বিকল্প ব্যবস্থা কী, ধোঁয়াশা বিধাননগরে

যদিও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছিলেন, কারও রুজি-রুটি কেড়ে নেওয়া দলের নীতি নয়। বিধাননগরের ক্ষেত্রেও বিকল্প বন্দোবস্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫১
Share:

স্থানচ্যুত: ফুটপাথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে হকারদের। কিন্তু বন্ধ করার উপায় নেই ব্যবসা। তাই ভরসা এ বার উল্টো দিকের বাসস্ট্যান্ড। বৃহস্পতিবার সল্টলেকের করুণাময়ীতে। নিজস্ব চিত্র

ফুটপাথ উন্মুক্ত হল। সেখানে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের কাজও দ্রুত শুরু করবে পুরসভা। কিন্তু যে সব স্থায়ী দোকানি ও হকারকে সরিয়ে দেওয়া হল, তাঁদের পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তেই পৌঁছতে পারেনি বিধাননগর পুরসভা। আদৌও কোনও পুনর্বাসন দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও সদুত্তর মেলেনি পুরকর্তাদের কাছ থেকে। তবে পুরসভা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যে সব রাস্তা ও ফুটপাথে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে, সেখানে কোনও মতেই নতুন করে হকারদের বসতে দেওয়া হবে না।

Advertisement

যদিও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছিলেন, কারও রুজি-রুটি কেড়ে নেওয়া দলের নীতি নয়। বিধাননগরের ক্ষেত্রেও বিকল্প বন্দোবস্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু বিধাননগর পুরসভার তরফে এ বিষয়ে স্পষ্ট জবাব মেলেনি।

যদিও এই উচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলি ক্ষুব্ধ। তবে হকার কিংবা দোকানদারেরা ছাড়া এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে কাউকে এখনও পথে নামতে দেখা যায়নি।

Advertisement

শাসক দল বা প্রশাসনের তরফে পুনর্বাসন নিয়ে স্পষ্ট কোনও বার্তা না পাওয়ায় কার্যত অন্ধকার নেমে এসেছে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের পরিবারে। এমনটাই তাঁদের দাবি।

করুণাময়ী মোড়ে স্থায়ী দোকান ছিল রানা হালদারের কাকা সুশান্ত হালদারের। রানা বলেন, ‘‘ছয়-সাত লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। দোকানে অনেক কর্মচারী রয়েছেন। ব্যবসার জন্য নেওয়া ঋণ শোধ করতে হবে। কী করব, জানি না। মাথা কাজ করছে না। এখনও প্রশাসনের উপরে ভরসা রেখেছি। দেখা যাক, কী হয়।’’

আর এক দোকানি অনিন্দ্য সিংহ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উপরে আস্থা রয়েছে। আশা করি, আমাদের অবস্থা বিবেচনা করবে প্রশাসন।’’ করুণাময়ী মোড়েই দোকান চালাতেন তপন রায়। বললেন, ‘‘ব্যবসার জন্য ঋণ নিয়েছি। কী ভাবে শোধ করব, জানি না। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আশা করি, পুর প্রশাসন কিছু ব্যবস্থা করবে।’’

পুনর্বাসন নিয়ে পুরসভা নিশ্চিত করে কিছু না বললেও সূত্রের খবর, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। যে সব দোকানদারের বৈধ নথি রয়েছে, প্রাথমিক ভাবে তাঁদের ব্যাপারেই চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু রাস্তায় অস্থায়ী ভাবে যাঁরা ব্যবসা করছিলেন, তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। বিধাননগরের পুলিশ ও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্ছেদ হওয়া অস্থায়ী স্টলের সংখ্যা প্রায় ৯০। আর স্থায়ী দোকান ভাঙা পড়েছে গোটা দশেক।

বৃহস্পতিবারও পুরসভার কর্মীরা করুণাময়ী মোড়ে ফুটপাথ সাফাইয়ের কাজ চালিয়েছেন। এ দিকে, তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে হকারেরা নিজেদের মধ্যে দিনভর আলোচনা করেছেন। হকারদের একাংশের কথায়, ‘‘দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে রাস্তায় ব্যবসা করছি। আমাদের কখনওই কোনও নথি ছিল না। আমাদের ক্ষেত্রে প্রশাসন কী পদক্ষেপ করবে, তা স্পষ্ট করে জানানো হোক।’’

বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘পুনর্বাসন নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যাঁদের বৈধ নথি রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে কী করা যায়, আলোচনা চলছে। তবে, যে সব রাস্তা এবং ফুটপাথ উন্মুক্ত করা হয়েছে, সেখানে নতুন করে কাউকে বসতে দেওয়া হবে না।’’

হকারদের কী হবে? জবাবে মেয়র বলেন, ‘‘এ বিষয়ে রাজ্য সরকার যা নির্দেশ দেবে, সে ভাবেই কাজ করবে পুরসভা।’’ উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার দাবিতে এ দিন সন্ধ্যায় সল্টলেকে মিছিল বার করা হয় সিপিএমের তরফে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন