সোয়াইন ফ্লু নিয়ে চিন্তা বাড়ছে বিধাননগরে 

সোয়াইন ফ্লু নিয়ে চিন্তা বাড়ছে বিধাননগর পুর এলাকায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশাবাহিত রোগের ক্ষেত্রে প্রশাসন যে ভাবে মানুষকে লাগাতার সচেতন করার কাজ করছে, সোয়াইন ফ্লু নিয়ে তা করছে না।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মারা গিয়েছেন বিধাননগর পুরসভার অন্তর্গত কেষ্টপুরের এক বাসিন্দা। এর আগে গত নভেম্বরেও একই রোগে সল্টলেকে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছিল। এই দু’টি ঘটনার মাঝে ওই এলাকার আরও এক বাসিন্দা জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর শরীরেও ওই রোগের উপসর্গ দেখা গিয়েছিল বলে পুরসভা সূত্রের খবর।

Advertisement

ফলে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে চিন্তা বাড়ছে বিধাননগর পুর এলাকায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশাবাহিত রোগের ক্ষেত্রে প্রশাসন যে ভাবে মানুষকে লাগাতার সচেতন করার কাজ করছে, সোয়াইন ফ্লু নিয়ে তা করছে না। তাঁদের বক্তব্য, সোয়াইন ফ্লু নির্ণয়ের জন্য যে পরীক্ষা করাতে হয়, তা বেসরকারি হাসপাতালে যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য। সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে আবার পরীক্ষার জন্য ভর্তি হতে হয়। সেই কারণে যাঁরা প্রতিদিনের রোজগারের উপরে নির্ভরশীল, তাঁরা অনেকেই এই পরীক্ষা করাতে পারছেন না।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জ্বর কমে যাওয়ার পরে যদি শ্বাসকষ্ট হয়, তা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সময়ে রোগ নির্ণয় না হলে জটিলতা বাড়বে। জ্বরে আক্রান্তদের বাইরে বেরোনো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মুখে বিশেষ ধরনের মাস্ক পরতে হবে।

Advertisement

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না। চিকিৎসকদের বক্তব্য, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য আরও উন্নত পরিকাঠামো দরকার। শুয়োর প্রতিপালনকারীদের নিয়মিত সচেতন করার পাশাপাশি যেখানে শুয়োরদের রাখা হয়, তার আশপাশ সাফ রাখা প্রয়োজন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সোয়াইন ফ্লু-র চরিত্র আগের থেকে বদলেছে। এখন সারা বছরই এই রোগ হয়। যে কোনও বয়সের মানুষই এতে কাবু হচ্ছেন, বিশেষত শিশুরা। বিধাননগর পুর এলাকার ওই দু’টি মৃত্যুর পাশাপাশি চলতি বছরেই পার্ক সার্কাসের একটি হাসপাতালে ১০ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল ওই রোগে।

গত নভেম্বরে বিধাননগর পুর ভবনের অদূরে এফই ব্লকে সোয়াইন ফ্লু-তে এক মহিলার মৃত্যুর পরে ওই ব্লকে পুরসভার তৎপরতা বেড়ে যায়। তিন মাসের মাথায় এ বার কেষ্টপুরে আর এক জনের মৃত্যুতে চিন্তা বেড়েছে পুরকর্তাদের।

বিধাননগর পুরসভা জানিয়েছে, কেষ্টপুরে যে বাড়িতে ওই মহিলা থাকতেন, সেই বাড়ির আশপাশে সাফাইয়ের কাজ করা হবে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করারও চেষ্টা হবে। কিন্তু সচেতন করতে গিয়ে কী বলা হবে, তা নিয়েই ধন্দে কর্তারা। কারণ, সোয়াইন ফ্লু-তে যে সমস্ত জায়গায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার কাছাকাছিও কোথাও শুয়োর প্রতিপালন হয় না। বায়ুবাহিত হয়ে কিংবা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ওই রোগ ছড়ালে কী ভাবে তার আগাম মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই।

মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায়ের কথায়, ‘‘বায়ুবাহিত এই রোগের ক্ষেত্রে আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কী করা যায় কিংবা কী ভাবে মানুষকে সচেতন করা হবে, তা নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে। সোয়াইন ফ্লু তে বিধাননগরে দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় আমরাও চিন্তিত।’’ তবে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের দাবি, সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো রয়েছে এবং পরিষেবাও দেওয়া হচ্ছে। সর্বত্র নজর রাখা হচ্ছে বলেই স্বাস্থ্য ভবন থেকে জানানো হয়েছে।

বিধাননগরের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি কিংবা মশা বাহিত রোগের থেকে সোয়াইন ফ্লু এর পার্থক্য কী ভাবে তাঁরা বুঝবেন? তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসন থেকে যদি মশাবাহিত রোগের মতো সোয়াইন ফ্লু নিয়েও আলাদা করে প্রচার চালানো হয়, সেক্ষেত্রে বাসিন্দাদেরও সচেতন হতে সুবিধা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন