লাল বাতি জ্বলছিল, তবু বাগ মানেনি অটো

ভোরের অটো ধরে কলেজের পথে রওনা দিয়েছিলেন জয়পুরিয়া কলেজের ছাত্রী পূজা পাল (১৮)। দিন শুরুর শান্ত রাস্তায় হঠাৎ বিকট আওয়াজ। পরের মূহূর্তেই দেখা গেল, রাস্তার উপরে দুমড়ানো অটো থেকে বেরিয়ে আসছে রক্ত, ছড়িয়ে রয়েছে ব্যাগ, চপ্পল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫২
Share:

দুর্ঘটনার পরে সেই অটো। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র

ভোরের অটো ধরে কলেজের পথে রওনা দিয়েছিলেন জয়পুরিয়া কলেজের ছাত্রী পূজা পাল (১৮)। দিন শুরুর শান্ত রাস্তায় হঠাৎ বিকট আওয়াজ। পরের মূহূর্তেই দেখা গেল, রাস্তার উপরে দুমড়ানো অটো থেকে বেরিয়ে আসছে রক্ত, ছড়িয়ে রয়েছে ব্যাগ, চপ্পল। সিগন্যাল না মানা বেপরোয়া সেই অটো-দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল সদ্য প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া পূজার। আহত অটোচালক এবং আরও তিন জন। শুক্রবার সকালে গৌরীবাড়ি মোড়ের কাছে ঘটেছে এই দুর্ঘটনা।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন ভোর সওয়া ছ’টা নাগাদ বারাসত-হাওড়া রুটের একটি বাস উল্টোডাঙার দিক থেকে এসে খন্নার দিকে মুখ করে গৌরীবাড়ি মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিল। রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট এবং অরবিন্দ সরণির ওই মোড়ে মানিকতলার দিক থেকে এগিয়ে আসছিল বেলেঘাটা আইডি-আরজিকর রুটের এই অটো। সিগন্যাল সবুজ হলে বাসটি এগিয়ে যায় নিজের গন্তব্যের দিকে। আর অটোটি ওই মোড়ে এসে লাল সিগন্যাল দেখেও না দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড গতিতে বাসটির পিছনের দরজায় সোজা ধাক্কা মারে। এর ফলে বাঁ দিকে কাত হয়ে উল্টে যায় অটোটি।

অটোর সামনে চালকের পাশের আসনেই বসেছিলেন পূজা। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অটোচালক জয়দীপ নস্করকে। অজয় সরকার, ইতি সরকার এবং শিব সোঁয়াই নামের তিন যাত্রী ছিলেন অটোর পিছনের আসনে। তাঁদেরও সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করা হয় ওই হাসপাতালে। অজয় ও ইতি স্বামী-স্ত্রী। শিবকে প্রাথমিক চিকিত্সার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কপালে, নাকে এবং পায়ে গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ইতি। অজয়ের বাঁ হাত ভেঙে গিয়েছে। পাঁজরে এবং মস্তিষ্কে আঘাত নিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে অটোচালক জয়দীপ নস্করকে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত পূজা পাল বেলেঘাটার বাসিন্দা। জয়পুরিয়া কলেজের প্রাতঃবিভাগে বাণিজ্য শাখার ছাত্রী ছিলেন তিনি। প্রতি দিন ভোরে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সামনে থেকে অটো ধরে কলেজ যেতেন। পূজার মৃত্যুর খবর পেয়েই আরজিকরে পৌঁছে যান তাঁর বন্ধুরা। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্তও ফোনে কথা হয়েছে যে বন্ধুর সঙ্গে, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাঁর এই পরিণতি দেখে আতঙ্কিত তাঁরা।

হাসপাতালে অজয়বাবুর আট বছরের ছেলে জিৎ বলে, ভোরে বাড়ির মোবাইলে মায়ের ফোন আসে। ‘‘আমার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে’’— মায়ের কাঁপা গলায় এটুকুই শুনতে পায় সে। তার পরেই ফোন কেটে যায়। বেলেঘাটার বাসিন্দা এই দম্পতি প্রতি দিনই ওই রাস্তা দিয়ে বাগবাজারে যান। অজয়বাবু বাসের কর্মচারী। মাও কাজে বেরোন। বাবা-মা যে রোজ ওই রুটে যাতায়াত করে তা জিৎ-এর জানা ছিল। তাই কালবিলম্ব না করে সে আরজিকর হাসপাতালের সামনে মাসির বাড়িতে ফোন করে। সেই ফোন পেয়ে আত্মীয়রা ছুটে যান হাসপাতালে।

দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অটোটি দেখে পুলিশের অনুমান, চালকের বেপরোয়া মনোভাবের জন্যই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বাসটি সিগন্যাল মেনেই চলছিল। সিগন্যাল অমান্য করে এগিয়ে গিয়ে অটোচালকই বিপদে ফেলেছেন সকলকে। চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, শরীরের বাইরে তেমন গুরুতর কোনও আঘাত ছিল না পূজার। তবে যে ভাবে অটোটির সামনের অংশটি বাসের পিছনের দরজায় ধাক্কা মেরেছে, তাতে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় ওই পড়ুয়ার।

পুলিশের মতে, পিছনের আসনে থাকায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন বাকি তিন যাত্রী। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ ওই বাসটিও থানায় আটক করে রেখেছে। তবে বাসচালক ও খালাসি কাউকেই আটক কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন