বাতিল হয়ে গেল কলকাতা পুরসভার ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা। ছবি: সংগৃহীত।
পরিকাঠামোর অভাব তো ছিলই। পরবর্তীকালে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ না মানায় রাজ্য সরকারও প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়নি। ফলে বাতিলই হয়ে গেল কলকাতা পুরসভার ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা। সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর চিঠি দিয়ে পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে, ব্লাড ব্যাঙ্কের অনুমোদন দেওয়া হবে না।
কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা পুর স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘পুরসভা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারা নিজেরাই ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক চালাবে। সেই মতো কালীঘাট রোডে পুরসভার একটি বহুতলেই স্বাস্থ্য দফতর ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা করে। কিন্তু পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত হয়, ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চালানো হবে। সেই আবেদনে রাজ্য সরকার অনুমতি দেয়নি।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, বছর চারেক আগেই পুর স্বাস্থ্য দফতর শহরে ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সুবিধামতো জায়গা না পাওয়ায় ঠিক হয়, কালীঘাট রোডে পুরসভার তৈরি একটি অব্যবহৃত পাঁচতলা বাড়িতে ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি করা হবে। তার পরেই দেখা দেয় সমস্যা। পুরকর্তারা জানতে পারেন, যে বাড়িটি ওই প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে, সেটি আদিগঙ্গার পাশে হওয়ায় জোয়ারের সময়ে তার নীচে জল ঢুকে যায়। তা ছাড়া, স্বাস্থ্য দফতরের বিধি অনুযায়ী, যৌনপল্লির খুব কাছে ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি করা যায় না। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এ বিষয়ে প্রথমেই আপত্তি জানায়।
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি নিয়ে প্রথমেই আপত্তি উঠেছিল পুরসভায়। কারণ, পুরসভা মশাবাহিত রোগ-সহ কয়েকটি রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা করলেও গুরুতর এবং জটিল রোগ সম্পর্কে আমাদের কোনও অভিজ্ঞতা নেই। তা ছাড়া, পুর পরিষেবার কাজে ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রয়োজনই বা কোথায়?’’
অতীনবাবু বলেন, ‘‘রক্তের প্রয়োজন তো সব সময়েই হয়। তাই আর একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক শহরে থাকলে সুবিধাই হত। কিন্তু পরিকাঠামো ঠিক না থাকলে নিয়মবিরুদ্ধ কোনও কাজ পুরসভার পক্ষে করা সম্ভব নয়।’’ পুর কর্তৃপক্ষ জানান, প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে পুরসভা ব্লাড ব্যাঙ্কটি খুলবে। সেখানে পরিষেবা দিয়ে আয় করবে ওই বেসরকারি হাসপাতাল। বিনিময়ে পুরসভাকে তারা কিছু অর্থ দেবে। এর ফলে পুরসভার কিছু আয় হবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য গোটা বিষয়টিতেই পুরসভার নজরদারি চালানোর কথা ছিল।
এ বিষয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরিতে পরিকাঠামোর অভাব প্রথম থেকেই ছিল। তা ছাড়া, যৌথ ভাবে ওই পদ্ধতিতে ব্লাড ব্যাঙ্ক চালানোর কোনও নিয়ম নেই।’’