শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডের পরে সারাদিন ধরে সংবাদমাধ্যম এবং নিজের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। ঘটনায় আহত নিরাপত্তারক্ষীদের দেখতে হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত পুলিশকর্মীদের সঙ্গেও কথাবার্তা হয়।
কিন্তু গোয়েন্দারা যখন জানতে পারলেন ওই ব্যাক্তি শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, ততদিনে গা-ঢাকা দিয়েছেন অরূপ দেবনাথ। তিনি শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে যুক্তনিরাপত্তারক্ষী সরবরাহকারী সংস্থার মালিক এবং ঘটনার অন্যতম চক্রান্তকারী বলেই অভিযুক্ত।
ঘটনার পরে এক বছর কেটে গেলেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি অরূপকে। অধরা অরূপের ডান হাত বলে পরিচিত সুমন পাত্র। পুলিশের দাবি, আদালতে দু’জনের বিরুদ্ধেই হুলিয়া বা লুক-আউট নোটিস জারি করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, ওই দুই অভিযুক্ত বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছেন। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “ঘটনার তদন্ত শেষ করে ফেললেও অরূপকে গ্রেফতার না করতে পারাটা আমাদের কাছে কাঁটার মতো বিঁধছে।”
গত ১১ নভেম্বর শেষ রাতে ৯এ শর্ট স্ট্রিটে জমি দখল করতে হামলা চালান ২০ জন বাউন্সার ও নিরাপত্তারক্ষী। নেতৃত্ব দেন আইনজীবী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জোর করে সেখানে ঢুকে সেখানকার বাসিন্দা একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতা অগ্রবাল ও তাঁর ব্যক্তিগত দুই রক্ষীর গুলিতে মৃত্যু হয় দুই হামলাকারীর।
এই ঘটনায় শেক্সপিয়র সরণি থানায় দু’টি মামলা দায়ের হয়। একটি ষড়যন্ত্র ও বলপূর্বক অনুপ্রবেশের, অন্যটি খুনের। দু’টি ঘটনায় গোয়েন্দারা ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন নাবালিকা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সকলেই জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
খুনের মামলাটিতে মূল অভিযুক্ত মমতা অগ্রবাল-সহ তাঁর দুই দেহরক্ষী গ্রেফতার হয়। মমতা ওই বাড়িতেই থাকতেন। জমির দালাল এবং ওই বাড়ির বাসিন্দা রতনলাল নাহাটার দেখভাল করতেন। তাঁর নিরাপত্তায় সব সময়ে থাকতেন দুই রক্ষী সফিক আহমেদ (পাপ্পু) ও প্রমোদ সাউ। পুলিশ জানায়, বর্তমানে তাঁরা জামিনে মুক্ত থাকলেও আদালতের নির্দেশে শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকায় ঢুকতে পারেন না।
অন্য মামলায় ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রী পরাগ মজমুদার, শেক্সপিয়র সরণি থানার সাসপেন্ড হওয়া এসআই নূর আলি, পিনাকেশ দত্ত, আইনজীবী সামির রিয়াজ, আইনজীবী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজেশ দামানি-সহ আরও ১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দু’টি মামলাতেই পুলিশ নির্ধারিত সময়ে চার্জশিট দিয়েছেন। তাতে পলাতক হিসেবে নাম রয়েছে অরূপ দেবনাথ ও সুমন পাত্রের। জামিনে মুক্ত হয়েই তাঁর সাসপেনশন তুলে নিতে লালবাজারে আবেদন করেন নূর আলি। ওই এসআই সব জানতেন বলে চার্জশিটে জানিয়েছিল পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মূল খুনের মামলাটি বিচার শুরুর অপেক্ষায়। অপরটিতে চার্জশিট পেশের পরে এখনও চার্জ গঠন হয়নি। মামলায় অভিযুক্ত দু’জন নাবালিকাও আছে। পুলিশ জানায়, তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
অন্য দিকে, মঙ্গলবার ৯এ শর্ট স্ট্রিটের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান ওই ঘটনায় নিহত প্রসেনজিৎ দে এবং পিকলু আচার্যের পরিবারের সদস্যেরা। তাঁরা দাবি করেন, পাড়ুই কাণ্ডে নিহতদের মতো এ ক্ষেত্রেও মৃত নিরাপত্তারক্ষীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মৃত পিকলু আচার্যের বাবা এ দিন ওই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, কাজ আছে বলে তাঁর ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে এনেছিলেন অরূপ। অথচ পুলিশ তাঁকেই গ্রেফতার করছে না।
যে বাড়িকে কেন্দ্র করে সে দিনের ঘটনা, এখন তার সামনে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারা থাকে। অপরিচিত কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। স্থানীয়েরা জানান, ওই বাড়িতে এখনও থাকেন রতনলাল নাহাটা। তিনি এখন পুরো সুস্থ। স্থানীয়দের অভিযোগ, মমতা অগ্রবালের আত্মীয়েরা মাঝেমাঝে সেখানে আসছেন। বাড়িটি বিক্রিরও চেষ্টা করছেন তাঁরা। তবে আদালতের নিষেধ থাকায় এলাকায় ঢুকতে পারেন না মমতা। এক পুলিশকর্তা এ দিন বলেন, “কেউ ওই বিতর্কিত বাড়ি বিক্রি করতে পারবেন না। আদালতের নির্দেশ মতোই বিতর্কিত জমিটিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হয়েছে।”