Government Hospital

কানে মিলল গজ! অভিযুক্ত সরকারি হাসপাতাল

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুমড়োখালির বাসিন্দা রাবিয়া মণ্ডলের দীর্ঘ দিন ধরেই ডান কানে যন্ত্রণা হত। এক সময়ে পুঁজ বেরোতে শুরু করলে তিনি এমআর বাঙুর হাসপাতালে যান।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:০১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

কোনও ভুল চিকিৎসা হলে বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানাতে পারেন রোগী বা তাঁদের পরিজনেরা। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে সেই ‘ভুল’ হলে তাঁরা যাবেন কার কাছে? বেশির ভাগেরই জানা নেই উত্তর। ঠিক যে ভাবে বছর বিয়াল্লিশের এক বধূর পরিজনেরা বুঝতে পারছেন না, সরকারি হাসপাতালে কানের অস্ত্রোপচারের সময়ে ভিতরে গজ থেকে গিয়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ায় এখন কার কাছে কিংবা কোথায় গেলে সুবিচার মিলবে।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুমড়োখালির বাসিন্দা রাবিয়া মণ্ডলের দীর্ঘ দিন ধরেই ডান কানে যন্ত্রণা হত। এক সময়ে পুঁজ বেরোতে শুরু করলে তিনি এমআর বাঙুর হাসপাতালে যান। তাঁর দিদি সাপিয়া খাতুন জানাচ্ছেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাবিয়াকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলার কানের অস্ত্রোপচার করা হয়। রাবিয়া বলেন, ‘‘শুনতে পেয়েছিলাম, অপারেশনের সময়ে ডাক্তারবাবুরা বলাবলি করছিলেন, ‘বেশি কাটা হয়ে গিয়েছে’।’’ পরিজনদের অভিযোগ, প্রায় এক মাস ভর্তি রাখার পরে রাবিয়াকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। কিন্তু তার পরেও তাঁর কান গিয়ে পুঁজ বেরোতে থাকে। তীব্র যন্ত্রণার সঙ্গে জ্বর আসতে থাকে।

সাপিয়ার কথায়, ‘‘ফের বাঙুর হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারদের বললে ওঁরা জানান, পুঁজ শুকিয়ে যাবে। কিন্তু তেমন কিছুই হচ্ছিল না।’’ উল্টে তাঁর কানের চার দিক টিউমারের মতো ফুলতে থাকে বলে জানান রাবিয়া। তখন চিকিৎসা করাতে পিয়ারলেস হাসপাতালে যান। পরিজনদের দাবি, সেখানে পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানান, সংক্রমণ ছড়িয়েছে। যে কোনও সময়ে খারাপ কিছু ঘটতে পারে। অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি আছে। রাজি হন রাবিয়ার পরিজনেরা। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ৮ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচার হয়। দেখা যায়, কানের ভিতরে গজ রয়েছে। তা থেকেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছিল। তখন সেটি বার করে পরের দিনই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। আপাতত সুস্থ রয়েছেন রাবিয়া।

Advertisement

কিন্তু এই ভুলের কেন বিহিত হবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রাবিয়া ও সাপিয়ার ঘনিষ্ঠ শুক্লা সরকার। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় রাজনৈতিক পদাধিকারীদের কাছে গিয়েছিলাম, কেউ কিছু করেননি। আমরা তো জানিও না, কোথায় গেলে অভিযোগ জানানো যাবে।’’

রাজ্যের বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসায় গাফিলতি, বেশি বিল-সহ যে কোনও অভিযোগ জানানো যায় স্বাস্থ্য কমিশন বা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন’-এ। তবে সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে সেখানে অভিযোগ দায়েরের কোনও ব্যবস্থা নেই। তা হলে? রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা অনিরুদ্ধ নিয়োগী বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের অধ্যক্ষ বা সুপারের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজ জমা করে রোগীর পরিজন অবশ্যই অভিযোগ জানাতে পারেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। ওই রোগীর পরিজনেরাও সেটি করতে পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন