নোট-দর্শন কোথায়, এটিএম ঘিরে বিভ্রান্তি

পাঁচ-পাঁচটা দিন পেরিয়ে গিয়েছে। পেরিয়েছে প্রাথমিক দিশাহারা পরিস্থিতি। তবে ধৈর্যের পরীক্ষা শেষ হয়নি এখনও। শেষ হয়নি সাধারণ মানুষের হয়রানিও। সোমবার দিনভর শহর ও শহরতলি জুড়ে কোথাও দীর্ঘ সবুরে মেওয়া, থুড়ি, নোট ফলল, কোথাও আবার হাতে রইল কেবলই কার্ড। কোথাও বা সবুরের বাঁধ ভেঙে ঘটে গেল ভাঙচুরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৪
Share:

(ডানদিকে) টাকা না পেয়ে এটিএমের সামনে হতাশ তরুণী। (বাঁদিকে) কলকাতা পুরসভার সদর দফতরের পাশে পরপর বন্ধ বিভিন্ন ব্যাঙ্কের এটিএম। ছবি:দেবস্মিতা ভট্টাচার্য ও বিশ্বনাথ বণিক

পাঁচ-পাঁচটা দিন পেরিয়ে গিয়েছে। পেরিয়েছে প্রাথমিক দিশাহারা পরিস্থিতি। তবে ধৈর্যের পরীক্ষা শেষ হয়নি এখনও। শেষ হয়নি সাধারণ মানুষের হয়রানিও। সোমবার দিনভর শহর ও শহরতলি জুড়ে কোথাও দীর্ঘ সবুরে মেওয়া, থুড়ি, নোট ফলল, কোথাও আবার হাতে রইল কেবলই কার্ড। কোথাও বা সবুরের বাঁধ ভেঙে ঘটে গেল ভাঙচুরও।

Advertisement

বালি-বেলুড়-লিলুয়া অঞ্চলের বেশির ভাগ এটিএমেই রবিবার রাত বারোটা-সাড়ে বারোটা পর্যন্ত লাইন চোখে পড়েছে। টাকাও তুলেছেন অনেকেই। কিন্তু সোমবার সকাল থেকেই বেশির ভাগ এটিএমে ঝাঁপ বন্ধ। কোথাও বা লেখা, ‘টাকা নেই’। এ সবের জেরেই জিটি রোডের উপরে বেলুড় দমকল কেন্দ্রের উল্টো দিকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের কাচের দরজা ভাঙচুর করলেন দিশাহারা, ক্ষুব্ধ মানুষ।

সোমবার সকাল থেকেই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বৌবাজার, বিবাদী বাগ-সহ একাধিক অঞ্চলের এটিএমগুলিতে টাকা ছিল না। নিরাপত্তারক্ষীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, রবিবার সন্ধ্যায় শেষ বার টাকা এসেছিল। রাতে তা ফুরিয়ে যায়। সোমবার দুপুর দু’টো পর্যন্তও সে সমস্ত জায়গায় আর টাকা আসেনি। খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে অনেককে। গিরিশ পার্ক এলাকার এটিএম থেকে বেরিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘কার্ড নিয়ে সকাল থেকে এ-দিক সে-দিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। কোথাও যদি টাকা পাই। কিন্তু কোথাও টাকা নেই।’’ মানিকতলা বাজারের কাছে প্রায় পাশাপাশি তিনটি এটিএম রয়েছে। কিন্তু সব ক’টিই ফাঁকা।

Advertisement

একই ছবি দেখেছে দক্ষিণ কলকাতাও। টালিগঞ্জ, ভবানীপুর, গড়িয়াহা়ট, বালিগঞ্জ, কসবা, গোলপার্ক, ঢাকুরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার এটিএমগুলিতে সার দিয়ে ঝুলেছে ‘নো ক্যাশ’ লেখা বোর্ড। মধ্য কলকাতার পার্ক স্ট্রিট ও ধর্মতলা কিছুটা আশার আলো দেখালেও দীর্ঘ লাইন পড়েছে সেগুলিতেও।

উত্তর কলকাতাও খুব একটা আশাপ্রদ ছবি দেখাতে পারল না। রবিবার দমদমের বেশ কিছু এটিএমে দু’বার টাকা ভরা হয়েছিল। একেবারেই যাঁদের পকেট ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল, তাঁদের কেউ কেউ ২০০০ টাকা করে তুলে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। কিন্তু যাঁরা সেটুকুও পাননি, চরম বিপদে পড়েছেন তাঁরা।

সোমবার গুরু নানকের জন্মতিথি উপলক্ষে সমস্ত ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায়, আয়রন চেস্টের টাকা এটিএমেই ঢুকেছে বেশি করে। ব্যাঙ্কের কাউন্টারগুলিতে টাকা জোগানোর প্রয়োজন পড়েনি। তবে শহরের যে কোনও প্রান্তের এটিএমে টাকা ঢোকার খবর পাওয়া মাত্রই শয়ে শয়ে মানুষ এসে লাইন দিয়েছেন। আর খুব স্বাভাবিক ভাবেই একশো জনের পরে বাকিরা ফিরেছেন খালি হাতে। কারণ এক-একটি এটিএমের সর্বাধিক ধারণ ক্ষমতা মাত্র দু’লক্ষ টাকা। জনপ্রতি দু’হাজার টাকা হিসেবে তুলতে শুরু করলে, একশো জনের পরেই টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রের।

সোমবার যাঁরা টাকা তুলতে পেরেছেন তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, এটিএম থেকে টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা করা হলেও ২০০০ টাকা করেই উঠেছে সব এটিএমে। নগদ টাকার অভাবে শহরতলি এলাকায় যাঁরা বিপদে পড়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এ দিন কলকাতায় ঘুরে বেরিয়েছেন। অফিসপাড়ার এটিএমগুলিতে টাকার চাহিদা কিছুটা কম ছিল, কারণ এ দিন ব্যাঙ্ক-সহ সব সরকারি অফিসে ছুটি। বন্ধ ছিল নবান্নও। তা সত্ত্বেও বিকেল চারটে নাগাদ নবান্ন চত্বরের এটিএমে পুলিশকর্মী ও সাধারণ মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা গিয়েছে।

বস্তুত, এ দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় নগদের চাহিদার মুখে একাই লড়তে হয়েছে এটিএমগুলিকে। কিন্তু কখনও যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনও টাকা-হীন মেশিন, কখনও আবার টাকা ঢোকার পরে মুহূর্তের মধ্যে খালি হয়ে যাওয়া— এই সমস্যার চক্করে হার মানল এটিএমের লড়াই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন