ধস ঠেকাতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে লড়াই

নতুন করে বাড়ি ভাঙা ঠেকাতে ধস বন্ধ করতে মরিয়া মেট্রো-কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি আরও দু’জন আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ-বিশেষজ্ঞ এবং দু’জন ভূতত্ত্ববিদের শরণাপন্ন হয়েছেন।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৯
Share:

—ফাইল চিত্র।

চোখের সামনে হুড়মুড় করে একের পর এক বাড়ির ভেঙে পড়ার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে কলকাতার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

নতুন করে বাড়ি ভাঙা ঠেকাতে ধস বন্ধ করতে মরিয়া মেট্রো-কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি আরও দু’জন আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ-বিশেষজ্ঞ এবং দু’জন ভূতত্ত্ববিদের শরণাপন্ন হয়েছেন। বুধবার ওই বিশেষজ্ঞেরা বৌবাজারে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পল ভেরল ছাড়াও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ বিপর্যয় সামলানোর কাজে নেমেছেন সিঙ্গাপুর থেকে আসা জন ব্রিজ ক্রিস্টোফার এবং এন্ডিকট। মাটির চরিত্র বুঝে করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে তাঁদের সাহায্য করছেন মণীশ কুমার এবং পিচ্ছু মণি নামে দুই ভূতত্ত্ববিদ।

বিপদের ইঙ্গিত প্রকট হতে শনিবার সন্ধ্যায় সুড়ঙ্গ খননের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। খুব তাড়াতাড়ি ওই কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আপাতত বৌবাজারে সুড়ঙ্গের উপরের ধসপ্রবণ মাটিকে স্থিতাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চান মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। সেই জন্য ওই সুড়ঙ্গের একটি নির্দিষ্ট অংশে মাটির চাপের সমতুল জলের চাপ তৈরি করাই মেট্রো-কর্তৃপক্ষের প্রধান লক্ষ্য।

Advertisement

ওই কাজের জন্য টানেল বোরিং মেশিনের পিছনের দিকে একটি দ্বিস্তরীয় দেওয়াল তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম দেওয়াল তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শেষ। কয়েক মিটার দূরত্বে দ্বিতীয় দেওয়াল তৈরির কাজ এ দিন শুরু হয়েছে। টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) বা সুড়ঙ্গ খননের যন্ত্র আপাতত ওই বন্ধ অংশের মধ্যেই থাকবে। দেওয়াল তৈরির কাজ শেষ হলেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষ ওই আবদ্ধ অংশে তীব্র চাপে জল ভর্তি করার কাজ শুরু করবেন।

সুড়ঙ্গের আবদ্ধ অংশে জলের চাপ বাইরের মাটির চাপের সমান হলেই ভিতরের দিকে নরম মাটি এবং বালি-কাদার ঢুকে পড়ার প্রবণতা বন্ধ হবে। উপরের মাটি তখন ধীরে ধীরে স্থিতাবস্থায় ফিরে আসবে। পাশাপাশি উপরের মাটিকে কিছুটা শক্ত করতে কংক্রিটের মিশ্রণও ঢালা হচ্ছে।

মাটির উপরে বাড়িগুলির ভেঙে পড়া ঠেকাতে মরিয়া কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশেন বা কেএমআরসিএলের আধিকারিকেরা যত দ্রুত সম্ভব মাটির স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। সুড়ঙ্গের ওই এলাকার মধ্যে থাকা

বিপজ্জনক বাড়িগুলির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে করণীয় স্থির করতে যা খুবই জরুরি। স্থিতাবস্থা ফিরে আসার পরেই বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ জানার জন্য মেট্রো-কর্তৃপক্ষ আরও নিবিড় অনুসন্ধানের কাজ শুরু করতে পারবেন।

বৌবাজারে মেট্রোর সুড়ঙ্গে বিপর্যয়ের ফলে বহু কোটি টাকার টানেল বোরিং মেশিনটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওই মেশিনটিকে পরে উদ্ধার করে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কী ভাবে সুড়ঙ্গ খননের কাজ শুরু করা যাবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। সে-ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে শিয়ালদহের দিক থেকে ওই কাজ করা হতে পারে। তবে সেই কাজে নতুন যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। পুরনো যন্ত্র উদ্ধার করার জন্য বৌবাজারে সুড়ঙ্গের উপরের মাটি সরানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে মেট্রো-কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়ে এখনই ভাবছেন না।

ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে আজ, বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসতে পারেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। এ দিন বৌবাজারে ঘটনাস্থলে যান কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। ঘরছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে প্রশাসন এবং মেট্রো-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সব রকম সাহায্য পান, সেই জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন