থোড়াই কেয়ার: নিয়ম উড়িয়েই বিনা হেলমেটে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তে দেখা মিলল চালক ও সওয়ারিদের। শুক্রবার মহাত্মা গাঁধী রোডে
এক দিন গাঁধীগিরি, পরের দিন কর্মবিরতি?
শুক্রবার, হোলির শহরে বেপরোয়া বাইক শাসনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এমন প্রশ্নই উঠল নানা মহলে।
এ বার দোলে বেপরোয়া মোটরবাইক চালকদের ‘শিক্ষা’ দিতে কঠোর হওয়ার কথা শুনিয়েছিলেন লালবাজারের কর্তারা। বৃহস্পতিবার, দোলের দিন রাস্তায় মত্ত কিংবা হেলমেটহীন বাইকচালকদের দেখলে ধরপাকড় না করলেও ‘মগজধোলাই’ করেছে পুলিশ। ফলে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রিত থেকেছে লাগামহীন বাইকের চলাচল। কিন্তু শুক্রবার, হোলির দিনে সেই ছবিটা একেবারেই বদলে গেল। পথঘাটে রং মেখে মোটরবাইক নিয়ে বেরোনো অনেকের মাথাতেই নজরে এল না হেলমেট। কোনও কোনও মোটরবাইকে উঠেছেন ৩-৪ জন করেও। তবু এগিয়ে এসে শাসন করতে দেখা গেল না পুলিশকেও।
মত্ত কিংবা বেসামাল অবস্থায় মোটরবাইক নিয়ে এ দিন রীতিমতো কসরত করতেও দেখা গিয়েছে অনেককে। দুপুরে যেমন মিলেনিয়াম পার্কের কাছে দেখা মিলল এক যুগলের। রং মেখে স্কুটার নিয়ে শহরে বেরিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু হেলমেট? নেই। ভবানীপুরে একটি মোটরবাইকে চেপেছিলেন চার জন যুবক। প্রত্যেকেই কম-বেশি বেসামাল। সেই অবস্থাতেই হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন শহরের রাজপথে। উত্তর এবং মধ্য কলকাতার একাংশেও একই ছবি। হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইকে চেপে চলেছে হুল্লোড়। পথঘাটে রীতিমতো উপদ্রবও ঘটিয়েছেন কেউ কেউ। তবু পুলিশের খপ্পরে পড়তে হয়নি তাঁদের কাউকেই।
বিনা হেলমেটে: ভবানীপুর (ইনসেটে) এবং স্ট্র্যান্ড রোডে।
দোল এবং হোলির দিনে দু’রকমের ছবি দেখে অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কালীপুজো এবং দিওয়ালির রাতে পুলিশি ভূমিকায় পার্থক্যের কথা। গত কয়েক বছর ধরেই দেখা গিয়েছে, পুলিশি দাপটে কালীপুজোর রাতে মিইয়ে থাকতে শব্দদৈত্য। কিন্তু দিওয়ালির রাতে কোনওমতেই শব্দে লাগাম টানতে পারেনি লালবাজার।
লালবাজারের অনেকেই এই ফারাক মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, হোলিতেও সক্রিয়তা একই ছিল। তবে পুলিশের একাংশের বক্তব্য, দোলের দিন এ শহরের পথঘাটে তুলনামূলক বেশি ভিড় থাকে। উন্মত্ততাও বেশি থাকে। ফলে সক্রিয়তা বেশি প্রয়োজন হয়। কিন্তু কলকাতায় হোলির দিন হইচই হয় কয়েকটি মাত্র এলাকায়। ফলে দোলের দিন যে ভাবে নজর রাখা হয়েছে, পরদিন ততটাও কড়াকড়ি হয়নি বলে বক্তব্য অনেকের।
কিন্তু মোটরবাইক চালাতে গেলে হেলমেট পরা তো যে কোনও দিনই বাধ্যতামূলক। তবে হঠাৎ হোলির দিনে সে বিষয়ে হঠাৎ গা-ছাড়া ভাব কেন পুলিশের, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। লালবাজারের বক্তব্য, গা-ছাড়া মনোভাব দেখানো হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো নজরদারির ফাঁক গলে কয়েক জন বেরিয়ে গিয়েছেন। সঙ্গে পুলিশ জানায়, এ দিন শহরের নানা প্রান্ত থেকে মোট ৪৯.৫ লিটার বেআইনি মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অশালীন আচরণের জন্য গ্রেফতার হয়েছেন ৫১৮ জন।
বিধাননগর সিটি পুলিশ এলাকাতেও মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, মামলা হয়েছে ৪৮০ জনের বিরুদ্ধে। নজর না থাকলে এ সব কি সম্ভব হত, পাল্টা প্রশ্ন এক পুলিশকর্তার। তা ছাড়া বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজে হেলমেটহীন মোটরবাইক চালকদের ছবি ধরা পড়েছে। তার ভিত্তিতে ওই চালকদের জরিমানার চিঠি পাঠানো হবে বলে জানায় পুলিশ। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেকেই ভাবেন, পুলিশ ধরল না মানেই বুঝি ছাড় পাওয়া গেল। কিন্তু মানুষের বাইরেও যন্ত্রের নজরদারি আছে।’’
ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী এবং সুদীপ ঘোষ