ছেলের মৃত্যুর পরে মেয়েকে কোলে আঁকড়ে ধরিত্রীদেবী। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ
ছোট ছেলের খেলনা গাড়িটা খারাপ হয়ে গিয়েছে, তাই বাথরুমের সামনে বসে সেটা সারাচ্ছিলেন বাবা। তাঁকে সাহায্য করছিল আট বছরের ছেলে। কাছেই ঘুরে বেড়াচ্ছিল বছর দেড়েকের যমজ আরও দুই সন্তান। কয়েক মিনিট পরেই পাশের ঘরে থাকা মায়ের কোলে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বছর দেড়েকের ছোট্ট মেয়েটি। কিন্তু ভাই গেল কোথায়? কিছুই বলতে পারেনি সে।
এর পরেই ছুটে এসে ওই মহিলা দেখেন, বাথরুমে জল ভর্তি একটি বালতিতে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে তাঁর ছোট্ট ছেলেটা। পা দু’টি উপরে তুলে একনাগাড়ে ঝাপটে যাচ্ছে সে। পড়িমরি করে ছেলেকে বালতি থেকে বার করলেন বাবা। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে জানান। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ, মেটিয়াবুরুজ থানার ব্রাহ্ম সমাজ রোড এলাকায়। মৃত শিশুর নাম রাজগোপাল বেহারা (১ বছর ৩ মাস)। এই ঘটনায় শোকের ছায়া গোটা এলাকা জু়ড়ে।
পুলিশ জানিয়েছে, ব্রাহ্ম সমাজ রোডে একটি আবাসনে দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্সের কর্মী নারায়ণ বেহারা। রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে নারায়ণবাবু একটি খেলনা গাড়ি সারাচ্ছিলেন। দু’কামরার ছোট্ট ঘরে এমনিই ঘুরে বেড়ায় বাচ্চারা। সে দিনও রাজগোপাল ও তার যমজ বোন একসঙ্গে ছিল। হঠাৎই কোনও ভাবে দুর্ঘটনা ঘটে।
সোমবার নারায়ণবাবুদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মেয়েকে কোলে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন স্ত্রী ধরিত্রীদেবী। তিনি বলেন, ‘‘সব সময়ে ছেলেটাকে চোখে চোখে রাখতাম। সবাই আমরা বাড়িতে ছিলাম। একটু ক্ষণের জন্য অন্যমনস্ক হয়েছিলাম। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল!’’ বলেই আবার কোলে চেপে ধরলেন মেয়েকে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কুড়ি লিটার রঙের বালতির পুরোটা জলে ভর্তি ছিল না। সকলের সামনে দিয়েই শৌচাগারে গিয়েছিল রাজগোপাল। বাথরুমের কাছেই ছিলেন নারায়ণবাবু ও তাঁর বড় ছেলে নন্দগোপাল।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, বালতি থেকে উদ্ধার করার পরেও শিশুটি বেঁচে ছিল। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি। তখনও অবশ্য পুলিশে খবর দেয়নি মৃতের পরিবার। গোটা এলাকা ঘুরে মৃত্যুর শংসাপত্রের ব্যবস্থা করতে না পেরে রাত দেড়টা নাগাদ মেটিয়াবুরুজ থানায় খবর দেন নারায়ণবাবুরা। পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ছোট্ট রাজগোপালের যে খেলনা গাড়িটি মেরামত করছিলেন নারায়ণবাবু, সেটি অবশ্য শেষ করা হয়নি। গাড়িটা গেল কোথায়? সদ্য ভাইকে হারিয়ে চুপ করে গিয়েছে নন্দগোপাল। শুধু বলেছে, ‘‘ভাই যখন নেই, খেলনা দিয়ে আর কি হবে!’’