অটোচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখছেন সুজিতকুমার মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
রাত পৌনে ৮টা। শোভাবাজার মোড়ে থিকথিক করছে ভিড়। অফিস ফেরত যাত্রীদের সঙ্গে জুড়েছেন হাতিবাগান বাজারে চলতি সপ্তাহে শুরু হওয়া পুজোর বাজারে আসা লোকজন। ভিড় আরও বাড়ছে অটোচালকদের ‘অবদানে’। গাড়ি ফাঁকা থাকলেও যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে নারাজ তাঁরা। হয় ভাড়া বেশি লাগবে, নয়তো চেনা যুক্তি, ‘‘ওই পথে যাব না!’’
বুধবারও ‘অটো দাক্ষিণ্যে’র অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলাম কিছুক্ষণ। ভিড়ের মধ্যে পিছনে একজন যাত্রী নিয়ে আসছিলেন এক অটোচালক। বাকি আসন ফাঁকা! ‘‘উল্টোডাঙা যাবেন?’’ যে-ই প্রশ্ন করছেন, ঘাড় নেড়ে ‘না’ বলছেন চালক। শোভাবাজার মোড়ের কাছে অটোটিকে আটকালেন এক ট্র্যাফিক পুলিশ। সামনে দাঁড়ানো যাত্রীদের ডেকে বলতে শুরু করলেন, ‘‘উল্টোডাঙা যাবে, উঠে পড়ুন। ১২ টাকা ভাড়া।’’ অটোচালকের আকুতি, ‘‘ওই দিকেই তো যাচ্ছি স্যার!’’ ধমক দিয়ে পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘ওই পথেই যখন যাচ্ছিস, নিয়ে যা! সব দেখেছি। একদম ঘাটাবি না।’’ এর পরে যাত্রীদের বললেন, ‘‘আমার নম্বর রাখুন। উল্টোডাঙা পর্যন্ত নিয়ে না গেলে, ফোন করবেন। মজা দেখাব।’’ পুলিশকর্মীর কাজে অভিভূত তিন যাত্রী দ্রুত উঠে পড়লেন অটোয়।
সেই সুখ-যাত্রা অবশ্য স্থায়ী হল না। উল্টোডাঙার দিকে দু’পা এগিয়েই অটো দাঁড়িয়ে গেল। চালক বললেন, ‘‘আমি কিন্তু হাতিবাগান পর্যন্তই যাব। বাড়ি যাব। উল্টোডাঙা যাব না।’’ আপত্তি করলেন যাত্রীরা। মারমুখী কয়েক জন বললেন, ‘‘তা হলে পুলিশের সামনে বললে না কেন? আমাদের পৌঁছে দিতেই হবে।’’ অটোচালক ১২ টাকা ভাড়ায় যেতে নারাজ। তাঁর ২৫ টাকা চাই! শেষে সমাধান দাঁড়াল, উল্টোডাঙা না গেলে শোভাবাজার মোড়ে ওই পুলিশকর্মী কাছে গিয়েই অটোচালককে যাত্রী নামাতে হবে। চালক রাজি হলেন। সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গাড়ি চলল শোভাবাজার। তবে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর সামনে নয়, খানিক আগেই গাড়ি ফাঁকা করে দিলেন চালক। শেষ রক্ষা অবশ্য হল না। এক যাত্রী ওই ট্র্যাফিক পুলিশকে গিয়ে বললেন, ‘‘স্যর আমাদের নামিয়ে দিয়েছে। আপনি গাড়ির নম্বরটা লিখুন।’’ নম্বর লিখে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন পুলিশকর্মী। এ বার অন্য অটোয় উল্টোডাঙার দিকে রওনা দিলেন ওই যাত্রীরা।
জানা গেল, ওই ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর নাম সুজিতকুমার মণ্ডল। জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে বুধবার তিনি শোভাবাজার মোড়ে ডিউটি করছিলেন। বললেন, ‘‘শোভাবাজার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ আসছিল। এখানে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।’’ জানালেন, জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অটোর দৌরাত্ম্য দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে চটজলদি লাইসেন্স বাতিলও করা হবে। সমস্যা হাতের বাইরে দেখলে ঘটনাস্থল থেকেই অটোচালকদের আটক করতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘ওই গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। রুটে দেখলেই গ্রেফতার করা হবে চালককে।’’
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘পুজোর আগে সব রাস্তায় কড়া ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। কোনওরকম বেআইনি কাজ বরদাস্ত হবে না।’’ তবে পুলিশের এই কড়া নজরদারি আদৌ কাজে লাগবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে যাত্রীদের একটা বড় অংশই। এক যাত্রী বললেন, ‘‘শহরে অটো-রাজ সহজে থামানো যাবে না। পুলিশ না থাকলেই দেখার কেউ নেই।’’