জেসপ-তদন্ত

ছিঁচকেদের দল গড়েই জেসপে চুরি, সামিল বাংলাদেশিরাও

জেসপ কারখানায় তামা ও লোহা চুরিতে হাত লাগিয়েছিল দুই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীও। তিন বছরে চোরের দল প্রায় কয়েক কোটি টাকা দামের পুরনো লোহা ও তামা বিক্রি করে দিয়েছে বলে দাবি করছেন সিআইডি-র কর্তারা। প্রায় ৭০ একর জায়গা নিয়ে জেসপ কারখানা। বিশাল কারখানায় ২৮টি গেট। নিরাপত্তারক্ষী হাতেগোনা।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০০
Share:

জেসপ কারখানায় তামা ও লোহা চুরিতে হাত লাগিয়েছিল দুই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীও। তিন বছরে চোরের দল প্রায় কয়েক কোটি টাকা দামের পুরনো লোহা ও তামা বিক্রি করে দিয়েছে বলে দাবি করছেন সিআইডি-র কর্তারা।

Advertisement

প্রায় ৭০ একর জায়গা নিয়ে জেসপ কারখানা। বিশাল কারখানায় ২৮টি গেট। নিরাপত্তারক্ষী হাতেগোনা। তার সুযোগেই বছর তিনেক ধরে দু’টি গ্যাং অবাধে চুরি চালিয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন সিআইডি-র কর্তারা। তাঁদের দাবি, বছর তিনেক আগে মানিকতলার লোহাপট্টির তিন ব্যবসায়ী উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছিঁচকে চোরদের নিয়ে বড় গ্যাং তৈরি করে। তার পর থেকেই সপ্তাহে তিন দিন ওই ছিঁচকে চোরের দল জেসপে হানা দিয়ে তামা ও লোহা কেটে লরিতে তুলে নিয়ে চম্পট দিত।

তদন্তকারীদের কথায়, জেসপে অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে নেমে চুরির ঘটনাও সামনে আসে। তারই সূত্রে মানিকতলা এলাকা থেকে গৌতম মণ্ডল নামে এক লোহা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। এক তদন্তকারীর কথায়, ধৃতকে জেরা করে জাল বিছানো হয়। তাতে ধরা পড়েন সুমিত জায়সবাল ওরফে ভিকি ও বিশাল জায়সবাল ওরফে রিকি নামে আরও দুই ব্যবসায়ী। হাতেনাতে পাকড়াও করা হয় ছিঁচকে চোরেদের দলের ১২ জনকেও। তাদের মধ্যেই রয়েছে দুই বাংলাদেশি নাগরিক।

Advertisement

সিআই়ডি-র মতে, মানিকতলার এই তিন মূর্তিই নানা এলাকা থেকে ছিঁচকে চোরদের জুটিয়ে একাধিক গ্যাং তৈরি করেছিল। সেই দল দিনের পর দিন বন্ধ কারখানায় গ্যাসকাটার দিয়ে লোহা ও তামা কেটে তিন চাঁইয়ের নির্দেশ অনুযায়ী গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিয়েছে।

কী ভাবে তৈরি হল চোরের দল? পুলিশের কথায়, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন বন্ধ কারখানা থেকে ওই ছিঁচকে চোরের দল নানা ধরনের লোহার সরঞ্জাম চুরি করে মানিকতলার তিন ব্যবসায়ী গৌতম, ভিকি ও রিকিকে বিক্রি করত। মুলত উত্তর ২৪ পরগনার বন্ধ কারখানা থেকে ওই লোহার সরঞ্জাম চুরি করা হতো। ওই সব চোরের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি দল তৈরি গড়েন মানিকতলার ব্যবসায়ীরা। বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশ থেকে এসে বসিরহাট এলাকায় ঘাঁটি গাড়ে নুর ইসলাম ও মিন্টু শেখ। তদন্তকারীদের দাবি, বাংলাদেশ থেকে এসে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় চুরি করে নুর ও মিন্টু নিজের দেশে পালিয়ে যেত। তারাও জেসপ কারখানায় ছিঁচকেদের দলে যোগ দিয়েছিল বলে দাবি করছে সিআইডি। এক কর্তার কথায়, নুর ও মিন্টুর বিরুদ্ধে চুরি অভিযোগের পাশাপাশি অনুপ্রবেশ আইনের ধারাও প্রয়োগ করা হবে।

এক তদন্তকারীর কথায়, একেবারে সংগঠিত এই চুরি চক্রে ছিঁচকে চোরদের দিনমজুরি ৫০০ টাকা। সঙ্গে চোরাই মাল বিক্রির ১০ শতাংশ। হিসেব অনুয়ায়ী, এক এক জন ছিঁচকে প্রায় ১৫০০ টাকা পেত। জেসপের ভিতরে রেলের লোহার কামরা ও তামার সরঞ্জাম রয়েছে। অধিকাংশই অর্ধেক তৈরি করে ফেলে রাখা। ২৮টি গেটের অধিকাংশই বন্ধ। ছিঁচকে চোরেরা প্রথমে আদিম প্রথায় ‘সিঁদ’ কেটে কারখানার ভিতরে ঢুকত। শাবল ও হাতুড়ি দিয়ে ভিতর থেকে দেওয়ালে বড় বড় ফুটো করে ফেলার পরে রাতভর চলত গ্যাসকাটার দিয়ে লোহা ও তামা কাটা। কারখানার ভিতরে সেই কাজ শেষ হলে মোবাইল থেকে ফোন করে খবর দেওয়া হতো বাইরে থাকা সঙ্গীদের। দেওয়ালে কাছে চলে আসত ফাঁকা লরি। দেওয়ালের গর্ত দিয়ে তামা ও লোহা লরিতে তুলে দিয়ে চম্পট দিত চোরেরা।

দিনের পর দিন অবাধে এমন চুরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বন্ধ কারখানার নিরাপত্তকর্মীরা তা টেরই পেলেন না? এক তদন্তকারী জানান, কারখানার একাধিক নিরাপত্তারক্ষী জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন রাতে বন্ধ কারখানায় নানা রকম ভুতুড়ে আওয়াজ শুনতে পেতেন তাঁরা। তবে জেসপ কারখানায় রাতে টহলদারির কোনও ব্যবস্থাই নেই। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানার নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে চোরের দলের কোনও যোগসাজস রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অন্য দিকে, মানিকতলার ব্যবসায়ীরা জেসপ কারখানা থেকে চুরি করা লোহা ও তামা হাওড়ার লিলুয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার ঘোলা এলাকার কয়েক জন ব্যবসায়ীকে বিক্রি করেছেন বলে দাবি তদন্তে। ওই ব্যবসায়ীরা শনাক্ত হয়েছেন বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা। তিন বছরে ওই ব্যবসায়ীদের কাছে কয়েক কোটি টাকার চোরাই মাল বিক্রি করা হয়েছে বলে সিআইডি সূত্রে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন