লরির মুক্তাঞ্চল রাতের রেড রোডও

লালবাজার বলছে, রাত ১০টার আগে রাস্তায় লরি নামা বারণ। কিন্তু সেই নিয়ম কাগজে-কলমেই আটকে। তা শোনে কে! হাওড়া সেতুর মুখে কর্মরত এক ট্র্যাফিক কনস্টেবল জানাচ্ছেন, রাত ৯টার পরেই লরির চাপ বাড়তে থাকে।

Advertisement

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১৩:০০
Share:

অবাধে: আইন ভেঙে লরি হাজির রেড রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

রাতের শহর, তুমি কার?

Advertisement

জবাব একটাই, আইনভাঙা উন্মত্ত লরির। যারা নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে ছুটে চলে রাজপথে। কখনও তার শিকার হন গরিব ফুটপাথবাসী, কখনও বা অন্য গাড়ির সওয়ারি। একটা সময়ে দিনভর পোস্তা, বউবাজার কিংবা খিদিরপুরে রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকত সার সার লরি। রাত বাড়লে পথে নামত। কিন্তু এখন সে পাটও চুকেছে। সন্ধ্যা গড়ালেই লরির দাপাদাপি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে কলকাতা। আর তার জেরে নাভিশ্বাস উঠছে শহরবাসীর।

Advertisement

ঘড়ির কাঁটায় ১০টা

লালবাজার বলছে, রাত ১০টার আগে রাস্তায় লরি নামা বারণ। কিন্তু সেই নিয়ম কাগজে-কলমেই আটকে। তা শোনে কে! হাওড়া সেতুর মুখে কর্মরত এক ট্র্যাফিক কনস্টেবল জানাচ্ছেন, রাত ৯টার পরেই লরির চাপ বাড়তে থাকে। বড়বাজার থেকে মালবোঝাই লরি চলে আসে একেবারে মহাত্মা গাঁধী রোড ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে। সেগুলিকে আটকে রাখারও উপায় নেই, কারণ তা হলে যানজটে জেরবার হয়ে যাবে এলাকা। ফলে বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিতে হয় লরিকে। ওই কনস্টেবলের আক্ষেপ, ‘‘আমরা আটকে কী করব? বন্দোবস্ত সব তো উপরতলায়।’’

কেন নয় ১১টা

ট্র্যাফিক দেখভালের দায়িত্বে এখন রয়েছেন কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ১০টার পরে লরি ছাড়া যাবে, কবে থেকে এই নিয়ম? সদুত্তর মেলেনি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘আমি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তো এই নিয়ম দেখছি।’’ হাল আমলের পুলিশকর্তারাই শুধু নন, রাত ১০টায় লরি ছাড়ার নিয়মের শুরু কবে, বলতে পারেননি প্রাক্তন কর্তারাও। শহরবাসী বলছেন, অনেক রাত পর্যন্ত এখন কলকাতা জাগে। দোকানপাট খোলা থাকে, গাড়িঘোড়া চলে। তবুও কলকাতা পুলিশ লরি ছাড়ার ক্ষেত্রে সেই মান্ধাতা আমলের নিয়ম জারি রেখেছে। বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেন লরি ছাড়ার সময়সীমা ১১টা পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হবে না, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

দেখাই যাচ্ছে না নম্বর প্লেট। অবাধ্য লরি ধরা যাবে কী ভাবে? ছবি: রণজিৎ নন্দী

যত পরীক্ষা টর্চের আলোয়

রাত ৯টা বাজতে না বাজতে খিদিরপুরের দিক থেকে সার দিয়ে লরি উঠে পড়ে বিদ্যাসাগর সেতুতে। একদল পুলিশকর্মী টর্চ জ্বালিয়ে সেই সব গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করেন। তার পরে একসঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয় সব লরি। তাতেই গাড়ির জট হয়ে যায় সেতুতে। এ কারণেই রাতের বিদ্যাসাগর সেতু কার্যত বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যযাত্রীদের কাছে। লরির চাপে হামেশাই আটকে থাকে অ্যাম্বুল্যান্স, ছোট গাড়ি। আমজনতার প্রশ্ন, পুলিশ তো লরি ছেড়েই খালাস। কিন্তু তার চাপে যে সাধারণ যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠছে, তা দেখবে কে? সেতুর অন্ধকারে লরি দাঁড় করিয়ে কেন টর্চ জ্বেলে নথি পরীক্ষা করে পুলিশ, অন্ধকারের আড়ালে অন্য কোনও বন্দোবস্ত লুকিয়ে থাকে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।

রেড রোডেও লরি

দিনের বেলায় যে রাস্তা দিয়েবাস বা কোনও বড় গাড়িকে চলতে দেয় না পুলিশ, কলকাতার সেই কুলীন পথ রেড রোড দিয়েই রাতে অবাধে ছুটে চলে মালবোঝাই লরি।
শহরের যান ব্যবস্থা দক্ষ হাতে সামলানোর যে দাবি করে কলকাতা পুলিশ, একটু বেশি রাতে কেন তাঁদের উল্টো রূপ, প্রশ্ন শহরবাসীর। ওই রাস্তায় কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বলছেন, ‘‘লরি তো এখান থেকে ভুঁই ফুঁড়ে ওঠেনি। কী ভাবে রেড রোডে চলে এল, সেটা খুঁজতে হবে।’’ শহরের একাধিক ট্র্যাফিক কিয়স্ক পেরিয়ে কী ভাবে লরি চলে আসে রেড রোডে, সেটা রহস্য আমজনতার কাছেও।

জালে ঘেরা নম্বর প্লেট

যেমন বুনো ওল, তেমনই বাঘা তেঁতুল! ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি সফল করতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ক্লোজ্‌ড সার্কিট ক্যামেরা বসিয়েছে লালবাজার। উদ্দেশ্য একটাই, কোনও গাড়ি যেন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালাতে না পারে। পালালেও ক্যামেরার লেন্সে ভেসে ওঠা নম্বর প্লেট দেখে পুলিশ অভিযুক্ত গাড়ির হদিস পাবে। কিন্তু সেই গুড়ে বালি ঢেলেছে অধিকাংশ লরি। নম্বর প্লেট এমন ভাবে লোহার জাল দিয়ে মুড়ে দিয়েছে যে ক্যামেরায় ধরা পড়ারই উপায় নেই। এক লরিচালক বলছিলেন, ‘‘খিদিরপুরে বেশ কিছু দোকান আছে যারা জাল নামিয়ে নম্বর প্লেট আড়াল করে দেয়। খরচ পড়ে ১০০ টাকা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন