টাকা ফেরাতে নির্দেশ, বিপাকে ৩৭ স্কুল

স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন-সহ স্কুলের উন্নয়নের প্রধান ভরসা পড়ুয়াদের ফি। ওই নির্দেশ মানতে গেলে স্কুল চালানোই সম্ভব নয় বলে মত বেশির ভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

স্কুলে ভর্তির অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিকাশ ভবন। আর এতেই বিপাকে পড়েছে সরকারের থেকে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) প্রাপ্ত শহরের স্কুলগুলি। কারণ স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন-সহ স্কুলের উন্নয়নের প্রধান ভরসা পড়ুয়াদের ফি। ওই নির্দেশ মানতে গেলে স্কুল চালানোই সম্ভব নয় বলে মত বেশির ভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

শিক্ষার অধিকার আইন (২০০৯) অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন সম্পূর্ণ অবৈতনিক। যদিও ২০১১ সালে রাজ্য সরকার একটি আইন পাশ করে জানায়, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির সময়ে উন্নয়ন ফি হিসেবে প্রতি প়ড়ুয়ার থেকে ২৪০ টাকা নিতে পারবে স্কুলগুলি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বহু স্কুলই নির্ধারিত টাকার থেকে বেশি নেয়। তাই আগামী শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার আগেই সেই প্রবণতায় রাশ টানতে চেয়ে সম্প্রতি বিকাশ ভবন থেকে সমস্ত জেলা স্কুলপরিদর্শকের (ডিআই) কাছে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। তার পর থেকেই দুশ্চিন্তায় শহরের ৩৭টি স্কুল।

ওই নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে, যে যে-সব সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত, সরকারি পোষিত ও আংশিক সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে ২৪০ টাকার বেশি ভর্তি ফি নেওয়া হয়‌েছে, তাদের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে অভিভাবকদের সেই বাড়তি অর্থ ফেরত দিতে হবে। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সেই রিপোর্ট পাঠাতে হবে ডিআই অফিসে। এমনকী, ভুল তথ্য দেওয়া হলে বা নির্দেশ না পালন করলে স্কুলের পরিচালন সমিতিও ভেঙে দেওয়া হতে পারে।

Advertisement

এ রকমই একটি স্কুল পাঠভবন। কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের শিক্ষকদের মধ্যে মাত্র তিরিশ শতাংশ সরকারের থেকে মহার্ঘ ভাতা পান। সমস্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন, স্কুলের যাবতীয় উন্নয়নের খরচ বহন করতে হয় পড়ুয়াদের থেকে সংগ্রহ করা ফি থেকেই। যে কারণে ওই সমস্ত স্কুলে মাসিক বেতনের পরিমাণই থাকে কয়েক হাজার টাকা। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সান্ত্বনাদেবী বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের থেকে বর্ধিত ফি নেওয়া ছাড়া আমাদের উপায় নেই। স্কুল চালাতে গেলে এটা নিতেই হবে।’’

একই ভাবে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল, কার্মেল হাইস্কুল, মহেশ্বরী বয়েজ এবং গার্লস সরকারের থেকে মহার্ঘ ভাতা পায়। ফলে সরকারি নির্দেশিকা থেকে তারাও বাদ যাচ্ছে না। সম্প্রতি স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে রাস্তা অবরোধ থেকে শুরু করে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। তার উপরে শিক্ষা দফতরের থেকে এ রকম নির্দেশিকা আসায় ফের নতুন করে জল ঘোলা হতে পারে বলে আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের।

বিষয়টি নিয়ে সরব শিক্ষক সংগঠনও। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘যে সব স্কুলের শিক্ষকেরা শুধু মহার্ঘ ভাতা পান এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বোর্ডের অধীনে রয়েছে, সেই স্কুল কোনও ভাবেই এই নির্দেশের আওতায় আসতে পারে না। দফতরে উচিত দ্রুত বিষয়টি স্পষ্ট করা।’’ তবে সম্প্রতি দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের স্কুলগুলিকে নির্দেশের বাইরে রাখা হতে পারে। দ্রুত তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাকি ক্ষেত্রে অবশ্য আগের মতোই কড়া দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন