প্রশিক্ষণ শেষে পুলিশে যোগ দেবে ‘পিকু’

লালবাজার সূত্রের খবর, বর্তমানে কলকাতা পুলিশের সারমেয় বাহিনীতে জার্মান শেফার্ড, ককার স্প্যানিয়েল, ডোবারম্যান, গোল্ডেন রিট্রিভার, ল্যাব্রাডরের পাশাপাশি ডগ স্কোয়াডে আনা হচ্ছে ‘বিগ্‌ল’ প্রজাতির কুকুরকেও।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় এবং শিবাজী দে সরকার 

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫২
Share:

এই পিকু আসলে বিগ্‌ল প্রজাতির এক কুকুর। বয়স তার মাত্র এক বছর।

ছোটখাটো চেহারা, মেজাজও তিরিক্ষি নয়। তবে গন্ধবিচারে ‘পিকু’র ক্ষমতা অসাধারণ! তাই এ বার সে ‘চাকরি’ পেতে চলেছে কলকাতা পুলিশে।

Advertisement

এই পিকু আসলে বিগ্‌ল প্রজাতির এক কুকুর। বয়স তার মাত্র এক বছর।

লালবাজার সূত্রের খবর, বর্তমানে কলকাতা পুলিশের সারমেয় বাহিনীতে জার্মান শেফার্ড, ককার স্প্যানিয়েল, ডোবারম্যান, গোল্ডেন রিট্রিভার, ল্যাব্রাডরের পাশাপাশি ডগ স্কোয়াডে আনা হচ্ছে ‘বিগ্‌ল’ প্রজাতির কুকুরকেও। মূলত, গাড়ির নীচে এবং আনাচে-কানাচে গন্ধ শুঁকে বিস্ফোরক খোঁজার কাজেই তাকে নিয়োগ করা হবে বলে খবর। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, এই প্রজাতির কুকুর এর আগে কলকাতা পুলিশের সারমেয় বাহিনীতে ব্যবহার করা হয়নি।

Advertisement

লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘বর্তমানে গাড়ির নীচে লুকিয়ে বিস্ফোরক পাচারের ছক বার করেছে অপরাধীরা। জার্মান শেফার্ড, ল্যাব্রাডরের মতো বড় চেহারার কুকুরকে গাড়ির তলায় ঢোকানো যায় না। কিন্তু বিগ্‌ল প্রজাতির কুকুর তুলনায় ছোট হওয়ায় গাড়ির তলায় ঢুকে গন্ধ শুঁকে বিস্ফোরক খুঁজতে পারবে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, শান্ত স্বভাবের ককার স্প্যানিয়েলও গন্ধ শুঁকতে উপযোগী। তবে লোমশ চেহারা নিয়ে অপ্রশস্ত জায়গায় ঢুকতে সমস্যায় পড়ে তারা।

সারমেয়-বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বিগ্‌ল আদতে ‘সেন্ট হাউন্ড’ গোত্রের কুকুর। অর্থাৎ যে গন্ধ শুঁকে শিকার খুঁজতে দক্ষ। তার ফলে এদের ঘ্রাণশক্তি অনেকটাই তীক্ষ্ম। ছোটখাটো চেহারার জন্য অপ্রশস্ত জায়গাতেও এরা অনায়াসে ঢুকে প়ড়তে পারে। এক কালে বিদেশে মূলত খরগোশ জাতীয় ছোট প্রাণী শিকারের জন্যই এদের ব্যবহার করা হত। শান্ত মেজাজ এবং বুদ্ধিমান বলে এদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও তুলনামূলক ভাবে সহজ।

এ দেশে পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনীতে ‘বিগ্‌ল’-এর তেমন ব্যবহার না থাকলেও বিদেশে কিন্তু অপরাধী বা চোরাকারবারীর হদিস পেতে এদের ব্যবহার করা হয়। আমেরিকায় কৃষি দফতরে শুধু বিগ্‌লদের নিয়েই একটি বাহিনী রয়েছে। তার নাম ‘বিগ্‌ল ব্রিগেড’। আমেরিকার সীমান্তের চেকপোস্ট এবং বিমানবন্দরগুলির মাধ্যমে কোনও কৃষিজাত বা খাদ্য দ্রব্য পাচার করা হচ্ছে কি না, তার তল্লাশি করাই ওই সারমেয়দের কাজ। সম্প্রতি নিষিদ্ধ শুয়োরের মাংস পাচার করার সময়ে পাকড়াও করে পুরস্কারও জিতেছে সেই বাহিনীর এক চারপেয়ে সদস্য। নিউজিল্যান্ডের সীমান্তেও বিভিন্ন জৈব পদার্থ এবং মাদক তল্লাশিতে এই প্রজাতির কুকুরকে ব্যবহার করা হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে সেই বাহিনীর দুই ‘প্রবীণ’ সদস্য ‘ওয়াচম্যান’ এবং ‘ভিনি’র অবসর নেওয়ার দিনে অকল্যান্ড বিমানবন্দরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করছিলেন সরকারি কর্তারা। পৃথিবীর অন্যতম একটি বিদেশি বিমানসংস্থাতেও রয়েছে এই বিগ্‌ল প্রজাতির কুকুর।

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, লালবাজারের এক অফিসারের বাড়িতে জন্ম নিয়েছিল পিকু। ছোট্টবেলাতেই তাকে দেখে পছন্দ হয় ডগ স্কোয়াডের অফিসারদের। ছোট চেহারার অথচ তীব্র ঘ্রাণশক্তির এই প্রজাতিকে ‘ডগ স্কোয়াডে’ ব্যবহার করা যায় কি না, তা নিয়েও পরিকল্পনা শুরু হয়। বাহিনীর সারমেয় তালিকায় নতুন প্রজাতির সদস্যের অন্তর্ভুক্তির কথা ভেবেই ছানাটিকে ডগ স্কোয়াডের হাতে তুলে দেন ওই অফিসার।

লালবাজার সূত্রের খবর, প্রথম দফার প্রশিক্ষণ শেষ করে বর্তমানে গ্বালিয়রে বিএসএফ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ চলছে পিকুর। গোটা দেশে ‘স্নিফার ডগ’-এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সেটিই। প্রশিক্ষণ শেষে মার্চ মাসে কলকাতায় ফিরবে সে। তার পরেই সরকারি ভাবে বাহিনীতে যোগ দেবে পিকু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন