বাগড়ির ধোঁয়ার গহ্বরে আবার হলকা

অগ্নিদগ্ধ বাগড়ি মার্কেটের চারতলার কার্নিশে বারবার বসার চেষ্টা করছিল সাদা রঙের লক্ষ্মীপ্যাঁচাটা। পারল না।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৮
Share:

ধোঁয়া-আগুন। —নিজস্ব চিত্র।

অগ্নিদগ্ধ বাগড়ি মার্কেটের চারতলার কার্নিশে বারবার বসার চেষ্টা করছিল সাদা রঙের লক্ষ্মীপ্যাঁচাটা। পারল না। আগুনের তাপ এবং কালো ধোঁয়ায় হাঁসফাঁস করতে করতে উল্টো দিকে মেহতা বিল্ডিংয়ের কার্নিশে বসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। তার পর আরও একবার ডানা ঝাপটে পুরনো কার্নিশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করল। পারল না এ বারও।

Advertisement

সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাগড়ির আগুনের সঙ্গে দমকলের লড়াই দেখতে দেখতে মনে হল, ওই নিশাচর পাখির থেকে খুব আলাদা নয় অবস্থাটা।

মেহতা বিল্ডিংয়ের চারতলা থেকে বাগড়ি মার্কেটের পাঁচতলার একটি ঘর লক্ষ্য করে এমনিতে এক নাগাড়ে হোস পাইপ তাক করে রেখেছিলেন দমকলকর্মীরা। ক্যানিং স্ট্রিটের ফুটপাত থেকে লড়াই চালাচ্ছিল দমকলের আরেকটি দল। ‘গেট ডি’ এর কাছে দোতলার একটি ঘরে জানলার ফাঁক দিয়ে জলের পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে। সে ভাবে কোথাও কোনও ব্যস্ততা ছিল না। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ছবিটা বদলে গেল।

Advertisement

রবীন্দ্র সরণির দিকে মার্কেটের সামনের অংশের পাঁচতলায় কালো ধোঁয়ার গহ্বর থেকে আগুনের হলকা বেরোতে শুরু করল হঠাৎই। কিছুক্ষণের মধ্যে ছ’তলাতেও একই দৃশ্য। মেহতা বিল্ডিংয়ের চারতলা থেকে সেই আগুন কাবু করার চেষ্টা হল কিছুক্ষণ। কাজ হচ্ছে না দেখে কৌশল বদলের পথে হাঁটল দমকল। মেহতা বিল্ডিংয়ের পাঁচতলার ছাদ থেকে বাগড়ির পাঁচ ও ছ’তলার তিন-চারটি ঘরে ‘রিলে’ পদ্ধতিতে জল দেওয়া শুরু হল। এরই মধ্যে দোতলায় যেখানে জলের পাইপ ফেলে রাখা হয়েছিল, সেখানে আগুন বাড়তে শুরু করল। মইয়ের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা দমকলকর্মী তখন চিৎকার করছেন, ‘‘তাড়াতাড়ি হোস পাইপ দাও। এখানে আগুন বাড়ছে।’’ শেষ পর্যন্ত ধোঁয়ার মধ্যে মইয়ের উপরে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে নীচে নামতে বাধ্য হলেন ওই দমকলকর্মী। রাস্তার উপর থেকে আগুনের উপরে জলবর্ষণ করা হতে লাগল। খানিক পরে কিছুটা সুবিধা বুঝে তবে মই বেয়ে উপরে উঠে দোতলার ওই ঘরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেন দমকলকর্মীরা।

সহকর্মীদের লড়াই ফুটপাতে বসে দেখতে দেখতে দমকল বাহিনীর এক প্রবীণ সদস্য বলছিলেন, ‘‘প্রতিটি ঘরে ফলস সিলিং আছে। সেই সিলিংয়ের মধ্যে আবার দাহ্য পদার্থ ঠাসা রয়েছে। এখন যে আগুন দেখছেন, সেটা সিলিংয়ের আগুন। আগুনের তাপে বাড়ির দেওয়াল, মেঝে বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। যে কোনও সময় যা কিছু হতে পারে!’’

মধ্যরাতে সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। ‘ডি’ গেটের ভিতরের একটি দোকানে আগুন নেভাচ্ছিলেন দমকলকর্মীরা। আচমকা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল পাশের দোকানের ছাদ। কোনও রকমে সেখান থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে এলেন দমকল আর বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা। যেখানে এসে দাঁড়ালেন, সেটিই বা কতখানি নিরাপদ! কিছুক্ষণ আগে সেখানেও তো একটি দোকানের ছাদ ভেঙে পড়েছে। ফলে দোতলার আগুন এ বার একতলার দোকানে ধেয়ে আসাতে কোনও বাধা রইল না। রাত দু’টো নাগাদ বিভিন্ন তলায় জানলার গ্রিল কেটে কেটে ভিতরে ঢোকার রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হল।

হোস পাইপের কৃত্রিম বৃষ্টি, ধোঁয়া, পোড়া গন্ধে ভরা যাওয়া ক্যানিং স্ট্রিটের প্রতি কোণে তখন ক্লান্তির ছাপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন