মণ্ডপ তৈরির জন্য ছোট-বড় একাধিক গর্ত খোঁড়া হয়েছে। সেখানে জমে আছে বর্ষার জল। কাটা বাঁশের খোলে, জড়ো করে রাখা প্লাস্টিক এবং থার্মোকলেও জমেছে জল। তৈরি হয়েছে মশার বংশবৃদ্ধির পরিবেশ।
গত কয়েক বছরে এমনই ছিল ছবিটা। এ বছর সল্টলেকের একে ব্লকে দেখা গেল, মণ্ডপ তৈরির জায়গা সাফসুতরো করার পরে কমিটির তরফে ছড়ানো হয়েছে ব্লিচিং পাউডার। কারিগরেরা রাতে মশারি ব্যবহার করছেন। যদিও সচেতনতার এমন ছবি হাতেগোনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছবিটা রয়ে গিয়েছে আগের মতোই।
২০১৭-র অগস্ট মাসে সল্টলেকে মশাবাহিত রোগ, বিশেষত ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছিল। আক্রান্ত হন কয়েকশো মানুষ। পুরসভা সূত্রের খবর, পরিদর্শন করতে গিয়ে পুরকর্মীরা দেখেছিলেন, বেশ কিছু জায়গায় মণ্ডপ তৈরির জন্য খোঁড়া গর্তেই জমেছিল জল। মণ্ডপের কাছে অনেক জায়গায় আবর্জনার স্তূপও দেখা গিয়েছিল। তার মধ্যে জমা জলে মিলেছিল মশার লার্ভা।
গত বছরের সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। তাই এ বার সচেতনতা প্রসারে এবং মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে পদক্ষেপ করতে পুজো কমিটিগুলিকে নোটিস পাঠাতে চলেছে বিধাননগর পুরসভা। সেই সঙ্গে ওয়ার্ড কমিটিগুলিকেও বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন পুর কর্তৃপক্ষ। এ বছর পুরসভার তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলেনি। তবে জ্বর হওয়ার পরে ৪৫ জনের রক্ত পরীক্ষায় এনএসওয়ান পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। তাঁরা বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন। তবুও গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘পুজো কমিটিগুলিকে নোটিস পাঠানো হবে। প্রস্তুতি পর্ব থেকে শুরু করে পুজোর পরেও মণ্ডপ চত্বরে যাতে কোনও ভাবেই জল না জমে, আবর্জনা ফেলে না রাখা হয়, সেই সব দিকে গুরুত্ব দেওয়ার আবেদন রাখছি।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটিও এ ক্ষেত্রে পুজো মণ্ডপগুলিতে নজরদারি চালাবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।
সল্টলেকের একে ব্লকের পুজোর এক কর্মকর্তা রাজা বণিক জানান, মণ্ডপ তৈরির কারিগরদের বলা হয়েছে রাতে মশারি ব্যবহার করতেই হবে। পাশাপাশি, মশা তাড়ানোর ধোঁয়া দেওয়া, এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে ব্লিচিং ছড়ানোর দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে। এফডি ব্লক পুজো কমিটির এক কর্তা সৌমিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরসভার নির্দেশ মেনেই পদক্ষেপ করা হবে।’’
সল্টলেকের পাশাপাশি সংযুক্ত এলাকা থেকে শুরু করে রাজারহাট-গোপালপুর এলাকাতেও এ ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুরসভা। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ৪ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গত বছরেই তাঁর ওয়ার্ডে প্রতিটি পুজো মণ্ডপে প্রতিদিন পুরকর্মীরা মশা তাড়াতে ধোঁয়া দেওয়া থেকে অন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। এ বছরেও তা জারি থাকবে।