হিন্দুত্ববাদী হিংসার বিরুদ্ধে সরব তথ্যচিত্র

লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে বলিউডকে কাজে লাগিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রচারমূলক ছবির অস্ত্রে শান দিচ্ছে মোদী-বাহিনী। তার উল্টো স্রোতে অন্য রকম কিছু গল্প বলছে আনন্দ পটবর্ধনের নতুন তথ্যচিত্র। 

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৯ ০০:৫২
Share:

তথ্যচিত্রের প্রদর্শন উপলক্ষে কলকাতায় আনন্দ পটবর্ধন। ছবি: অনিরুদ্ধ দে

নতুন ছবির বিষয় তিনি খোঁজেন না। তাঁকেই খুঁজে নেয় ছবি। ক্যামেরার পিছনে বা এডিট টেবিলে তাঁর চলচ্চিত্র-অভিযানকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করছিলেন ৬৮ বছরের ‘তরুণ’।

Advertisement

লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে বলিউডকে কাজে লাগিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রচারমূলক ছবির অস্ত্রে শান দিচ্ছে মোদী-বাহিনী। তার উল্টো স্রোতে অন্য রকম কিছু গল্প বলছে আনন্দ পটবর্ধনের নতুন তথ্যচিত্র।

গত সেপ্টেম্বরে কানাডার টরন্টোয় প্রথম বার দেখানো হয়েছিল ছবিটি। আটটি ভাগে ভাঙা চার ঘণ্টার তথ্যচিত্র জুড়ে সমকালের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির হিংস্র আখ্যান। ‘রিজ়ন’ (হিন্দি ভাষান্তরে বিবেক) নামের এই ছবিটিই এর পরে আমস্টারডামে আন্তর্জাতিক তথ্যচিত্র উৎসবের সেরা ছবির শিরোপা পেয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় কালীঘাটের যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমির প্রেক্ষাগৃহে কলকাতায় এ ছবির প্রথম শো ছিল। তার পরেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন সাদা দাড়ির দীর্ঘদেহী সৌম্যদর্শন পরিচালক। তাঁর কথায়, ‘‘কী নিয়ে ছবি করতে হবে, আমি কখনওই ভাবি না! চার পাশের বাস্তবতাই আমার ছবির বিষয় ঠিক করে ডাক দেয়!’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আনন্দ বলছিলেন, ‘‘২০১৫-এ গোবিন্দ পানসারের হত্যাকাণ্ডের পরেই আমার টনক নড়ে! বুঝতে পারি, দাভোলকর, পানসারে— সবার খুনের পিছনেই তো হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ছক কাজ করছে।’’ তথ্যচিত্রটি বলছে, হিন্দু ধর্মে নানা ভাবধারার ছাড়পত্র রয়েছে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদ একটেরে ব্রাহ্মণ্যবাদী আধিপত্যে ভরপুর। এ ছবিতে মাঝেমধ্যেই পর্দা জুড়ে গর্জে উঠছে হানাদার মোটরবাইকের বেগপ্রমত্ততা। এ দেশে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, ইতিহাস-বিকৃতির বিরুদ্ধে লড়াকু মুক্তচিন্তকদের আততায়ীরা যে বারবার মোটরবাইক নিয়েই ধেয়ে এসেছিল। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মতাদর্শই এই হিংসার চালিকাশক্তি বলে আঙুল তুলছে আনন্দের ছবি।

এ ছবির কাজ শুরুর পরে ঘটেছে কালবুর্গি এবং গৌরী লঙ্কেশের হত্যাকাণ্ড। হায়দরাবাদে রোহিত ভেমুলার আত্মহনন, দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্রদের ‘দেশদ্রোহী’ বলে দেগে দিয়ে জুলুম পর্ব কিংবা গোরক্ষার নামে মহম্মদ আখলাক খুন, গুজরাতে দলিতদের উপরে অত্যাচারের নানা অধ্যায়কে এক সূত্রে গেঁথেছে আনন্দের ছবি। উঠে এসেছে নাশকতা বা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসের অভিযোগের প্রসঙ্গ, গাঁধী-হত্যার প্রেক্ষাপট। তবে ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পটভূমিতে ‘রাম কে নাম’-এর রূপকার আনন্দ বলছেন, ‘‘২০১৯-এ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির রূপটা আরও ভয়ঙ্কর।’’

মোদী সরকার ফের এক বার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে দেশে ফাসিস্ত জমানা গেড়ে বসাটা প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠবে বলেও মনে করেন এই চিত্রপরিচালক।

আনন্দ অকপট: ‘‘কংগ্রেসের নানা সমস্যা থাকলেও তাদের অন্তত লজ্জায় ফেলা সম্ভব। মোদী-অমিত শাহেরা সেটুকুরও তোয়াক্কা করেন না।’’

সাম্প্রদায়িকতা রুখতে বা এ দেশের বহুত্ব রক্ষা করতে তাঁর ছবি দেশের শহরগুলোয় বেশি করে দেখানোর তাগিদ অনুভব করছেন আনন্দ। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বাধায় আপাতত সেটা খুব একটা সোজা কাজ নয়। ‘পিপল্‌স ফিল্ম কালেক্টিভ’ নামে একটি মঞ্চ কলকাতায় ছবিটি দেখাতে উৎসাহী হয়েছিল। নেটমাধ্যম ব্যবহার করে এমন ছবি বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর আনন্দ এবং তাঁর সমমনস্কেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন