প্রতীকী ছবি।
দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মীকি হওয়ার গল্প ওঁদের অনেকেরই জানা। তাই নিজেদের শুধরে নেওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও সচেতন করতে পথে নামলেন ওঁরা। মঙ্গলবার বিশ্ব মাদক বিরোধী দিবসে মঞ্চ চোঙা লাগিয়ে, লিফলেট বিলি করে প্রচার করলেন।
ওঁরা— বিশ্বজিৎ, পূর্ণেন্দু, অভিষেক, প্রতাপ, অসীম-সহ আরও ১৫ জন। সকলেই এক সময়ে ছিলেন মাদকাসক্ত। নেশা না করলে যাঁদের দিন কাটত না। সংসারে অশান্তি থেকে বাড়ি-গাড়ি বিক্রি করে দেওয়া, মা-বাবাকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন। কয়েক মাস ধরে নেশামুক্তি কেন্দ্রে চিকিৎসার পরে আজ তাঁরা সুস্থ। তবে নিজেরা সুস্থ হয়েই বসে থাকেননি বালি, বেলুড়, লিলুয়া ও উত্তরপাড়ার যুবক থেকে প্রবীণ এই কুড়ি জন। একজোট হয়ে তাঁরা বানিয়েছেন ‘নেশামুক্ত মাদক বিরোধী মনস্ক যুবকবৃন্দ’।
এ দিন সংগঠনের তরফে বালিঘাট ৫৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে জিটি রোডের উপরে মঞ্চ বেঁধে প্রচার চালালেন তাঁরা। তারই ফাঁকে তিপান্ন বছরের ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘১০ বছর হল নেশা ছেড়েছি। দিনগুলির কথা ভাবলে আজও ভয় হয়। মদ রাস্তায় পড়ে থাকতাম। আজ আমি সুস্থ।’’ এক সময়ে ভাল রোজগার করলেও নেশাতেই কয়েক লক্ষ টাকা শেষ করছেন বলে জানান তিনি।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হেরোইনে বুঁদ হয়ে থাকতেন প্রতাপ প্রধান। কুড়ি বছরের ওই যুবক বলেন, ‘‘নেশার টাকার জন্য বাবা-মায়ের উপরে অনেক অত্যাচার করেছি। এক বছর আগে সুস্থ হয়ে ফিরেছি।’’ এখনও দুপুর তিনটে বাজলেই ইচ্ছা করে নেশা করতে, কিন্তু মনকে শক্ত রেখে টোটোর হ্যান্ডেল ধরে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে চোঙা ফুঁকে নেশা থেকে মুক্তির উপায় জানাচ্ছিলেন তেষট্টি বছরের পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। পেশায় অডিটর পূর্ণেন্দুবাবু মদ্যপানের জেরে দুটো গাড়ি, বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘নেশায় আসক্ত হওয়াটাও একটা অসুখ। তাই তা সারাতে পরিবারকেও উদ্যোগী হতে হবে। বাড়ির লোকের সহযোগিতা ছাড়া সুস্থ হওয়া অসম্ভব।’’
এ দিন পথচারীদের লিফলেট বিলির সময়ে নিজেদের ফেলে আসা জীবনের গল্প শোনাচ্ছিলেন অসীম ভদ্র ও অভিষেক রায়। তাঁরা জানান, এখন কেউ নেশায় আসক্ত শুনলেই তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ দেন। আর বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘নিজে ভাল হয়েছি, তাই অন্যকেও ভাল করতে চাই। আসলে মুক্ত মনই তো মুক্তির প্রথম সোপান।’’