বইমেলার পরিচিত ভিড়। রবিবার বিকেলে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
সব মেলা একবার, বইমেলা বারবার!
মজা করে ছড়া কাটার ভঙ্গিতে কথাগুলো বলছিলেন, বেঙ্গালুরু থেকে আসা জীবনের প্রথম বইয়ের লেখক এক প্রবীণ। পাঁচ নম্বর গেটের কাছে ট্যাব নিয়ে সঙ্গীদের সবার ছবি তুলে রাখছিলেন তিনি রবিবার বিকেলে।
বছরে অন্তত একবারটি কলকাতায় এসে বইমেলার ধু লো মাখতে উদগ্রীব থাকেন এমআইটি-র বাঙালি বিজ্ঞানী বস্টনবাসী অলোকেশ দত্তরায়ও। বছর দুই আগের মতো এ বার বইমেলায় তাঁর নিজের কবিতার বই বেরোচ্ছে। গত বার আসা হয়নি অলোকেশের। এ বার তাই যত সম্ভব বইমেলার মাঠে থাকার বাড়তি তাগিদ। কবিবন্ধুদের সান্নিধ্যে গোটা বছরের অক্সিজেন উসুল করে নিতে তিনি মরিয়া।
সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে রবিবাসরীয় বইমেলায় এই নানা চরিত্র বুঝিয়ে দিল, ঠিকানা বদলালেও বইমেলা আছে বইমেলাতেই। বাংলাদেশের তরুণ চিত্রপরিচালক রাকিবুল হাসান ও সমাজকর্মী সঙ্গীতা ঘোষের এটাই প্রথম কলকাতা বইমেলা। ঢাকায় গোটা ফেব্রুয়ারি জুড়ে একুশের মেলার থেকে খানিক গোছানোই মনে হচ্ছে তাঁদের কলকাতার বইমেলাকে। এখানে এসে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের আড্ডা ছাড়াও যুক্তিবাদী আন্দোলনের বন্ধু ধীরাজ দণ্ডপাট, সুরেশ কুণ্ডুদের সঙ্গে আড্ডায় মজে গেলেন দু’জনে।
ভিড়ের মধ্যেই ছোট্টখাট্টো চেহারার শ্বেতাঙ্গ দম্পতির সঙ্গে আলাপ হল। স্পেনের কল্পবিজ্ঞান লেখক কার্লোস সিচো আর তাঁর স্ত্রী মার্টিনা। কলকাতার কল্পবিজ্ঞান-সংক্রান্ত একটি ওয়েবজিনের তরুণ সংগঠক বন্ধুদের গা ঘেঁষে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে হাঁটছেন দু’জনে।
এ দিন মেলায় ছোটদের একটি পত্রিকার অনুষ্ঠানে শিশুসাহিত্যে অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে সরস আড্ডায় মজলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়রা। উদ্যোক্তা বই বিক্রেতা-প্রকাশকদের গিল্ডের কর্তা সুধাংশু দে, রাজু বর্মণরা টেবিল পেতে বাচ্চাদের নিখরচায় বই বিলোনোয় মাতলেন। ক্লাস এইটের প্রীতি ঘোষ ইংরেজি বই ফুরিয়ে গিয়েছে শুনে মনমরা হল। বাগনানের মহম্মদ সাবির আর আমিনা বিবি তিন বছরের সোনার পছন্দের ছড়ার বই নিয়েই কোন স্টলে বেলুন বিলি হচ্ছে খোঁজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
কত লোক ঢুকছে ফি-ঘণ্টায় তার এসএমএস ঢুকছিল গিল্ড কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের মোবাইলে। লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ, দু’নম্বর গেটের একফালি সবুজে বসে পড়া জনতার পিকনিকের মেজাজ বইমেলার চেনা ছবিটাই ফিরিয়ে দিল।