toto

টোটোর দাপটে হাঁসফাঁস শহর, গতির দফারফা বারাসতে

উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদরে এখন যে দিকেই চোখ পড়ে, শুধু টোটো আর টোটো। সে তস্য গলি হোক বা রাজপথ।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৩১
Share:

নৈরাজ্য: এ ভাবেই পথের ধারে এবং মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দখল নিয়েছে টোটো। মঙ্গলবার, বারাসতের হরিতলার মোড়ে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

শুরুর দিকে ২০১৪ সালে সংখ্যাটা ছিল প্রায় সাড়ে সাতশো। সাইকেল ভ্যানের শহর বারাসতে নতুন আসা টোটোর তখন বেজায় কদর। ২০২০ সালের শেষে সেই বারাসতে টোটোর সংখ্যা এখন কত? উত্তরে কেউ বলছেন সাত হাজার, কেউ বা দশ হাজার। তবে প্রশাসন বা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের কাছে কোনও পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদরে এখন যে দিকেই চোখ পড়ে, শুধু টোটো আর টোটো। সে তস্য গলি হোক বা রাজপথ। টোটোহীন রাস্তা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সরকারি তথ্য বলছে, এর মধ্যে অনুমোদন রয়েছে মাত্র ২২০০টি টোটোর। বাকি সবই চলছে কোনও রকম বৈধ নথি ছাড়া। বারাসতে এখন টোটোর দাপটে আক্ষরিক অর্থেই কোণঠাসা অন্য সব ধরনের যানবাহন।

প্রশাসন এক সময়ে নির্দেশ জারি করে বলেছিল, টোটোর বদলে ই-রিকশা চলবে। সেগুলিকে লাইসেন্স দেবে পরিবহণ দফতর। তবে সেই প্রকল্প আর দিনের আলো দেখেনি। বারাসত শহরে প্রতিদিনই পথে নামছে নতুন নতুন টোটো। অভিযোগ, টোটোর জটে আটকে পড়ছে অন্য সব যানবাহন। ভোগান্তি বাড়ছে জনতার। পুরসভা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি— টোটো নিয়ে বিরক্ত সকলেই। কিন্তু এর থেকে মুক্তি আদৌ মিলবে কি?

Advertisement

বারাসতে এক সময়ে দাপিয়ে বেড়াত অসংখ্য সাইকেল ভ্যান। কিন্তু সাইকেল রিকশার চল সে ভাবে ছিল না। সস্তা বলেই সাইকেল ভ্যানের কদর ছিল খুব বেশি। ২০১৪ সালে বারাসতে টোটো চালু হয়। সেই বছরের শেষে ওই শহরে টোটোর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭৫০। পরে সেই সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে এখন কত হাজারে পৌঁছেছে, কেউ জানে না।

বর্তমানে সকালের এবং বিকেলের ব্যস্ত সময়ে টোটোর জন্যই বারাসতের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব ক’টি রাস্তায় যানজট তৈরি হচ্ছে। কলোনি মোড়, ডাকবাংলো মোড়, চাঁপাডালি মোড় এবং যশোর রোডে টোটোর জন্য ট্র্যাফিক ব্যবস্থা পুরো তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ ক্ষণ ধরে থমকে থাকছে বাস-সহ সব ধরনের যানবাহন। যার জেরে নাজেহাল হতে হচ্ছে যাত্রীদের। অভিযোগ, টোটোর জন্য যানবাহনের গড় গতি অনেকটাই কমে গিয়েছে। এমনকি, মোটরবাইকের মতো ছোট যানবাহনও আটকে পড়ছে টোটোর জটে। টোটোর এই দাপটে বিরক্ত সাধারণ মানুষও।

২০১৬ সালে তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী নির্দেশ জারি করে জানান, টোটোর দাপট ঠেকাতে ই-রিকশা চালু করা হবে। সেই প্রকল্পের জন্য সরকার কয়েকটি সংস্থাকে ঠিক করে। ঠিক হয়, পুরনো টোটোর বিনিময়ে মালিকেরা ২২ হাজার টাকা পাবেন। পুরসভা তাদের অনুমোদন দেবে। এককালীন অনুমোদনের পরে যে সব নতুন ই-রিকশা রাস্তায় নামবে, তাদের অনুমোদন দেবে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর।

২০১৪ সালে বারাসত পুরসভা ১৫০০টি টোটোকে লাইসেন্স দিয়েছিল। তার পরে আরও কিছু টোটো আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর থেকে লাইসেন্স পেয়েছিল। সব মিলিয়ে সেই সংখ্যা ২২০০-তে পৌঁছেছে। শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি তাপস দাশগুপ্ত বলেন, “টোটোর দাপট নিয়ে একাধিক বার জেলাশাসক ও আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পুরসভা বিষয়টি নিয়ে ভাবছে।”

বারাসত পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “অনুমোদনহীন টোটো নিয়ে আমাদের কাছে প্রচুর অভিযোগ আসছে। বিষয়টি দেখার কথা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের। আমরা আগেও আলোচনা করেছি। ভবিষ্যতেও আলোচনা হবে।”

উত্তর ২৪ পরগনার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনন্ত সরকার বললেন, “লকডাউনের আগে আমরা বিষয়টি নিয়ে পুরসভার সঙ্গে বৈঠক করেছি। তার পরে আর কাজ বিশেষ এগোয়নি। ফের আলোচনা হবে। যে সব নতুন টোটো আমাদের কাছে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, সব দিক খতিয়ে দেখেই তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন