Bars

তালা খুলল পানশালার, বিধি পালন হবে তো?

চতুর্থ দফার ‘আনলক’ পর্বে মঙ্গলবার থেকে বেশ কিছু বিধিনিষেধ-সহ খুলে গেল শহরের পানশালাগুলি। এত দিন রেস্তরাঁ খোলায় ছাড়পত্র থাকলেও পানশালা বন্ধই ছিল।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:০৪
Share:

পুনরায়: দক্ষিণ কলকাতার একটি রেস্তরাঁয়। মঙ্গলবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

মুখে মাস্ক আর ফেস শিল্ড, হাতে গ্লাভস। সুরক্ষা-বিধি মানতে ওই ভাবেই খাবার ও পানীয় পরিবেশন করছিলেন চাঁদনি চক এলাকার একটি পানশালার কর্মী। তাঁকে দেখে প্রথমে চিনতেই পারেননি সেখানে নিয়মিত আসা এক মধ্যবয়সি ব্যক্তি। পরিচিত ওই কর্মী বর্মের আড়ালে যেন অন্য এক মানুষ।

Advertisement

চতুর্থ দফার ‘আনলক’ পর্বে মঙ্গলবার থেকে বেশ কিছু বিধিনিষেধ-সহ খুলে গেল শহরের পানশালাগুলি। এত দিন রেস্তরাঁ খোলায় ছাড়পত্র থাকলেও পানশালা বন্ধই ছিল। তবে পানশালায় যাঁরা আসেন এবং যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, পানাহারের পরে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিধি মানার ব্যাপারে সচেতন থাকবেন তো সকলে? কারণ, দেশ জুড়ে কোভিডে দৈনিক সংক্রমণ বা মৃত্যু, কোনওটাই এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই এমন পরিস্থিতিতে পানশালা খোলার সিদ্ধান্ত কতখানি ঠিক, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।

বিভিন্ন পানশালা কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, স্বাস্থ্য-বিধি মেনেই পরিষেবা দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁরা জানিয়েছেন, পানশালায় ঢোকার মুখে গেটের সামনেই রাখা হচ্ছে দেহের তাপমাত্রা মাপার থার্মাল গান। মাস্ক পরে স্যানিটাইজ়ারে হাত পরিষ্কার করে নিলে তবেই মিলছে পানশালায় ঢোকার অনুমতি।

Advertisement

ধর্মতলার মেট্রো গলির ভিতরে একটি পানশালা আবার বসার ব্যবস্থাই পাল্টে ফেলেছে। সেখানকার আধিকারিক উদয় হালদার বললেন, ‘‘পান-ভোজনের সময়ে যে হেতু মাস্ক পরে থাকা যায় না, তাই একই টেবিলে মুখোমুখি বসা দু’জনের মাঝখানে কাচের দেওয়াল বসানো হয়েছে। আসন সংখ্যা যা ছিল, তার এক-তৃতীয়াংশ করে দিয়েছি আমরা। যাঁরা পরিবেশন করছেন, তাঁদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই ফেস শিল্ড ও মাস্ক পরে থাকাটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’’

চাঁদনি চক এলাকার আর একটি পানশালার কর্মী অরুণ রায় বললেন, ‘‘মাস্ক পরে না এলে আমরা ভিতরে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছি না। প্রতিটি টেবিলেই থাকছে স্যানিটাইজ়ার। বড় দল এলে তাদের জটলা না করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসতে অনুরোধ করা হচ্ছে।’’

পার্ক স্ট্রিট এলাকার সব ক’টি পানশালা না খুললেও বেশ কয়েকটি খুলে গিয়েছে। সেখানকার একটি পানশালার মালিক আনন্দ পুরীর কথায়, ‘‘কেউ যদি চান, তা হলে তিনি বসার আগে টেবিল ক্লথ ও সোফার কভারও বদলে দিতে পারি। মেনু কার্ডও স্পর্শমুক্ত করে ফেলেছি আমরা। কিউ আর কোডের সাহায্যে নিজেদের মোবাইলেই তা দেখে নিতে পারবেন ক্রেতারা।’’ পার্ক স্ট্রিটের আর এক পানশালার আধিকারিক লিওন রোজারিও জানালেন, গ্লাস থেকে প্লেট, সবই ‘ডিসপোজ়েবল’ (এক বার ব্যবহারযোগ্য) করে ফেলা হয়েছে।

শুরু: মাস্ক আর ফেস শিল্ড পরে অপেক্ষায় পানশালার এক কর্মী। মঙ্গলবার, পার্ক স্ট্রিটে। ছবি: সুমন বল্লভ

কসবার শপিং মলের ভিতরে থাকা আর একটি পানশালার তরফে জানানো হয়েছে, তারা বসার ব্যবস্থাটাই বদলে ফেলেছে। তার জন্য আনা হয়েছে নতুন আসবাব। এ দিন বিকেলে সেখানে এসেছিলেন বালিগঞ্জ এলাকার কয়েক জন যুবক। প্রত্যেকেই সঙ্গে এনেছিলেন স্যানিটাইজ়ার। তাঁরা জানালেন, সুরক্ষা ব্যবস্থা দেখার পরে কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করছেন। সেই সঙ্গেই অবশ্য তাঁদের প্রশ্ন, সুরক্ষার এই তৎপরতা বজায় থাকবে তো? তাঁদের মতে, পানশালার ভিতরে আসন সংখ্যা আরও কমানো দরকার। তা ছাড়া, পানশালার ভিতরে প্রত্যেকে স্বাস্থ্য-বিধি মানছেন কি না, তা দেখার জন্য আলাদা করে নজরদারির ব্যবস্থা থাকা দরকার। তার জন্য প্রয়োজনে পানশালায় উজ্জ্বল আলো জ্বালানো হোক।

‘হোটেল অ্যান্ড রেস্তরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র সচিব সুদেশ পোদ্দার বললেন, ‘‘ব্যবসা বন্ধ থাকায় বেশ কিছু পানশালার কর্মীরা কম বেতন পাচ্ছিলেন। এ বার পানশালা খোলায় তাঁরা স্বস্তি পেয়েছেন।’’ সুদেশবাবু জানান, পানশালার কর্মীদের কেউ সুরক্ষা-বিধি না মানলে তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হবে না। যাঁরা পানশালায় পানাহার করতে আসছেন, নিয়ম না মানলে তাঁদেরও বোঝাতে হবে। তা সত্ত্বেও কেউ বুঝতে না-চাইলে প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন