পায়ের পাত খুলতে গিয়ে ডাক্তার বাদ দিলেন পিত্তথলি

অভিযোগে সম্প্রতি এক শল্য চিকিৎসককে ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০১:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

অস্ত্রোপচার করে পায়ের লোহার পাত বার করার পরিবর্তে বাদ দেওয়া হয়েছিল পিত্তথলি! সেই অভিযোগে সম্প্রতি এক শল্য চিকিৎসককে ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

Advertisement

মহেশতলার বাটানগরের বাসিন্দা শ্যামলী মণ্ডলের পরিবার সূত্রের খবর, ২০১১ সালে বাড়িতেই পড়ে যান তিনি। এ জন্য বজবজ ইএসআই হাসপাতালে শ্যামলীদেবীর হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করে লোহার পাত বসাতে হয়েছিল। সেই পাত খুলতে ২০১২ সালের নভেম্বরে ওই হাসপাতালেই ভর্তি হন তিনি। ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বরে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। শ্যামলীদেবীর ছেলে তারক মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘অপারেশন থিয়েটারের বাইরে পাঁচ ঘণ্টার উপরে অপেক্ষা করেও মাকে বার না করায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। তখন ডাক্তারবাবুরা জানিয়েছিলেন, মায়ের তলপেটের ফোলা অংশ থেকে রেহাই দিতে পিত্তথলি বাদ দিতে হয়েছে। তারকবাবুর দাবি, ‘‘মায়ের পেটের সমস্যাই ছিল না। তা ছাড়া পিত্তথলি অস্ত্রোপচারের জন্য আমাদের সম্মতি নেওয়া হয়নি। এমনকি আগে কোনও পরীক্ষাও হয়নি।’’

ছোট্ট বাড়িতে বৃদ্ধ স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকেন শ্যামলীদেবী। পিত্তথলি না থাকায় বদহজম, অম্বলের সমস্যা তাঁর নিত্যসঙ্গী। তারকবাবুর দাবি, ‘‘হাসপাতালের কাগজপত্রের গরমিলেই এমন ঘটেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল এবং চিকিৎসকেরা এর দায় এড়াতে পারেন না।’’ অভিযোগকারীর আইনজীবী চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পিত্তথলি বাদ দেওয়ার পরে আমার মক্কেলকে ছ’মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হয়েছিল।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বজবজ ই এস আই হাসপাতাল ও সেখানকার দুই চিকিৎসক দীপক চক্রবর্তী ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ এনে তারকবাবুরা ২০১৪ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা করেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ওই আদালত হাসপাতাল-সহ দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ১৭ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করে। জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অভিযুক্তেরা রাজ্য আদালতে মামলা করেন। ১৪ মার্চ রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ওই হাসপাতাল ও দীপকবাবুকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। কিন্তু শ্যামলীদেবীর অস্ত্রোপচার যিনি করেছিলেন, সেই জয়ন্তবাবুকে ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক ঈশানচন্দ্র দাস তাঁর রায়ে বলেন, ‘‘পায়ের লোহার পাত খোলার পরিবর্তে রোগীর পেট কেটে দেওয়া এক জন চিকিৎসকের চরম গাফিলতি। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক যুক্তি খাড়া করলেও অবহেলার দায় এড়াতে পারেন না।’’ জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘রায়ের কপি পাইনি। যা বলার আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলুন।’’ চিকিৎসকের আইনজীবী অভীক দাস বলেন, ‘‘আমার মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যাব।’’

স্ত্রী রোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘সত্যিই যদি কোনও রোগীর পায়ের পাত বার করতে গিয়ে পিত্তথলি বাদ দেওয়া হয়, তা সেই চিকিৎসকের শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’’ শল্য চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব সেন বলেন, ‘‘কাগজপত্রের ভুলে এমন ঘটনা সাংঘাতিক। এই অস্ত্রোপচারের ফলে রোগীর অম্বল, বদহজমের সমস্যা হবে। সুতরাং স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া করতে পারবেন না তিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন