দুই গোষ্ঠীর কোন্দলে বন্ধ অটো চলাচল

তৃণমূল সূত্রের খবর, বছরখানেক ধরেই গড়িয়া-গোলপার্ক (২৮ নম্বর) রুটের ইউনিয়নের নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০০:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে শনিবার রাত থেকে রবিবার দিনভর বন্ধ থাকল গড়িয়া-গোলপার্ক রুটের অটো পরিষেবা। এর জেরে চূড়ান্ত ভোগান্তির মুখে পড়তে হল নিত্যযাত্রীদের। দুই গোষ্ঠীর মারপিটে গুরুতর জখম হলেন টিটো নামের এক অটোচালক। বর্তমানে ওই চালক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর, বছরখানেক ধরেই গড়িয়া-গোলপার্ক (২৮ নম্বর) রুটের ইউনিয়নের নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। অভিযোগ, শুধু ওই রুটই নয়, দক্ষিণ কলকাতার একাধিক রুটেই শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে বছরখানেক আগে দক্ষিণ কলকাতায় অটো ইউনিয়নের নেতৃত্ব বদল করে মেঘনাথ পোদ্দারের বদলে নিয়ে আসা হয় শুভাশিস চক্রবর্তীকে। কিন্তু শুভাশিসবাবু দক্ষিণ কলকাতার বাকি অটো রুটে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমাতে পারলেও বারবার চেষ্টা করে গড়িয়া-গোলপার্ক অটোরুটের পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে ব্যর্থ বলে দাবি ইউনিয়নের একাংশের।

ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের বিরোধী গোষ্ঠী বারবারই তোলা এবং গুণ্ডাগিরির অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভই হয়নি বলে অভিযোগ বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের। যদিও বিরোধী গোষ্ঠীর অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন শাসক গোষ্ঠীর নেতারা।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রুটে শাসক দলের অটোচালকদের একটি গোষ্ঠী প্রতিদিনের মতোই বাঘাযতীন মোড়ে বসে আড্ডা মারছিল। শনিবার সন্ধ্যায় সেখানে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতা দেবরাজ ঘোষের ঘনিষ্ঠ এক অটোচালক জয়ের সঙ্গে বিরোধী টুলটুল-গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ টিটো নামের এক অটোচালকের বচসা বাধে। বচসার মধ্যেই জয় তাঁর বন্ধুদের ফোন করে বাঘাযতীনে ডেকে আনেন। বাঘাযতীন মোড়ে দেবরাজ-ঘনিষ্ঠ ছেলেরা টিটোকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। এর পর একটি অটোয় টিটোকে তুলে নিয়ে গিয়ে ৪৫ বাসস্ট্যান্ডের মোড়ের একটি পেট্রোল পাম্পে ঢুকিয়ে বাঁশ এবং রড দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মার খেয়ে ওখানেই বেহুঁশ হয়ে পড়েন টিটো। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন।

এর প্রতিবাদেই শনিবার রাত থেকে টুলটুল-ঘনিষ্ঠ অটোচালকেরা রাস্তা অবরোধ করে মারধরকারী অটোচালকদের গ্রেফতারের দাবি জানাতে থাকেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পরে যাদবপুর এবং পাটুলি থানার পুলিশ অফিসারদের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠে যায়। কিন্তু রবিবার সকাল থেকে ফের ঘটনায় যুক্ত অটোচালকদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী-গোষ্ঠীর নেতারা। তাঁদের বিক্ষোভের জেরে রবিবার সকাল থেকে ফের বন্ধ হয়ে যায় ওই রুটের অটো পরিষেবা।

দুই থানার পুলিশ অফিসারেরা বারবার অনুরোধ করেও কোনও ফল হয়নি। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে এখনও অনড় তৃণমূলের ওই গোষ্ঠী। যদিও বিরোধী গোষ্ঠীর সব দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতা দেবরাজ ঘোষ এবং
তাঁর নেতা শুভাশিস চক্রবর্তী। দেবরাজের বক্তব্য, ‘‘টিটো নামের ছেলেটি আগে অটো চালাতেন। এখন সাট্টার ব্যবসা করেন। ওঁর অত্যাচারে বিরক্ত হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ওকে মারধর করেছেন। এর সঙ্গে অটো রুটের সম্পর্ক নেই। গুটিকয়েক অটো চালক বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন। ওঁদের সঙ্গে মানুষ নেই। খুব শীঘ্রই অবরোধ উঠে যাবে।’’ অন্য দিকে তৃণমূল-নেতা শুভাশিস চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘যাঁরা গাঁজা-মদ খেয়ে অটো চালাবে, সাট্টা-জুয়ার মতো অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাঁরা আমাদের দলের কেউ নন। আমরা পুলিশকে বলেছি, উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন