রেশনের চাল-চিনি না নিলে নীল কার্ড, মিলবে শুধু কেরোসিন

চাল, চিনি চান না। অনেকেই রেশন কার্ড রাখেন ‘আইডেন্টটি’র জন্য। ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়ার কাজে সমীক্ষা করতে গিয়ে এমনই তথ্য এসেছে খাদ্য দফতরের হাতে। এ বার সেই সব রেশন গ্রাহকদের জন্য নীল রঙের ডিজিটাল রেশন কার্ড বানানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৯
Share:

চাল, চিনি চান না। অনেকেই রেশন কার্ড রাখেন ‘আইডেন্টটি’র জন্য। ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়ার কাজে সমীক্ষা করতে গিয়ে এমনই তথ্য এসেছে খাদ্য দফতরের হাতে। এ বার সেই সব রেশন গ্রাহকদের জন্য নীল রঙের ডিজিটাল রেশন কার্ড বানানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। পরিচিয়পত্র হিসেবে তা যাতে গ্রাহকের পছন্দ হয়, সে ভাবেই বানানো হবে। বাড়তি লাভ, ওই কার্ডে কেরোসিন তেল মিলবে। নীল রঙের ওই কার্ডের উপরে লেখা থাকবে ‘নট ফর ফুড গ্রেনস্, ওনলি ফর কেরোসিন।’

Advertisement

খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে এমন অনেক বাসিন্দা রয়েছেন যাঁরা রেশনের চাল, গম নিতে চান না। এর মধ্যে কলকাতা শহরে তার সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি। শুধুই পরিচয়পত্র হিসেবে রেশন কার্ড রাখেন তাঁরা। খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক সোমবার জানান, ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য এখন সমীক্ষা চলছে। সেই পর্ব সম্পন্ন হলে নীল কার্ডের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হবে।

কেন এই সিদ্ধান্ত? খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে প্রায় ৯ কোটি বাসিন্দার সাদা রেশন কার্ড রয়েছে। ওই কার্ডধারী গ্রাহকদের অনেকেই রেশনে খাদ্য শস্য নেন না। দেখা যায়, তাঁদের জন্য বরাদ্দ খাদ্য শস্য রেশনের ডিলার তুলে নিচ্ছেন। ভর্তুকি দিয়েই সেই খাদ্য শস্য রেশন ডিলারকে দিতে হয়। এ দিকে, যাঁদের জন্য তা বরাদ্দ করা হয়, তাঁরাই ওই খাদ্য শস্য নেন না। ফলে সরকারি কোষাগারের কোটি কোটি টাকা এর জন্য নষ্ট হচ্ছে।

Advertisement

তা হলে সেই কার্ড রাখেন কেন গ্রাহক? খাদ্য দফতরের ওই অফিসার জানান, স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে সরকারের কাছে পরিচিতির জন্য অনেক আগে থেকেই রেশন কার্ড অন্যতম প্রয়োজনীয় নথি হিসেবে স্বীকৃত। ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে রান্নার গ্যাসের সংযোগ নেওয়া, পাসপোর্ট, আধার কার্ড এবং ভোটার হিসেবে পরিচয়পত্র পেতে হলে রেশন কার্ড দেখানো প্রয়োজন হয় বহু সময়েই। তাই পরিচিতির অন্যতম এই নথি সকলেই পেতে চান। বেশির ভাগ রাজ্যবাসীর কাছে এখনও রেশন কার্ড বাসিন্দা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতির প্রধান প্রমাণপত্র। তাই সরকারও চায় ওই পরিচিয়পত্র থাকুক প্রত্যেকের কাছে।

বর্তমানে গরিব, আশ্রয়হীন, প্রতিবন্ধী (যাঁদের কর্মক্ষমতা নেই) মানুষদের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কাম দামে চাল গম দেয়। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের ৬ কোটি এক লক্ষ ৮৪ হাজার মানুষকে তিন টাকা কেজি দরে খাদ্য শস্য দেয়। তা কেনার জন্য বরাদ্দ টাকা রাজ্যের হাতে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি, খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় আরও এক কোটি ৯৬ লক্ষ মানুষকে চাল, গম দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সব মিলিয়ে প্রায় ৭ কোটি ৯৭ লক্ষ মানুষ এর সুবিধে পান। দফতর সূত্রের খবর, এই হিসেবের মধ্যেও এমন অনেকে রয়েছেন যাঁরা কেন্দ্র বা রাজ্য যোজনার ভর্তুকি নেওয়ার আওতায় পড়েন না। মোট ৯ কোটি রেশন কার্ডধারীর মধ্যে একটি বড় অংশ রয়েছেন এই তালিকায়, যাঁদের ওই খাদ্য শস্য প্রয়োজনও নেই। নীল কার্ড নেওয়ার আবেদন জানানো হবে তাঁদেরই।

খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ দিন জানান, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে কেন্দ্র তিন টাকা কেজি দরে চালের দাম দেয় রাজ্যকে। আর রাজ্য ওই প্রকল্পের আওতায় থাকা মানুষজনকে তা বেচে দু’টাকা কেজি দরে। এর জন্য শুধু কেন্দ্রীয় প্রকল্পেই ৩৭৬ কোটি টাকা বছরে ভর্তুকি দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এর উপরে রয়েছে রাজ্য সুরক্ষা যোজনার বরাদ্দ। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ৫ হাজার ২০ কোটি টাকা খরচ করে রাজ্য। চাল, গম কিনে রেশন ডিলারের মাধ্যমে তা বিলিবণ্টন করা হয়।

খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, অনিচ্ছুক গ্রাহকদের মধ্যে ভর্তুকির খাদ্যশস্য না নেওয়ার প্রবণতা বাড়াতেই নীল কার্ড প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নীল কার্ড হাতে দেওয়ার পরেই গ্রাহকদের সাদা কার্ড ফেরত নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন