মগ্ন: দশাবতারের নকশায় মেতে বিদ্যুৎ ফৌজদার। নিজস্ব চিত্র
মাঝে মাঝেই হচ্ছিল কাশিটা। আর প্রতিবার কাশির সময়ে মাটিতে বসা শরীরটা বেঁকে যাচ্ছিল। তুলির টান এক চুলও নড়েনি। এই কাশি নিয়েই দেড় মাস ধরে কলকাতায় এসে টিনের ড্রাম, কুপি, জর্দার কৌটোয় দশাবতার আঁকছেন বিষ্ণুপুরের বিদ্যুৎ ফৌজদার।
এ বার বাবুবাগানের মণ্ডপ সাজছে তাঁরই দশাবতারের নকশায়। বয়স মাত্র ৫০। কিন্তু ফুসফুসের রোগে অকাল বার্ধক্য গ্রাস করেছে। বৃহস্পতিবার মণ্ডপে বসে কৌটোর গায়ে আঁকা নকশায় তুলির টান দিচ্ছিলেন অনায়াসে শিল্পী। পাশে স্ত্রী এবং ভাই প্রশান্ত। দশ মিনিটে একটি করে দশবতারের নকশা শেষ।
দুপুরেই টান উঠেছিল। ইনহেলার নিয়ে কিছু সময় বিশ্রাম নিতে হয়েছিল তাঁকে। ‘‘শরীর ঠিক থাকলে আগেই শেষ করতে পারতাম কাজ। দেড় মাস হল এসেছি। এক দিনও বন্ধ হয়নি কাজ।’’ হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন শিল্পী। কলকাতার পুজোয় এ বারই প্রথম নন তিনি। বেহালা, কসবা, কালীঘাটের পরে এ বার ঢাকুরিয়ায় দেখা যাবে তাঁর হাতের কাজ।
‘‘আমরা দশাবতার আঁকি কাপড়ে। কলকাতার পুজোয় এত দিন কাপড়েই তুলেছি নকশা। পুজো কমিটির কথায় টিনের উপরে করলাম।’— বললেন শিল্পী। ঠাকুরদার আমল থেকে এই শিল্প করায়ত্ত করেছেন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘দশ বছর থেকে আঁকছি। নিজের মতো করে নকশা বদলও করি। কিন্তু এখন কারও উৎসাহ নেই। জানি না কত দিন বাঁচবে এই শিল্প।’’
সারা বছর বাড়িতে কাপড়ে দশাবতার আঁকেন বিদ্যুৎবাবু। তাতে সংসার চলে যায়? বিভিন্ন পুজোয়, উৎসবে কবে ডাক পাবেন তার জন্য বসে থাকেন শিল্পীর পরিবার। তবে ইদানীং বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে পটচিত্র। মাঝেমধ্যে অর্ডারও মেলে। শরীর খারাপ। তাই অন্য কাজ করতে পারেন না বিদ্যুৎ। ভাই প্রশান্ত বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুরে লটারির টিকিট বিক্রি করেন।
বাবুবাগানের পুজো-কর্তা সরোজ ভৌমিক বলছিলেন, ‘‘শরীর এত অসুস্থ। তবু এক বারও বলেননি বাড়ি ফিরে যাবেন। টিনের উপরে নকশা তুলে ঠিক সময়ের মধ্যেই সাজিয়ে তুলেছেন মণ্ডপ। এ বার ওঁর ছুটি।’’