Crime

বিছানায় ছেলের গলা কাটা দেহ, পাখায় ঝুলছে বাবা!

বন্ধ ঘরের জানলা দিয়ে এই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন প্রতিবেশীরা। সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় থানায়। দরজা ভেঙে দেহ দু’টি উদ্ধার করে পুলিশ। পাওয়া যায় একটি সুইসাইড নোটও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:৩৪
Share:

বাবা সুব্রত দাস ও ছেলে গোপাল দাস।নিজস্ব চিত্র।

রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিছানা। খাটের উপরে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে রয়েছে বছর এগারোর এক কিশোরের দেহ। ওই ঘরের মধ্যেই পাখার সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন তার বাবা।

Advertisement

বন্ধ ঘরের জানলা দিয়ে এই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন প্রতিবেশীরা। সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় থানায়। দরজা ভেঙে দেহ দু’টি উদ্ধার করে পুলিশ। পাওয়া যায় একটি সুইসাইড নোটও। তা থেকেই জানা গিয়েছে, আর্থিক অনটনের কারণ ছেলেকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন বাবা। এই ঘটনার জন্যে কেউ দায়ী নয় বলেও তাতে উল্লেখ রয়েছে।

মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে গড়িয়া নবশ্রী বাজার শিবমন্দির এলাকায়। সোনারপুর থানার পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে। এগারো বছরের ওই কিশোরের নাম গোপাল দাস। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত সে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, গোপাল পড়াশোনায় ভালই ছিল। তাঁর বাবার নাম সুব্রত দাস। তিনি কাজকর্ম বিশেষ কিছু করতেন না। কয়েক বছর আগে পারিবারিক অশান্তির জেরে স্ত্রী ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তার পর থেকেই মানসিক অবসাদেও ভুছিলেন সুব্রত। সম্প্রতি বাড়ি বাড়ি রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছিলেন। ছেলের পড়াশোনার খরচ-সহ সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল গড়িয়ার ওই বাসিন্দাকে।সে কারণেই হয়তো এভাবে ছেলেকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হয়েছেন গোপাল। ঘর থেকে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: রেললাইনে বসে ফোনে কথা, ট্রেনের ধাক্কায় নব দম্পতির মৃত্যু!

কিছু দিন আগেই কলকাতায় এরকম একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট এবং পারিবারিক অশান্তির জেরে শিশু কন্যাকে খুন করে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিল দম্পতি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত অবস্থায় সন্তানকে ছটফট করতে দেখে বাঁচার চেষ্টা করেন মা। হাতে, গলায় গভীর ক্ষত ছিল। এমআর বাঙুর হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই দম্পতি অতীশ নস্কর এবং দোলার অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু তাঁদের মেয়ে অদ্বিতীয়া এখনও সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: শিশু-নিগ্রহে ফেরার অভিযুক্ত পাকড়াও

প্রাথমিক তদন্তের পরে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, বছর পাঁচেক আগে সুব্রতবাবুর স্ত্রী অন্য এক জনকে বিয়ে করে বাড়ি থেকে চলে যান। এই ঘটনায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন সুব্রতবাবু। পড়শিরা জানান, স্ত্রীকে খুবই ভালবাসতেন তিনি। সুব্রতবাবু মাঝেমাঝে গোপালকে নিয়ে প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। কিন্তু পড়শিদের অভিযোগ, ওই মহিলার সঙ্গে প্রাক্তন স্বামী ও ছেলের বিশেষ বনিবনা ছিল না। সেই কারণে গোপালও সারাদিন মনমরা হয়ে থাকত। এরই পাশাপাশি পড়শিরা জানিয়েছেন, সুব্রতবাবুর কিছু টাকা ধার ছিল। তাঁর বাড়িতে মাঝেমধ্যেই পাওনাদারেরা আসতেন। এ নিয়েও তিনি কিছুটা মানসিক চাপে ছিলেন। বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সুইসাইড নোটের সত্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এটা নিছক আত্মহত্যা না খুন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তবে পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদের জেরে ছেলেকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন সুব্রতবাবু। পুলিশ এও অনুমান করছে, এ দিন ভোরে প্রথমে ছেলেকে ছুরি দিয়ে খুন করে পরে নিজের গলায় দড়ির ফাঁস লাগান ওই ব্যক্তি।

(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন