বেলেঘাটায় বাইপাসের ধারে দাঁড়িয়েছিলেন এক যুবক। হঠাৎই বেপরোয়া ভাবে তাঁর পায়ের উপরে অটোর চাকা তুলে দেন এক চালক। এক বার নয়, দু’বার। প্রতিবাদ করলে চালক ওই ব্যক্তিকে ঘুষিও মারেন বলে অভিযোগ।
শহরের রাস্তায় অটো-দৌরাত্ম্যের নজির বহু রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলের এই ঘটনা তাতে নয়া সংযোজন। অটোর ধাক্কায় আহত ওই যাত্রীর নাম অতনু মণ্ডল। বাড়ি হাওড়ায়। ঘটনায় অভিযুক্ত চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর নাম রাজু মণ্ডল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অতনুবাবু সল্টলেকের একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। বিকেলে তিনি অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময়ে বেলেঘাটা-শিয়ালদহ রুটের ওই অটোটি বেপরোয়া ভাবে এসে অতনুবাবুর পায়ের উপরে চাকা তুলে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠেন অতনুবাবু। তড়িঘড়ি চাকা নামিয়ে নিলেও গাড়ি ঘোরাতে গিয়ে ফের তাঁর পায়ের উপরে চাকা তুলে দেন চালক। অতনুবাবু এর প্রতিবাদ করলে চালক তাঁর মুখে ঘুষিও মারেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাটি দেখে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে যেতেই চম্পট দেন ওই অটোচালক। পরে অতনুবাবু বেলেঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার তদন্তে নেমে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ওই চালক নিয়ম ভেঙে গাড়ি ঘোরাচ্ছিলেন। তখনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অতনুবাবুর পায়ে চাকা তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসে বেপরোয়া অটো চালানোর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ৫ অগস্ট ঠাকুরপুকুরে চলন্ত অটোয় এক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। সম্মান বাঁচাতে চলন্ত অটো থেকে ঝাঁপও দিয়েছিলেন ওই মহিলা। ১৮ অক্টোবর প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে ভাড়া নিয়ে বচসার জেরে এক মহিলাকে মারধর করা হয়। ৩ নভেম্বর সিঁথিতে বেপরোয়া অটো চালানোর প্রতিবাদ করে প্রহৃত হন স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা। তার পরের দিন ফের ভাড়া নিয়ে বচসার জেরে এক ছাত্রীকে নিগ্রহ করা হয়। ঘটনার প্রতিবাদ করলে আর এক যাত্রীকে মারধরও করা হয়েছিল।
পুলিশের দাবি, অটোচালকদের এই বেপরোয়া মনোভাব ঠেকাতে নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করা হয়। করা হয় কাউন্সেলিংও। তাতে এ ধরনের অপরাধে কিছুটা লাগাম টানা গেলেও পুরোপুরি কমানো যায়নি। এক পুলিশকর্তা বলেন, “শুধু কর্মশালায় হবে না। আইনের দাওয়াইও রাখতে হবে। গত কয়েক মাসে অটো-দৌরাত্ম্যের ঘটনায় সিঁথি বাদে সব জায়গাতেই অভিযুক্তকে তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হয়েছে।”
এ দিনই গার্ডেনরিচ থানা এলাকার তারাতলা রোডে দু’টি অটোর সংঘর্ষে মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ার। পুলিশ জানায়, একটি অটো তারাতলা রোড ধরে যাচ্ছিল। হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্য অটোটিকে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। অটো দু’টির যাত্রীরা প্রত্যেকেই অল্পবিস্তর চোট পান। সাবিত্রী দেবী (৫৮) নামে এক যাত্রী প্রথম অটোটি থেকে ছিটকে বাইরে পড়ে যান। মাথায় গুরুতর জখম-সহ পিজি নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সাবিত্রী দেবী রামনগর লেনের বাসিন্দা। চালকদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে অটো দু’টিও।