দূষণের ভয়ে ব্রাত্য গঙ্গা, রাস্তার কলও

বেলুড়ের গিরিশ ঘোষ রোডে বজরংবলী লোহা বাজারে পরিত্যক্ত গ্যাস সিলিন্ডার কাটতে গিয়ে সোমবার সকালে ঘটেছিল বিপত্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৮
Share:

গ্যাসের প্রভাবে শুকিয়ে গিয়েছে বাগান। মঙ্গলবার, বেলুড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গার যে ঘাটে প্রতিদিন ভোর থেকে ভিড় জমান এলাকার বাসিন্দারা, সেই ঘাটই আজ পুরো সুনসান!

Advertisement

বেলুড়ের গিরিশ ঘোষ রোডে বজরংবলী লোহা বাজারে পরিত্যক্ত গ্যাস সিলিন্ডার কাটতে গিয়ে সোমবার সকালে ঘটেছিল বিপত্তি। শেষমেশ পরিস্থিতি সামাল দিতে সিলিন্ডারটিকে ফেলা হয়েছিল ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে, ওই ঘাট সংলগ্ন গঙ্গায়। আর সিলিন্ডারের সেই ‘গঙ্গাযাত্রা’র জেরে গোটা লালাবাবু সায়র রোড এলাকাই ভুগছে প্রবল আতঙ্কে। ঘটনার প্রায় ১২ ঘণ্টা পরে, মঙ্গলবার সকালেও সেখানকার বাসিন্দাদের তাড়া করে বেড়িয়েছে আগের দিনের ভয়াবহ স্মৃতি।

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সকাল থেকেই দফায় দফায় গঙ্গার ঘাট দেখতে আসছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, জেলাশাসকের প্রতিনিধি দল, রাজ্য শ্রম দফতর, বিধায়কের প্রতিনিধি দল এবং পুরসভার কর্তারা। কিন্তু কোনও ভাবেই আতঙ্ক কাটছে না এলাকাবাসীর। গঙ্গার ঘাটের একেবারে পাশেই রয়েছে একটি আশ্রম। সেখানে ফুল, আনাজ, গাছের পাতা— সব শুকিয়ে হলুদ হয়ে গিয়েছে। একটি জলের জায়গায় ভাসছে কয়েকটি মরা ব্যাঙ। গঙ্গার জলে ভাসছে হলুদ কচুরি পানা। এলাকার বাসিন্দা তাপু হাজরা বলেন, ‘‘সিলিন্ডার আনার আগে এক বার জানালে আচমকা বিপদে পড়তে হত না।’’

Advertisement

আতঙ্ক এতটাই গ্রাস করেছে যে, রাস্তার পানীয় জলের কল থেকেও ভয়ে কেউ আর জল নিচ্ছেন না। সোমা মাইতি নামে এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘কলের জলও খাওয়ার যোগ্য আছে কি না, জানি না। তাই আমরা সকলেই জল কিনে খাচ্ছি।’’ আর এক বাসিন্দা চণ্ডী ভট্টাচার্য জানান, ঘটনার পর থেকেই শরীরটা ঝিমিয়ে রয়েছে তাঁর। বিকেলে ভাইঝির দেখতে আসার কথা। তিনি জলের ব্যারেল নিয়ে আসবেন বলেছেন। ঘটনার দিন দুপুরে এলাকার সব বাড়িতেই রান্না খাবার ফেলে দিতে হয়েছিল। কারণ, সবই গ্যাসের জেরে তেতো হয়ে গিয়েছিল। অগত্যা রাতে বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে কিংবা বাড়িতে থাকা চিঁড়ে-মুড়ি খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন বিশ্বনাথ হালদারের মতো অনেকেই।

ওই ঘাটের কাছেই রয়েছে বেলুড় মঠের জল শোধনাগার। গঙ্গার জল তুলে সেখানে তা পরিশোধন করা হয়। কিন্তু ওই মঠ সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন গঙ্গা থেকে জল তোলা হয়নি।

গ্যাস-কাণ্ডে অসুস্থ হয়ে পড়া লালাবাবু সায়র রোডের বেশ কয়েক জন বাসিন্দাকে সোমবার শ্রমজীবী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কয়েক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। বেশ কয়েক জনকে আবার ভর্তি করা হয়েছিল জায়সবাল হাসপাতালে। ওই দিন রাতেই অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে গঙ্গার ঘাট সংলগ্ন একটি বাড়ির বাসিন্দা এক বৃদ্ধা অবশ্য এখনও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ দিন দুপুরেও এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা ফের অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। তাঁদের এক জন অমর নাথের আচমকা বমি, পেটে ব্যথা শুরু হওয়ায় তাঁকে সত্যবালা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আবার তারকনাথ হালদার নামে আর এক বাসিন্দার বুকে ব্যথা হওয়ায় তাঁকে জায়সবাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছাড়া হয়েছে।

অসুস্থ হয়ে পড়েছে সৃজিতা হালদার নামে ১১ মাসের একটি শিশুও। তাকেও জায়সবাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শিশুটির মা রীতাদেবী বলেন, ‘‘ছটফটে মেয়েটা আজ কেমন যেন ঝিমিয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা ওষুধ দিয়েছেন। তাতেও সমস্যা না কমলে ভর্তির জন্য লিখে দিয়েছেন।’’ এ দিনও দুপুরে জায়সবাল হাসপাতালে গিয়ে খোঁজখবর নেন হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার পর থেকেই পুরসভার তরফে সব রকম সহযোগিতা চলছে। পুরসভার চিকিৎসকেরাও এলাকায় গিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন