন কিছু নার্সকে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বদলি করা হয়নি?
এ ব্যাপারে মাধবীদেবীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কিচ্ছু বলতে পারবো না।’’ অধ্যক্ষ তপন লাহিড়ির বক্তব্য, ‘‘নির্মলবাবু ওখানে এসেছিলেন, আমিও ছিলাম। কিন্তু আমি কিছু বলার মতো জায়গায় নেই।’’ আর নির্মলবাবুর বক্তব্য, ‘‘ধমকাইনি তো! গল্পচ্ছলে ভালভাবেই মাধবীদিকে বলেছিলাম অনেক নার্সের প্রোমোশন অনেক দিন থেকে আটকে আছে। কেন হচ্ছে না দেখা উচিত। আর বলেছিলাম, কিছু নার্সের বাচ্চা রয়েছে, বর অন্য জায়গায় থাকে। ঠিকঠাক পোস্টিং না হলে ওঁদের ফ্যামিলি লাইফটা নষ্ট হচ্ছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমার মুখে আসলে হাসি কম থাকে, তাই লোকে ভাবে বকাবকি করছি।’’ তাঁকে ছাড়া অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল বলে তিনি রাগে
ফেটে পড়েন বলে যে অভিযোগ উঠেছে সে ব্যাপারে নির্মলবাবু বলেন, ‘‘আমার ড্রাইভারের জন্য দেরি হয়েছিল বলে তাঁর উপরে রেগে গিয়েছিলাম। সেই রাগের কথাই অডিটোরিয়ামে বলেছিলাম।’’