প্রতীকী ছবি।
কোথাও পুলিশের হাতে শব্দ মাপার যন্ত্র আছে, কিন্তু ঠিকঠাক ব্যবহার হয় না। কোথাও সেই যন্ত্রই নেই। এই অবস্থায় শব্দদৈত্যও বোতল থেকে বেরিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে।
উৎসবের মরসুম শেষ। তবে বিকট শব্দে মাইক, সাউন্ড বক্স বাজিয়ে জলসার বিরাম নেই। শনিবার সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত সিঁথি ও ভবানীপুরের দু’টি জায়গায় চলেছে গানবাজনার অনুষ্ঠান। আয়োজকদের বিরুদ্ধে যথারীতি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ আদালতে রীতিমতো হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে শব্দদানবের দাপট ঠেকাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা দাবি করা হচ্ছে। এর ফল কিন্তু সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন না।
জাতীয় পরিবেশ আদালতে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পেশ করা হলফনামা অনুযায়ী, শব্দ মাপতে কলকাতা পুলিশকে তারা দেড়শোটি নয়েজ মিটার দিয়েছে ১৩ সেপ্টেম্বর। দুর্গাপুজোর দু’সপ্তাহ আগে। শহরে ৮টি মহিলা থানা ধরে মোট থানার সংখ্যা ৭৮টি।
কিন্তু একাধিক থানা জানাচ্ছে, তারা ওই যন্ত্র হাতে পায়নি। যে সব থানা ওই নয়েজ মিটার পেয়েছে, তাদের অধিকাংশের বক্তব্য, দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর মণ্ডপে ও বিসর্জনের মিছিলে কত শব্দমাত্রায় মাইক ও সাউন্ড বক্স বেজেছে, তা ওই সরঞ্জাম দিয়ে দেখা হয়েছে। তবে জগদ্ধাত্রী পুজো ও পাড়ায় পাড়ায় জলসায় যে ওই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি, সেটা পুলিশের একাংশ স্বীকার করে নিচ্ছেন।
গত বুধবার, ৮ নভেম্বর জাতীয় পরিবেশ আদালতে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানান, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রীপুজো এবং বিভিন্ন জলসায় অবাধে শব্দবিধি ভাঙা হয়েছে। নির্ধারিত শব্দসীমা অতিক্রম করে মাইক ও সাউন্ড বক্স বেজেছে। সুভাষবাবু জানান, বহু জায়গায় পুলিশ কার্যত দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়েছিল। যদিও ২০০০ সালের শব্দবিধি অনুযায়ী, পুলিশকেই শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
সেই ক্ষমতা প্রয়োগে পুলিশের যাতে সুবিধে হয়, সেই জন্য পর্ষদ এ বার কলকাতা পুলিশ, বিধাননগর ও হাওড়া কমিশনারেট এবং লাগোয়া কয়েকটি জেলা পুলিশকে মোট ২৭৩টি নয়েজ মিটার দিয়েছিল। যেগুলি তৈরি করেছে রাজ্য সরকারের সংস্থা ওয়েবেল। এক-একটির দাম প্রায় ১০ হাজার টাকা। কিন্তু তার মধ্যে ক’টির সদ্ব্যবহার হয়েছে, তা নিয়ে পর্ষদকর্তাদেরই একাংশ সন্দিহান।
পুলিশের একাংশের অবশ্য যুক্তি, লালবাজার থেকে ওই সরঞ্জাম বিলি করা হয়েছিল। যে অফিসার আনতে গিয়েছিলেন, যন্ত্রের ব্যবহার তিনিই শিখেছেন। বাকিদের শেখানো যায়নি। ফলে নয়েজ মিটার থাকলেও পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারেনি বহু থানা।
শব্দের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ একাধিক বিজ্ঞানী জানান, শুধু এই যন্ত্র দিলেই হল না। তা ব্যবহারের উপযুক্ত পাঠ ও প্রশিক্ষণ জরুরি। সেটা মাত্র দু’-তিন ঘণ্টায় সম্ভব নয়। এক বিজ্ঞানীর বক্তব্য, প্রথম প্রশিক্ষণ হওয়া দরকার সাত-আট ঘণ্টা ধরে। তার পর আরও কয়েক দিন প্রশিক্ষণ চাই। থানার মাত্র এক জনকে প্রশিক্ষণ দিলে হবে না, কয়েক জনকে বেছে নিতে হবে। তাঁদের মধ্যে যিনি সব চেয়ে ভাল শিখেছেন, তিনি বাকিদের শেখাবেন। পর্ষদ ও পুলিশ সূত্রের খবর, নয়েজ মিটার নিয়ে তেমন প্রশিক্ষণ হয়নি।
পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক, বর্তমানে পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নয়েজ মিটার থাকলেই হবে না। তা ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ নিতে হবে ও ব্যবহার করতে হবে। যন্ত্র ব্যবহার করে আইন ভঙ্গ হচ্ছে বুঝেও উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে সবটাই মাটি।’’ বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘নয়েজ মিটার পর্ষদকে বিলি করতে হবে কেন? শব্দবিধিতে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেই বিধি কার্যকর করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও পুলিশ কিনুক।’’