নতুন চোখে ফিরে দেখা
জীবনে হঠাৎ একদিন এক বিকেল দেখা দেয়। যে বিকেল শহরে, জনবহুলতার মধ্যে একলা আবিষ্কার করা কোনও অসহায় বিকেল হতে পারে। আবার, এইরকম গ্রাম্য স্টেশন ও রেললাইনের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বিকেলও হতে পারে।’ জয় গোস্বামী তাঁর এই গদ্যে যে বিকেলের কথা তোলেন, বা নিজেকে আবিষ্কার করার কথা বলেন, তেমন কোনও আত্মভ্রমণের জন্যেই তো বেঁচে থাকা। সেই ভ্রমণের ভিতর দিয়েই তো মানুষের বন্ধুতা, সময় ও ইতিহাসের দূর দূর প্রান্ত ছুঁয়ে আসা যায়। ‘গোটা একটা জীবন হয়েই জীবন্ত হয়ে আছে আজ আমাদের কবিতা। তার সমস্ত লাবণ্য নিয়েই আছে, তার সমস্ত রৌদ্রছায়া নিয়ে।’ জয়ের এই লেখালেখির সঙ্গে আমাদের সেতুবন্ধনের ছবি করেছেন মলয় দাশগুপ্ত: ‘লেক অব ফ্লিটিং লাইটস’। মফস্সলের জয় সেই কবে বাঙালির মনের মানুষ হওয়া থেকে অন্যতম সেরা ভারতীয় কবির শিরোপাটি মাথার মুকুট করে ফেলেছেন... সাহিত্য অকাদেমি থেকে আনন্দ পুরস্কার, বহুবিধ সম্মান, তিরিশটির বেশি কাব্যগ্রন্থ, সংখ্যায় হাজার ছাপিয়ে যাওয়া কবিতা, বারোটি উপন্যাস, একাধিক গদ্যগ্রন্থ। সেই কৃতী মানুষটি যেন নিজেই নিজেকে বিশ্লেষণ করেছেন মলয়ের ৭৯ মিনিটের ছবিতে। ‘আত্মগত অনুভূতির পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে তাঁর আন্তঃসম্পর্কও বেরিয়ে এসেছে দীর্ঘ কথোপকথনে’, জানালেন মলয়— যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন, নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকে ছবি করা শুরু। জয়কে নিয়ে ছবিটি ফিল্মস ডিভিশনের, দেখানো হবে ৯ নভেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় ম্যাক্সমুলার ভবনে, গ্যেটে ইনস্টিটিউটের ডকু ফোরামের উদ্যোগে। বাঁ দিকে জয় গোস্বামী, ডান দিকে কবির সঙ্গে পরিচালক।
হিন্দু কলেজ
হিন্দু কলেজ এক আশ্চর্য মহীরুহ। ‘একটি বিরাট দেশের জন্মান্তরের সূচনা করেছে একটি শিক্ষায়তন, এমন আরেকটি দৃষ্টান্ত আমাদের জানা নেই।’ লিখছেন প্রসাদ সেনগুপ্ত, তাঁর হিন্দু কালেজ (সিগনেট প্রেস) বইয়ের সূচনায়। সত্যিই, মাত্র ৩৭ বছরের জীবনে এই প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা, পরিচালনা, শিক্ষাদান এবং ছাত্রতালিকায় উঠে এসেছে এমন সব নাম যাঁদের বাদ দিয়ে বাংলা তথা ভারতের উনিশ শতকীয় নবজাগরণ অসম্ভব ছিল। দুঃখের বিষয়, দুশো বছর ছুঁতে চলা এই প্রতিষ্ঠানের কোনও সামগ্রিক ইতিহাস এখনও লেখা হয়নি। তথ্য ছড়িয়ে আছে নানা জায়গায়, ক্রমশ দুর্লভ হয়ে উঠছে তা-ও। প্রসাদ সেনগুপ্ত যত্ন করে সে সব তথ্য অনুসন্ধান করে লিখেছেন সেই কর্মকাণ্ডের কথা। বিশেষ করে ১৮১৬-কে কেন প্রতিষ্ঠাবর্ষ ধরা উচিত ১৮১৭-র পরিবর্তে, সে কথা তিনি গুরুত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। আছে ডিরোজিয়ো-রিচার্ডসনের কথা, অন্য অধ্যাপক, ছাত্রদের কথা। সব মিলিয়ে উঠে আসে এক সময়চিত্র, যা আজ মনে করিয়ে দেওয়া খুব প্রয়োজন।
ঐতিহাসিক
তাঁর বঙ্গভাষা ও সাহিত্য গ্রন্থ প্রথম বিজ্ঞানসম্মত ভাবে লেখা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস। তাঁর রামায়ণী কথা-র দীর্ঘ ভূমিকা লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। আবার তাঁর হিস্ট্রি অব বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচার পড়ে যদুনাথ সরকার তাঁকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দেন। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সহযোগিতায় ১৯২০ সালে বাংলায় এম এ পঠনপাঠনের সূচনা করেন। সেখানে বাংলায় তিনিই প্রথম রিডার, পরে রামতনু লাহিড়ি রিসার্চ ফেলো। ৩ নভেম্বর ঢাকার গ্রামে দীনেশচন্দ্র সেনের জন্ম (১৮৬৬-১৯৩৯)। তাঁর জন্মসার্ধশতবর্ষ পূর্তিতে ৩ নভেম্বর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তনীরা এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ তাঁর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করবেন সাড়ে ৩টেয়, বাংলা বিভাগে। ছবিটি মন্মথনাথ ঘোষের হেমচন্দ্র বই থেকে।
নাটক থেকে বই
পাইকপাড়া ইন্দ্ররঙ্গ-র চতুর্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে ব্রাত্য বসুর পরিচালনায় উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নাটক ‘অদ্য শেষ রজনী’ নিয়ে কৃতি থেকে অরিন্দম শীলের হাতে একটি বই প্রকাশিত হবে ৫ নভেম্বর, সন্ধে ৬টায় অ্যাকাডেমিতে। বইটিতে লিখেছেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য, অমর মিত্র, রবিশংকর বল, মৈনাক বিশ্বাস, বিনতা রায়চৌধুরী, রাজা চন্দ, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, মানস চক্রবর্তী, হিরণ মিত্র, বাংলাদেশের নাট্যপরিচালক অনন্ত হিরা সহ পঁয়ত্রিশ জন। রয়েছে ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীর নেওয়া পরিচালক ব্রাত্য বসুর সাক্ষাৎকার। ওই দিনেই অ্যাকাডেমিতে নাটকটির দু’টি অভিনয়ও আছে। দুপুর ৩টে ও সন্ধে সাড়ে ৬টায়।
সেনোটাফ
স্মৃতিসৌধ বা সেনোটাফ! যা বারে বারে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, তার উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও। এই থিমকে কেন্দ্র করে, ‘নিউ মিডিয়া ওয়র্কস’-এর মাধ্যমে এ বার পাঁচ তরুণ শিল্পী বিড়লা অ্যাকাডেমিতে এক অভিনব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে (১-৬ নভেম্বর, ৩-৮)। দেখা যাবে বুক আর্ট, ডিজিটাল আর্ট, ভিডিয়ো ইনস্টলেশন, জুয়েলারি স্কাল্পটিং, অবজেক্ট ইনস্টলেশন এবং পারফরমেন্স ইনস্টলেশন ইত্যাদি। প্রত্যেকটি কাজই প্রচলিত মাধ্যমের বাইরে। ২ নভেম্বর সন্ধে ৬টায় আড্ডা সেশনে থাকবেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, ৩ নভেম্বর সঞ্চয়ন ঘোষ এবং ৫ নভেম্বর শমীন্দ্রনাথ মজুমদার।
আকস্মিক
হঠাৎই চলে গেলেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় (জন্ম ১৯৪২)। ষাটের দশকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি। সিউড়ি আর কলকাতা, দুই প্রিয় শহর ছিল তাঁর রক্তে। বেশ কিছুকাল শিক্ষকতা করার পর যোগ দেন আনন্দবাজার পত্রিকায়। পরে ‘আনন্দমেলা’র সম্পাদক, অবসর সেখান থেকেই। কবিতা রচনার পাশাপাশি ছোটগল্প, উপন্যাস, কিশোর উপন্যাস, প্রবন্ধ— সাহিত্যের সব শাখাতেই ছিল অনায়াস যাতায়াত। তাঁর আপেল কিংবা ধ্বংসস্তূপ কাব্যগ্রন্থ এখনও বাংলা কবিতাপাঠকের স্মৃতিধার্য। ছিলেন লোকশিল্পপ্রেমী, তাঁর বীরভূমের যমপট ও পটুয়া এ বিষয়ে অন্যতম পথিকৃৎ কাজ। তেমনই উল্লেখযোগ্য পুরনো কলকাতার ঘরবাড়ি ও চৈতন্যচর্চার পাঁচশো বছর। বড় ছেলে চলচ্চিত্রনির্মাতা বাপ্পাদিত্য অকালে চলে গিয়েছেন কিছুদিন আগেই, এ বার বিদায় নিলেন তিনিও।
স্মরণ
‘ছেলেবেলায় শুধু আমাদের বাড়িতেই দেখিনি, বাবার কাছেও শুনেছি, তখন বহু বাঙালির বইয়ের তাকেই চার খণ্ডে জাঁ ক্রিস্তফ রাখা থাকত রম্যাঁ রলাঁ-র (১৮৬৬-১৯৪৪)। যে ভারতবর্ষকে আন্তরিক ভাবে ভালবেসেছিলেন রলাঁ, হয়তো বুঝেও ছিলেন অনেকের চেয়ে বেশি, সে দেশ কিন্তু আশ্চর্য রকম নীরব তাঁর সম্পর্কে। কেউ কি আজ আর তাঁর কথা বলে?’ প্রশ্ন চিন্ময় গুহের। সত্যিই তো, এই নির্ভীক আপসহীন মানবতাবাদী ফরাসি মনীষী গাঁধীজি, শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দের জীবনীকার। রবীন্দ্রনাথের কাছে তিনি পাশ্চাত্যের অতি প্রিয় মানুষ। তাঁর সার্ধশতবর্ষ পূর্তিতে তাঁকে নিয়ে বলবেন ফরাসিবিদ চিন্ময় গুহ: ‘রম্যাঁ রলাঁ অ্যান্ড ইন্ডিয়া: আ ফরগটন ডায়লগ’। ৫ নভেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে। যৌথ উদ্যোগে আলিয়াঁস ফ্রাঁসেজ।
ছোট ছবির উৎসব
পরিযায়ী পাখির জন্যে যেমন অপেক্ষায় থাকে শীতের কলকাতা, তেমন অপেক্ষাতে থাকে কল্পনির্ঝর উৎসবের জন্যেও। ছোট ছবির এমন উৎসব এ-বঙ্গে তো বটেই, এ দেশেই বিরল। অ্যানিমেশন সহ সারা দুনিয়া থেকে বেছে আনা বিচিত্র স্বাদের স্বল্পদৈর্ঘ্যের অজস্র কাহিনি-ছবি। ২৯টি দেশের মোট ১১০টি ছবি, তাতে ২ মিনিটের ছবির পাশাপাশি ৩০ মিনিটের ছবিও আছে। দেখতে-দেখতে বুঁদ হয়ে থাকতে হয় জীবনের কত রকম ওঠাপড়ায়, অভিজ্ঞতা কখনও দেশি, কখনও বা ভিনদেশি। ‘বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফেস্টিভ্যাল থেকে আনা হয় ছবিগুলি, ফিল্ম আর্টফর্মটার প্রতি আমরা যাতে আরও আসক্ত হয়ে উঠি। ফ্রান্সের ২৬টি ছবির গুচ্ছ এ বারের ফোকাস।’ জানালেন উৎসব অধিকর্তা রাজু রামন। সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার। ১-৫ নভেম্বর ম্যাক্সমুলার ভবনে ১৪তম কল্পনির্ঝর ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিকশন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, উদ্যোগে কল্পনির্ঝর ফাউন্ডেশনের সঙ্গে গ্যেটে ইনস্টিটিউট। উদ্বোধনে উপস্থিতদের মধ্যে থাকবেন সব্যসাচী চক্রবর্তী।
বিষণ্ণ
কুমোরটুলি নিঝুম হয়ে এল, ঠিক যেমন নিঝুম হয়ে এল পটুয়াপাড়া। নিঝুম হয়ে এল আরও কত দেবীমূর্তি বানানর স্টুডিয়ো। এ বছর বর্ষায় আক্রান্ত ছিল শারদোৎসব থেকে দীপাবলি। তবে এখন আর ঘূর্ণিঝড় এলেও কিছু এসে যায় না, বলছিলেন রাখাল পাল, ‘আমাদের সম্বৎসরের রোজগার হয়ে গিয়েছে। এর পরে সেই সরস্বতী। এই সময়টা মন খারাপ লাগে। সমস্ত রকমের ব্যস্ততাই শেষ। কোনও ঘরেই কোনও দৌড়োদৌড়ি নেই।’ সত্যিই, দুপুর যেন নেতিয়ে রয়েছে ট্রাম লাইন থেকে গঙ্গার পাড়। আর নদীর বুকে সেই সব নৌকোর কী হল? ‘আমাদের আর কী বাবু, পুজোর জন্য সেই ফুলেশ্বর-উলুবেড়িয়া থেকে কত মাটি এনে দিয়েছি, এখন আবার অন্য মাল টানব, খড়-ইট এই সব। তবে পুজোর কাজের মজাই আলাদা।’ হারান মণ্ডল, পরান সর্দারদের এমনই বক্তব্য। ‘জানেন তো, এই আবার শুরু হয়ে যাবে দুপুরে মদ খাওয়া। এত দিন ব্যস্ততা ছিল, এখন ফাঁকা, তার উপর হাতে কাঁচা পয়সা। সময়টা খুব খারাপ।’ কোনও এক শিল্পী-পত্নীর গলায় বিষণ্ণতা।
বঙ্গপ্রেমী
তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ষোলো বছর অতিথি অধ্যাপক ছিলেন। এই সময়কালে তিনি ‘বোদলেয়ার ও বাংলা সাহিত্য’ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করিয়েছেন। ফাদার ম্যাথু শিলিংস-এর জন্ম বেলজিয়ামে (১৯৩৩-২০১৬)। কানাডার নাগরিক। ভারতে এসেছিলেন আফ্রিকা থেকে। মাতৃভাষা ছিল ফরাসি, তিনি ষোলো বছর সম্পাদনা করেছেন বাংলা ষাণ্মাসিক পত্রিকা ‘মোহনা সাময়িকী’। তিনি ইংরেজি-ফরাসি খ্রিস্টীয় সাহিত্যকে বাংলায় অনুবাদ করে বাংলা সাহিত্যজগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন। দীর্ঘ পঁয়ষট্টি বছর জেসুইট সোসাইটির মিশনারি ছিলেন। অভিষিক্ত পুরোহিত হিসেবে খ্রিস্টীয় যাজকত্বও করেছেন। সম্প্রতি বঙ্গভাষাপ্রেমী মানুষটি প্রয়াত হলেন। বয়স হয়েছিল চুরাশি। তাঁর পঁচাশিতম জন্মদিন উপলক্ষে (৪ জুন ২০১৭) ‘মোহনা’র গবেষণামূলক নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশে উদ্যোগী হয়েছেন সুরঞ্জন মিদ্দে।
এ বার নাটকে
নাটকে নতুন, কেমন করবে বা ওর অভিনয় কেমন লাগবে, সে সব সমঝদার দর্শকের ওপরেই ছেড়ে দেওয়া ভাল। তবে এখনও পর্যন্ত ছবিতে যেটুকু কাজ করেছে, এগারো, দত্ত ভার্সেস দত্ত, ক্ষত, বেশ ভালই লেগেছে ওর অভিনয়।’ তরুণ রণদীপ বসু সম্পর্কে বলছিলেন তাঁর মাতামহ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ‘ছেলেবেলা থেকে তো দেখছি ওকে, একটা সুন্দর ব্যক্তিত্ব চেহারার মধ্যে ফোটে। পর্যবেক্ষণ শক্তিও চমৎকার, যে কোনও চরিত্র চট করে তুলে নেওয়ার অনায়াস ক্ষমতা আছে, স্বাভাবিক মাপে অভিনয় করে।’ সৌমিত্ররই বঙ্গানুবাদে ইবসেন-এর ‘গোস্টস’-এ (জেমস ম্যাকফার্লেন কৃত ইংরেজি অনুবাদ অবলম্বনে) অসোয়াল্ড আলভিং-এর চরিত্রে অভিনয় করছেন রণদীপ। মা পৌলমী চট্টোপাধ্যায় এ-নাটকেও তাঁর মা হেলেন আলভিং, পুত্র সম্পর্কে জানালেন ‘থিয়েটারে নবিশ হলেও শেখার আগ্রহ আছে খুব, পরিশ্রমী। ওর প্যাশন কিন্তু মিউজিক-এ, গিটার বাজায়, গণেশ টকিজ নামে যে ব্যান্ডটা চালায় সেটা রীতিমতো নামকরা। তবে তার পাশাপাশি অভিনয়টাও ভালবাসে।’ রণদীপ-পৌলমীর সঙ্গে সৌমিত্রও অভিনয় করছেন নাটকটিতে। ‘তিন প্রজন্মকে একসঙ্গে অভিনয় করানোর আকাঙ্ক্ষা থেকেই এ কাজে হাত দেওয়া।’ বলছিলেন বিলু দত্ত, মুখোমুখি-র কর্ণধার। তাঁর প্রযোজনাতেই নাটকটি ‘বিদেহী’ নামে প্রথম মঞ্চস্থ হবে অ্যাকাডেমি’তে, ২ নভেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায়। সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, মোনালিসা পালও আছেন অভিনয়ে। মঞ্চসজ্জায় সঞ্চয়ন ঘোষ, আলো সুদীপ সান্যালের, গৌতম ঘোষের সঙ্গীত। আমন্ত্রিত নির্দেশক কৌশিক সেন।
প্রয়াণবার্ষিকী
তিনি শুধুমাত্র বিশিষ্ট আইনজীবীই নন, সংসদীয় গণতন্ত্রের উপর ছিল তাঁর অগাধ আস্থা। সংসদীয় গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করতে আমৃত্যু সক্রিয় থেকেছেন হাসিম আবদুল হালিম। ১৯৩৫ সালে কলকাতায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের স্নাতক। ষাটের দশকের গোড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে জীবন শুরু করলেও শহরের বস্তি উন্নয়ন, দারিদ্র দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের আইনি সহায়তা প্রভৃতি সামাজিক দায়িত্বগুলো সচেতন ভাবে আনন্দের সঙ্গে পালন করতেন। ১৯৭৭-এ প্রথম বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় আইনমন্ত্রী হন। ১৯৮২-২০১১ একটানা ঊনত্রিশ বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলেছেন। এই নজির শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও বিরল। ২০০৫-এ কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বহু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও আলোচনার জের বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্বে সামলেছেন। এটাই ছিল তাঁর ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য। ২০১৫-র ২ নভেম্বর আশি বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২ নভেম্বর বিকেল ৫টায় কলামন্দিরে ইরান সোসাইটি আয়োজন করেছে তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতা। ‘ফেডেরালিজম অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি ইন ইন্ডিয়া’ বিষয়ে বলবেন সীতারাম ইয়েচুরি। গোপালকৃষ্ণ গাঁধী, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, আলতামাস কবীর, দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য প্রমুখ চব্বিশ জনের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হবে ইরান সোসাইটির মুখপত্র ‘ইন্দো-ইরানিকা’-র বিশেষ হাসিম আবদুল হালিম স্মারক সংখ্যা।