auto

উত্তর থেকে দক্ষিণ, অটোর ইচ্ছেই শেষ কথা

নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, রুটের পুরো রাস্তা যেতে চান না বেশির ভাগ চালকই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৫
Share:

যেমন খুশি: অটোর সংখ্যা কম নয়। কিন্তু নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, রুটের পুরো রাস্তা যেতে চান না বেশির ভাগ চালকই। মঙ্গলবার, উল্টোডাঙা মোড়ে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

রুট ভেঙে টুকরো টুকরো করা হচ্ছে। আর সেই কাটা রুটেই চলছে অটোচালকদের জুলুমবাজি।

Advertisement

অটোর জুলুম বন্ধ করার বিষয়ে নেতা, মন্ত্রী বা পুলিশের তরফে আশ্বাসবাণী প্রায়ই মেলে। কিন্তু উত্তর থেকে দক্ষিণ— অটোর জুলুম কমার কোনও লক্ষণই নেই। অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে এই জুলুমবাজি দিনদিন বাড়ছে। বেশি ভাড়া নিয়ে অটোচালকদের জুলুমবাজির সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘কাটা রুট’ নিয়ে দাদাগিরিও।

যেমন, শোভাবাজার-উল্টোডাঙা রুট। অভিযোগ, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই রুটও ভাঙতে থাকে। তখন শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন থেকে সরাসরি উল্টোডাঙা পর্যন্ত যেতে চান না অধিকাংশ অটোচালকই। শোভাবাজার থেকে হাতিবাগান অথবা খন্না পর্যন্ত গিয়ে ফের নতুন অটো নিয়ে উল্টোডাঙা যেতে হয়। এক নিত্যযাত্রী বলেন, ‘‘যে সমস্ত অটো সোজা উল্টোডাঙা যায়, তারা অস্বাভাবিক বেশি ভাড়া চেয়ে বসে। ১০ টাকা ভাড়া বেড়ে কখনও হয় ১৫ টাকা, কখনও বা ১৮।’’

Advertisement

শুধু শোভাবাজার-উল্টোডাঙা রুটই নয়, অটোর এই কাটা রুট ও বেশি ভা়ড়া নিয়ে সমস্যা চলছে গোটা শহর জুড়েই। যাত্রীদের অভিযোগ, দক্ষিণের টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুটে টানা না গিয়ে টালিগঞ্জ থেকে রানিকুঠি অথবা গাছতলা পর্যন্ত যায় অটো।

গোলপার্ক-গড়িয়া রুটে সন্ধ্যা হলেই অটোচালকদের বড় অংশই যাদবপুর বা বাঘা যতীনের বেশি দূরত্ব যেতে চান না। গড়িয়ার দিক থেকেও অটো চলে একই নিয়মে।

টালিগঞ্জ থেকে বেহালা চৌরাস্তা এবং টালিগঞ্জ থেকে কবরডাঙা রুটেও অটোচালকদের দাপট অব্যাহত। তারাতলা থেকে জোকা পর্যন্ত পথেও তিন-চারটি কাটা রুটে অটো চলে। বেহাল ডায়মন্ড হারবার রোডে বাস অপ্রতুল হওয়ায় অটোই রাস্তা শাসন করে।

তারাতলা থেকে রামনগর রুটে রাত আটটার পরে ভা়ড়া এক লাফে ১৭ টাকা থেকে ২০ টাকা হয়ে যায়।

চাঁদনি চক থেকে পার্ক সার্কাস-লোহাপুল রুটেও চালকদের একাংশ বাটা মোড় বা নোনাপুকুরের বেশি যেতে চান না। এ ছাড়া, তারস্বরে মিউজিক সিস্টেম এবং এলইডি আলোর উপদ্রব তো আছেই।

কাটা রুট নিয়ে বিরোধিতা করায় অটোচালকের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি। অভিযোগ, গড়িয়া-গোলপার্ক রুটে ওই তরুণী যাত্রী কাটা রুটের প্রতিবাদ করায় এক অটোচালক তাঁকে নিগৃহ করেন। পরে পুলিশ সেই চালককে গ্রেফতার করে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘গড়িয়া-গোলপার্ক রুটে কাটা রুটে অটো চালানোর বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। ওই রুটের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশকর্মীদের রাখা হয়েছে। যাত্রী-প্রত্যাখ্যান করলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, যাদবপুরে ১০ জন অটোচালকের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।

তবে অটোযাত্রীদের মতে, পুলিশের এই ধরপাকড় বিচ্ছিন্ন ঘটনা। পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালালে অটোচালকদের এই জুলুমবাজি কিছুটা অন্তত কমত। কিছু দিন আগে সল্টলেক-উল্টোডাঙা রুটের যাত্রীরা ভাড়ার জুলুমবাজি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। ওই রুটের যাত্রীদের অভিযোগ, অবস্থার কিছুমাত্র উন্নতি হয়নি। ওই রুটে যাত্রীদের জন্য অভিযোগ-বাক্স বসানোর কথা ছিল। কিন্তু সেটা এখনও বসানো হয়নি।

উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার অটো ইউনিয়নের একাধিক নেতা বলেন, “অটোচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে আমরা তাঁদের রুট থেকে দু’তিন দিনের জন্য বসিয়ে দিই।” অটোর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘অটো নিয়ে আমাদের অভিযোগ জানানোর সেল আছে। এ ছাড়া, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকেও অভিযোগ জানানো যায়। অভিযোগ পেলেই তা খতিয়ে দেখা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন