বিপজ্জনক ঘাট। কেলভিন ঘাট।
প্রকল্পের নাম বদলায়। অনেক সময়ে সেই বদলের কোপে পড়ে যায় পুরনো পরিকল্পনা। এমনই হয়েছে বরাহনগর পুর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে। আশির দশকের মাঝামাঝি ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান (গ্যাপ)’-এর মাধ্যমে গঙ্গার দূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ শুরু করেছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। দু’ শতক পেরিয়ে ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’-এর নাম পরিবর্তন হয়ে হয় ‘ন্যাশনাল গঙ্গা রিভার বেসিন অথরিটি (এনজিআরবিএ)’। কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সেই অভিযানের নাম হয়েছে ‘নমামি গঙ্গা’। সম্প্রতি কলকাতায় তারই একটি মিটিংয়ে বাতিল করা হয়েছে পূর্ববর্তী প্রকল্পের আওতায় করা আবেদন। এর মধ্যে বরাহনগর পুর এলাকার প্রকল্পও রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরাহনগর পুরসভার আধিকারিকদের একাংশ।
গত পাঁচ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি বরাহনগর পুর এলাকার গঙ্গাঘাট সংস্কার, বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণ, বাড়ি বাড়ি নিকাশির সংযোগ এবং পূর্ব ও পশ্চিমে দু’টি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করার পরিকল্পনা। এমনই জানাচ্ছে বরাহনগর পুরসভা। পুরসভা সূত্রে খবর, পূর্বে বাগজোলা খালের দিকে যে স্যুয়েরেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ছিল সেটি প্রায় গত ১৫ বছর ধরে অকেজো আছে। ফলে বরাহনগর পুর এলাকার যাবতীয় নিকাশির দূষিত জল সরাসরি গঙ্গায় গিয়ে পড়ছে।
দেড়শো বছরের বেশি পুরনো বরাহনগর। গঙ্গা তীরবর্তী বিএসএফ ক্যাম্প থেকে শুরু করে প্রামাণিক ঘাট পর্যন্ত রয়েছে বরাহনগর পুরসভার ৪, ৫, ৩০, ৩১ এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, উত্তরে ক্ষুদিরাম ঘাট, ফেরি ঘাট, রামলোচন ঘাট, কেলভিন ঘাট থেকে শুরু করে দক্ষিণে কুঠী ঘাট, মাতৃস্নান ঘাট, জয়নারায়ণবাবু ঘাট, প্রামাণিক ঘাট-সহ ১৯টি ঘাটের প্রতিটিই কম বেশি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সত্যেন্দ্রনাথ মিত্র বলেন, ‘‘শান্তি নাপিতের ঘাটের তো প্রায় কিছুই নেই। সিঁড়ি ভেঙে ঝুলছে। রামলোচন ঘাটের মরণ ফাঁদে আটকে প্রতি বছরই মৃত্যু হয়। সেখানে জোড়া তালি দিয়ে সারাই করেছে পুরসভা। কেলভিন ঘাটও বেহাল অবস্থায়। ভাঙনের মুখে এমন অনেক ঘাট রয়েছে। একটি বৈদ্যুতিক চুল্লিও নেই এই এলাকায়। ফলে শবদেহ সৎকারে স্থানীয়দের রতনবাবু ঘাট, নিমতলা ঘাটে যেতে হয়।’’
পুরকর্তৃপক্ষও মানছেন এই অভিযোগ। বরাহনগরের গত বোর্ডের পুরপ্রধান তৃণমূলের অপর্ণা মৌলিক জানাচ্ছেন, দ্রুত ঘাট সংস্কার করা জরুরি। গত পাঁচ বছর ধরে ঘাট সংস্কার, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট-সহ উন্নত নিকাশি, বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণের জন্য বারবার কেন্দ্রে আবেদন করেও কোনও লাভই হয়নি। পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট, ডিপিআর তৈরি পর্যন্ত কাজ হয়ে আটকে থেকেছে। বৃহস্পতিবার ‘নমামি গঙ্গা’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য মিউনিসিপ্যাল অ্যাফেয়ার্স দফতর, কেএমডিএ, কেএমসি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ-সহ কয়েকজন পুর প্রধানদের একটি বৈঠক হয়। তাতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পূর্ববর্তী সময়ে জমা কোনও আবেদন এই প্রকল্পে গ্রহণযোগ্য হবে না। নতুন করে আবেদন করতে হবে। অর্থাৎ ফের শূন্য থেকে শুরু।
যদিও কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, বরাহনগরের নতুন পুরবোর্ড গঠনের পরে আগামী জুন মাসে নিকাশি ও স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নিয়ে বৈঠক হবে কেএমডি-র। শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো সংক্রান্ত কাগজপত্র অতি সম্প্রতি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ আরও জানাচ্ছেন, নমামি গঙ্গা প্রকল্পে গঙ্গা পরিচ্ছন্নতায় অনবরত নৌকো নিয়ে টহলদারি, যত্রতত্র ময়লা না ফেলার জন্য গার্ড তৈরি-সহ বেশ কিছু নতুন ব্যবস্থা সংযোজন হয়েছে। ফলে আরও একবার নতুন করে কাগজপত্র পাঠানোর নির্দেশ এসেছে।
ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।