৩ বছরের শিশুকে তুলে আছাড়, কারাদণ্ড শিক্ষিকার

সরকার পক্ষের বিশেষ কৌঁসুলির বক্তব্য, সাজার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করতে তাঁরাও উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০১:৫১
Share:

শিশুকে মারধরের সেই সিসিটিভি ফুটেজ।

ছাত্রের বয়স ছিল তিন বছর। ঘরের দরজা বন্ধ করে সেই শিশুটিকেই বেধড়ক মারধর করেছিলেন গৃহশিক্ষিকা। ঘরে বসানো ছিল সিসিটিভি ক্যামেরা। গোটা ঘটনাই ধরা পড়ে গিয়েছিল তাতে। পরে যা ‘ভাইরাল’ হয়ে যায় দেশ জুড়ে। কলকাতার লেক টাউন থানা এলাকার সেই ঘটনায় সোমবার অভিযুক্ত মহিলাকে দোষী সাব্যস্ত করে ছ’মাসের কারাদণ্ড দিল বিধাননগর আদালত। এ দিনই অবশ্য ওই গৃহশিক্ষিকা জামিন পেয়েছেন। তাঁর আইনজীবী জানান, তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন। সরকার পক্ষের বিশেষ কৌঁসুলির বক্তব্য, সাজার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করতে তাঁরাও উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

Advertisement

ঘটনাটি ২০১৪ সালের ২২ জুলাইয়ের। শিশুটির মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গৃহশিক্ষিকা পূজা সিংহকে গ্রেফতার করে লেক টাউন থানার পুলিশ। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। সোমবার সেই মামলায় পূজা সিংহকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেন এসিজেএম শুভ্রসোম ঘোষাল।

শিশুটির পরিবারের তরফে দায়ের করা অভিযোগে জানানো হয়েছিল, ২০১৪-র ২২ জুলাই লেক টাউন থানা এলাকার বাসিন্দা ওই পড়ুয়াকে পড়াতে যান পূজা। যে ঘরে তিনি পড়াচ্ছিলেন, সেই ঘর থেকে শিশুটির মা শালিনীকে বেরিয়ে যেতে বলেন তিনি। শালিনী বেরোতেই দরজা বন্ধ করে দেন পূজা। কিছু ক্ষণ পরে ছেলের কান্নার আওয়াজ পান শালিনী। তাঁদের ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। সন্দেহ হওয়ায় ড্রয়িং রুমের কম্পিউটার খুলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তিনি দেখেন, ছেলেকে ‘নির্মম’ ভাবে মারছেন পূজা। এর পরে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন শালিনী। কিন্তু পূজা প্রথমে দরজা খোলেননি। পরে দরজা খোলায় শালিনী দেখেন, তাঁর ছেলে বিছানায় পড়ে রয়েছে। কেন ওকে মারা হয়েছে জানতে চাইলে পূজা জানান, তিনি মারেননি। ছেলেটি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

Advertisement

শালিনীর আরও অভিযোগ, ওই ঘটনার পরেই বিকেলে পূজার স্বামী তাঁদের বাড়ি আসেন এবং মারধরের ঘটনা যাতে কাউকে না জানানো হয়, তার জন্য হুমকি দেন। তদন্তে নেমে পূজাকে পরে গ্রেফতার করে বিধাননগর পুলিশ। শিশুটিকে মারধরের ঘটনার ফুটেজ প্রকাশ্যে আসতেই তা ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়।

শোরগোল পড়ে যায় দেশ জুড়ে। যদিও পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লেও হার্ড ডিস্ক তদন্তকারীদের দেয়নি অভিযোগকারী পরিবার। ফলে মহিলাকে দোষী প্রমাণ করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় তা। তবে আক্রান্ত শিশুটি নিজেই পুরো ঘটনাটি আদালতে জানিয়েছে বলে জানান সরকার পক্ষের আইনজীবী।

পূজা সিংহের আইনজীবী ইন্দ্রকান্ত ঝা-র বক্তব্য, এই মামলায় একাধিক অসঙ্গতির কথা আদালতে তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর দাবি, মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল। তাই এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন। উচ্চ আদালতে তাঁর মক্কেল বেকসুর খালাস পেলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হবে। সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, ঘটনার পরে আতঙ্ক এতটাই ছিল যে, এক মাসেরও বেশি স্কুলে যেতে পারেনি ওই শিশুটি। এমনকি, এখনও তার মনে আতঙ্ক রয়ে গিয়েছে বলে শালিনী আদালতে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ছ’মাস সাজার ঘোষণা হলেও তার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য উচ্চ আদালতে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন