Dengue

দায়ে পড়ে নিজেদের বাঁচাতে পথে বাসিন্দারাই

মঙ্গলবার সকালে বিধাননগর পুর এলাকার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বাগুইআটির জনপদ, জর্দাবাগান এবং হাতিয়াড়া রোডে বাসিন্দারা পথে নেমে মশার তেল স্প্রে, ব্লিচিং ছড়ানোর কাজ করলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বার্তাও দেন তাঁরাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১৫
Share:

এলাকায় ব্লিচিং পাউডার ছড়ালেন বাসিন্দারা। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

গত কয়েক বছর ধরে মশা ও মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধিতেও হুঁশ ফিরছে না প্রশাসনের— এই অভিযোগ তুলে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে পুরসভার উপরে ভরসা না রেখে পথে নামলেন বাসিন্দারাই।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে বিধাননগর পুর এলাকার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বাগুইআটির জনপদ, জর্দাবাগান এবং হাতিয়াড়া রোডে বাসিন্দারা পথে নেমে মশার তেল স্প্রে, ব্লিচিং ছড়ানোর কাজ করলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বার্তাও দেন তাঁরাই। অভিযোগ, ওই ওয়ার্ডে ৩৫ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও হুঁশ ফেরেনি পুর প্রশাসনের।

প্রশ্ন উঠেছে, শুধুমাত্র প্রশাসন উদ্যোগী হলেই কি এই ধরনের রোগ প্রতিরোধ সম্ভব? বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় জ্বর হলে পুরসভা পদক্ষেপ করছে না। এমনকী ডেঙ্গি রোগের তথ্য গোপন করছে। এতে আতঙ্ক বাড়ছে এবং পুরসভার উপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন বাসিন্দাদের একাংশ।

Advertisement

স্থানীয় কংগ্রেস নেতা সোমেশ্বর বাগুই বলেন, ‘‘পুজোর পর থেকে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে পুরসভার ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। এলাকায় জ্বরের সংক্রমণ বেড়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। সেই তথ্যও মানতে চাইছে না পুরসভা। এতে আতঙ্ক বাড়ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, বার বার বলেও কোনও কাজ না হওয়ায় বাসিন্দারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে পথে নেমেছেন।

যদিও বাসিন্দাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘বাসিন্দারা যখন পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, নিশ্চিত ভাবেই কিছু সারবত্তা রয়েছে। অভিযোগ দ্রুত খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে। তবে শুধু একটি এলাকা নয়, এ ভাবে সর্বত্র বাসিন্দারা এগিয়ে এলে সচেতনতা যেমন বাড়বে, তেমনই রোগ প্রতিরোধও সম্ভব হবে।’’ প্রণয়বাবু জানান, ইতিমধ্যেই এলাকার বেশ কয়েকটি ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, কোচিং সেন্টারের প্রতিনিধিরা মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছেন। তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতে মশার তেল, ব্লিচিং দেওয়া হয়েছে।

তবে বাসিন্দাদের ক্ষোভ, এই প্রচেষ্টা শুরু হতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। পুরসভার সূত্রে খবর, এ বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিধাননগর পুর এলাকায় এনএসওয়ান পজিটিভের সংখ্যা কমবেশি ৮০০। ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা কমবেশি ৬০। মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের।

পাশাপাশি, বেশ কিছু এলাকা থেকে নতুন করে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার খবর এসেছে পুরসভার কাছে। যেমন এফ ই ব্লকে এক শিশুর জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। তেমনই কেষ্টপুরের কয়েকটি জায়গা, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকেও জ্বরের সংক্রমণের খবর এসেছে। এতে চিন্তা বেড়েছে পুর প্রশাসনের।

পুরকর্তাদের একাংশের কথায়, মশার উৎসই মিলছে না যে সব জায়গায়, সেখানেও জ্বর হচ্ছে, কিন্তু কী ভাবে, তা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।

যদিও পুরকর্মীদের একাংশের অনুমান, সমীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, যাঁদের এনএসওয়ান পজিটিভ, কিংবা যাঁরা মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হলেও তুলনায় সুস্থ রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও সচেতনতার অভাব রয়ে গিয়েছে। মশারি ব্যবহার করা, জমা জল সরিয়ে দেওয়ার কাজ হচ্ছে না। ফলে তাঁদের মাধ্যমে ফের মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

বাগুইআটিতে এ দিন মশাবাহিত রোগ ঠেকাতে বাসিন্দাদের এই প্রচেষ্টায় তাই আশান্বিত পুরসভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন