বিপজ্জনক: কামালগাজি মোড় থেকে মিশনপল্লি পর্যন্ত এমনই রাস্তার হাল। নিজস্ব চিত্র
কেন্দ্র থেকে জল প্রকল্পের টাকা আসেনি, সে কারণেই রাস্তা সারাই হয়নি। এমনই বলছেন জল প্রকল্প প্রস্তুতকারী কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) কর্তৃপক্ষ। যার জেরে গত ছ’মাস ধরে কার্যত মরণ ফাঁদ হয়ে রয়েছে কামালগাজি মোড় থেকে সোনারপুর স্টেশন পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তা। অভিযোগ, নিয়মের দোহাই দিয়ে ঠুঁটো হয়েরয়েছে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা। পূর্ত দফতরের দাবি, কেএমডিএ টাকা জমা দিলে তবেই তারা রাস্তা সারাইয়ে হাত দেবে।
কামালগাজি মোড় থেকে কুসুম্বা, কুমড়োখালি, শিমুলতলা হয়ে মিশনপল্লি পর্যন্ত পানীয় জলের বিশাল পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল ডিসেম্বরে। কেন্দ্রের অম্রুত প্রকল্পের ওই কাজ করছে কেএমডিএ। কাজ করতে গিয়ে পূর্ত দফতরের তৈরি ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের রাস্তা খুঁড়ে ফেলতে হয়। মাস কয়েকের মধ্যে সে কাজ চুকলেও রাস্তা মেরামত করা হয়নি। রাস্তার দু’ধারে জমা করা কাদা-মাটি পুরসভা সরালেও জায়গায় জায়গায় প্রায় ফুট খানেক গর্ত হয়ে রয়েছে|
ভাঙা রাস্তা বর্ষার শুরুতেই নরক সমান হয়ে গিয়েছে। জল জমে থাকা রাস্তার কোথায় গর্ত রয়েছে বা তার গভীরতা কত, তা বুঝতে পারেন না চালকেরা। এর জেরে বেশ কয়েক বার অটো উল্টে আহত হয়েছেন যাত্রী। চালকদের অভিযোগ, ভাঙা রাস্তার জন্য দ্রুত গাড়ির যন্ত্রাংশও ভাঙছে। মাস ছ’য়েক হল এই রাস্তায় বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমনকি বেশ কয়েকটি স্কুলের বাসও ভাঙা রাস্তার কারণে ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সমস্যায় পড়েছে অসংখ্য পড়ুয়া। বেগতিক বুঝে অটোও এক ধাক্কায় দু’টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। কাছাকাছি কবি নজরুল বা গড়িয়া মেট্রো স্টেশনে যাতায়াত করতে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাসিন্দাদের তা মেনেও নিতে হয়েছে।
অভিযোগ, অ্যাপ-ক্যাব চালকেরাও এই পথ এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেন। অবস্থা এমনই যে, কোথাও যাওয়া বা বাড়িতে কেউ আসা-দুটোই এখানকার বাসিন্দাদের কাছে বিভীষিকা। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “সোনারপুর স্টেশন রোডের অবস্থা গ্রামের রাস্তার থেকেও খারাপ। আত্মীয়কেও বাড়িতে আসতে বলতে বিব্রত বোধ করি।” গত কয়েক বছরে এই এলাকায় প্রচুর আবাসন তৈরি হওয়ায় জনসংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ নিয়ে পুরসভায় বারবার জানিয়েও লাভ না হওয়ায় এলাকায় পোস্টার পর্যন্ত পড়েছে।
সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লবকুমার দাস বলেন, “ওই রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পুরসভার নয়। পূর্ত দফতরের। বিষয়টি কেএমডিএ-কে জানানো হয়েছে। পুরসভার তরফে রাস্তায় ইট ফেলে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানান, প্রকল্পটিতে কেন্দ্র, রাজ্যের ভাগ রয়েছে। টাকা সময় মতো না আসার জন্য সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রেও এমনই ঘটেছে। তাঁর আশ্বাস, টাকা দ্রুত পাওয়া যাবে। টাকা পেলেই পূর্ত দফতর মেরামতির কাজে হাত দেবে। তবে কত দিনে সেটা হবে তা জানাতে পারেননি ওই আধিকারিক। কেএমডিএ এবং পুরসভার টানাপড়েনে এ ভাবেই কার্যত শিকেয় উঠেছে রাস্তা মেরামতি।