হুঁশ ফিরেছে কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের

এ দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওষুধের স্টোরে আগুন লেগে পুড়ে যায় পাঁচ কোটি টাকার ওষুধ। তার পরেই সমস্ত ওষুধ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৫৩
Share:

যুদ্ধ: ফার্মাসি বিভাগের ওষুধের স্টোরে আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। বুধবার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

কখনও এসএসকেএমের রোনাল্ড রস ভবন, কখনও আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। গত তিন বছরে এমন একাধিক
সরকারি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের জেরে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। আশঙ্কাজনক রোগীকে সরানো হয়েছে এক ভবন থেকে আর এক ভবনে। কিন্তু তার পরেও অগ্নি-সুরক্ষা বিধি মানার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলি সচেতন হয়েছেন কি না, বুধবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগুন লাগার পরে সেই গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেল।

Advertisement

এ দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওষুধের স্টোরে আগুন লেগে পুড়ে যায় পাঁচ কোটি টাকার ওষুধ। তার পরেই সমস্ত ওষুধ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন কর্তৃপক্ষ। মুখ থুবড়ে পড়ে মেডিসিন, কার্ডিওলজি এবং হেমাটোলজি বিভাগের পরিষেবা। এ দিনের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, হাসপাতালের নিজস্ব অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার কী হাল?

রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, একাধিক সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নি সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। একাধিক জায়গায় আগুন নেভানোর স্প্রে থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। অনেক জায়গায় জলের পাইপ থাকলেও সেগুলি অকেজো। পাশাপাশি অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রগুলি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা কতটা প্রশিক্ষিত, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।

Advertisement

সরকারি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড

কবে কোথায় উৎস

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ আর জি কর সেন্ট্রাল প্যাথলজি ল্যাবরেটরি

২৭ অগস্ট, ২০১৬ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ভিআইপি কেবিন

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ আর জি কর জরুরি বিভাগের তিন তলায়

২১ নভেম্বর, ২০১৬ এসএসকেএম রোনাল্ড রস ভবনের লাইব্রেরি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ন্যাশনাল মেডিক্যাল রামমোহন রায় বিল্ডিংয়ের শৌচাগার

৩ অক্টোবর, ২০১৮ কলকাতা মেডিক্যাল সেন্ট্রাল ফার্মাসি

শেষ তিন বছরে কলকাতায় সরকারি হাসপাতালে প্রায় পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে আগুন লেগেছিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিভাগে। ওই ওয়ার্ডের পাশের সিঁড়ি ছিল বন্ধ। একমাত্র সিঁড়ি দিয়ে তাড়াহুড়োয় নামতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন একাধিক প্রসূতি। অভিযোগ উঠেছিল, হাসপাতালের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ঠিক করতে গিয়ে গোটা ভবনের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার দিকে নজর দেননি কর্তৃপক্ষ। মাসখানেক আগে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে আগুন লাগে। তখনও প্রশ্ন উঠেছিল অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার নজরদারি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পূর্ত দফতরের দ়ড়ি টানাটানিতে হয়রানির শিকার হন তাঁরা। যদিও এ দিনের ঘটনার পরে পূর্তকর্তারা জানান, হাসপাতাল ভবন এবং চত্বর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থার নজরদারির দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, আগুন নেভানোর যন্ত্রগুলিতে নিয়মিত নজরদারি চলে। অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থায় ত্রুটির অভিযোগ মানতে চাননি স্বাস্থ্যকর্তারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন