বন্ধ এটিএম-ও। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র
ভরদুপুরে ধর্মতলার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক। ঝাঁপ বন্ধ। সামনে ক্যাম্প খাট পেতে অলস দুপুর কাটাচ্ছেন এক যুবক!
বেলা ২টো নাগাদ কলকাতা পুর ভবনের সামনে একটি ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার। জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে এসে এক মহিলা দেখলেন, দরজা বন্ধ! দৃশ্যতই হতাশ হয়ে পড়লেন তিনি। তার পরে খোঁজাখুঁজি শুরু করলেন, আশেপাশে ওই ব্যাঙ্কের অন্য কোনও এটিএম কাউন্টার যদি খোলা থাকে!
জরুরি পরিষেবার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন হাসপাতালের এটিএম কাউন্টারগুলিকে ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। তাই টাকা তোলার তাগিদে বাধ্য হয়েই অনেকে বুধবার হাসপাতালের পথ ধরেন!
ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের জেরে এ দিন মহানগরে এটাই ছিল নগদ-হয়রানির চিত্র! এটিএম পরিষেবা বন্ধ থাকায় অনেকেই টাকা তুলতে পারেননি। জরুরি প্রয়োজনে ড্রাফট কাটা কিংবা চেক জমা দিতে না-পেরেও নাকাল হয়েছেন মহানগরের বাসিন্দারা। আর আমজনতার হয়রানিতেই নিজেদের সাফল্য দেখছে ব্যাঙ্ককর্মী সংগঠন! তাদের নেতারা সন্ধ্যায় দাবি করেছেন, ধর্মঘট রীতিমতো ‘সফল’।
বেতন বাড়ানোর দাবিতে ব্যাঙ্কের কর্মী-অফিসারেরা যে ধর্মঘট করবেন, কর্মী ইউনিয়নগুলি আগেই তা জানিয়েছিল। সেই জন্য অনেকেই আগেভাগে ব্যাঙ্কের কাজ সেরে রেখেছিলেন। কিন্তু এটিএম বন্ধ থাকায় হঠাৎ প্রয়োজনে টাকা তুলতে না-পেরে সমস্যায় পড়তে হয়েছে গ্রাহকদের। প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাঙ্কের শাখার বাইরেও গ্রাহক পরিষেবা পৌঁছে দিতেই এটিএম কাউন্টার খোলার উপরে জোর দিচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি। তা হলে এমন ধর্মঘটে সেই পরিষেবাও বানচাল করে দেওয়ার অর্থ কী, প্রশ্ন তুলছেন নাগরিকেরা।
ব্যাঙ্ককর্মী সংগঠনগুলির তরফে বলা হয়, এটিএমের নিরাপত্তারক্ষীরাও কর্মী সংগঠনের সদস্য। তাই তাঁরাও ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। ফলে এ দিন বেশির ভাগ এটিএম কাউন্টারেরই ঝাঁপ খোলেনি। তবে ব্যাঙ্ককর্মী সংগঠন ইউএফবিইউ-এর আহ্বায়ক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এআইবিইএ-র সর্বভারতীয় সভাপতি রাজেন নাগর জানান, নাগরিকদের সুবিধার কথা ভেবেই ১৫% এটিএম কাউন্টার খোলা রাখা হয়েছিল।
কিন্তু মাত্র ১৫% এটিএম কাউন্টার কয়েক লক্ষ গ্রাহককে কতটা পরিষেবা দিতে পেরেছে, সেই প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে এ দিন ব্যাঙ্ক পরিষেবা স্তব্ধ হওয়ার ছবিই দেখা গিয়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই ব্যাঙ্ক ছিল বন্ধ। সাধারণত সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বি বা দী বাগের অফিসপাড়া কিংবা মধ্য কলকাতার ব্যবসা কেন্দ্রে ব্যাঙ্কগুলির সামনে ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু এ দিন সেখানে মাছি তাড়ানোর লোকও নেই। বন্ধ দরজার সামনে ইউনিয়নের পতাকা ঝুলছে। ব্যাঙ্কের সদর দরজার সামনে বসে বা দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নিয়েছেন পথচলতি মানুষ। উত্তর কলকাতার কোনও কোনও গলির ব্যাঙ্কের সামনে আড্ডাও জমান স্থানীয় বাসিন্দারা!