হাসিমুখে: বিয়ের পরে মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায় ও অভীক গঙ্গোপাধ্যায়।
অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্কে বিয়ের আসর থেকে সটান রাস্তায় বর-কনে! আধখাওয়া বিরিয়ানি-মাংস ফেলে তাঁদের ঘিরে রয়েছেন আত্মীয়েরা। রাস্তার উল্টো দিকে কৌতূহলী মুখের ভিড়। এরই মধ্যে সব কিছু স্বাভাবিক করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দমকল ও সিইএসসি-র কর্মীরা। বৃহস্পতিবার রাতে এমনই দৃশ্য দেখা গেল দমদমের গোরাবাজারে।
পাত্র অভীক গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি বেলঘরিয়ার ফিডার রোডে। পাত্রী মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায় দমদমের নতুনবাজারের বাসিন্দা। মেয়ের বিয়ের জন্য গোরাবাজারে একটি অনুষ্ঠান-বাড়ি ভাড়া করেছিলেন কনের বাবা আশিস চট্টোপাধ্যায়। রাত সওয়া দশটা নাগাদ বিয়েবাড়ির একতলায় মিটার বক্সে আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখতে পান স্থানীয়দের একাংশ। বিপত্তির কথা জেনে নীচে নেমে আসেন মেয়ের বাবা। খবর যায় দমকল ও সিইএসসি-তে। তাঁরা এসে বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বাড়ির চার ও পাঁচতলায় বিয়ের আসরে অভ্যাগতরা তখনও টের পাননি, কী হয়েছে। দমকলের পরামর্শে মেয়ের বাবা সকলকে নামতে বললে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। কিছু ক্ষণের জন্য ফিরে আসে অতি সম্প্রতি গোরাবাজারেই আগুন লাগার স্মৃতি। এরই মধ্যে লিফ্টে কয়েক জন আটকে পড়লে আতঙ্কের মাত্রা বাড়ে।
আরও পড়ুন: খুব বেশি ফেল, পার্থদা দেখুন! আর্জি মুখ্যমন্ত্রীর
অন্ধকারে কনেকে মোবাইলের টর্চ জ্বেলে নামানো হয়। পিছনে টোপর হাতে নেমে আসেন বর। এর পরে এক এক করে আত্মীয়স্বজন এবং আমন্ত্রিতেরা। সব শেষে কেটারার ও রাঁধুনিদের অবতরণ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেউ তখন বলছেন, ‘‘সবে মাংসে কামড় দিয়েছিলাম।’’ কেউ কেউ আবার অগ্নি-সুরক্ষার বেহাল দশা নিয়ে সরব।
বাড়ির এক দিকের দাওয়ায় তখন বসে কনে। খানিক তফাতে বর। আনন্দের মধ্যে এমন আচমকা বিপত্তিতে চোখের জল থামতে চাইছিল না মৈত্রেয়ীর। হবু স্ত্রীর উদ্বেগ দেখে বিচলিত বরও। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘হুড়োহুড়ির মধ্যে নজর রেখেছিলাম ও নামতে পারল কি না।’’
অন্ধকারে বিয়েবাড়ি।
পুরোহিত মশাই তখন ব্যস্ত লগ্নের সময় রক্ষা করতে। রাত ১১টা ৫১ মিনিটে লগ্ন শেষ। আবার ভোরে লগ্ন। শেষে স্থানীয় এক বাসিন্দা তাঁর বাড়িতে বিয়ে সম্পন্ন করার প্রস্তাব দেন। এত কিছুর অবশ্য দরকার হয়নি। মিনিট দশেকের মধ্যেই ফিরে আসে বিদ্যুৎ সংযোগ। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন কনের বাবা।
শুক্রবার আশিসবাবু বলেন, ‘‘গোটা বাড়িতে একটা মাত্র সিঁড়ি। আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। ঘটনার সময়ে প্রায় দেড়শো অতিথি ছিলেন। সংখ্যাটা বেশি হলে কী হত, ভাবতেই পারছি না। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা উচিত ছিল বাড়ির মালিকের।’’ কনের বড় দিদি আত্রেয়ী রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের এই মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির দায় কার?’’
ওই অনুষ্ঠান-বাড়ির মালিককে শুক্রবার ডেকে পাঠিয়ে দমকলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দশ দিনের মধ্যে বাড়ির অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। না হলে মামলা করা হবে।
সব কিছু মিটে যাওয়ার পরে মৈত্রেয়ী শুধু বলেছেন, ‘‘এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে সব কিছু ভালয় ভালয় হয়ে গেল। জানেন, সিঁদুর দানের পরে এই প্রথম হাসলাম।’’
—নিজস্ব চিত্র।